শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


কেমন চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি? যা বলছেন তাবলিগের মুরব্বিরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

বহু প্রতীক্ষার পর আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর ৪দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব।

গত ২০২০ সালের মতো এবারও প্রথম পর্ব পরিচালনা করবে আলমী শুরার অনুসারী মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক তুরাগ তীরে পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। ইজতেমা উপলক্ষে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন মুসল্লিরা। সারাদিন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা ময়দান প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ময়দানে বাঁশ টানানো, মাটিকাটা, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার, খুটি স্থাপন, সামিয়ানা তৈরি, চট বাধাইসহ বিভিন্ন কাজ করছেন তারা।

ঢাকার মতিঝিল থেকে ইজতেমার মাঠে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে এসেছেন তাবলিগের সাথী আবু বকর। তিনি বলেন, আমরা এলাকা থেকে জামাত বন্দি হয়ে স্বেচ্চায় কাজ করছি, আমাদের সঙ্গে প্রায় ৪০ জনের মত সাথি ভাই এসেছেন।

কথা হয় রাজধানীর বাড্ডা থেকে আগত আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সপ্তাহব্যাপী কাজের মাঝে একদিন ছুটি পাই। সামনে ইজতেমা তাই আমাদের মসজিদ থেকে আমরা ৫৫ জন মুসল্লি এসেছি ইজতেমার কাজ করতে। কেউ মাটি কাটছি, বাঁশ গাড়ছি, উঁচু-নিচু জায়গা সমান করছি, কেউবা আবার তাঁবু টানানোর ব্যবস্থা করছি।

পুরান ঢাকা থেকে আগত মোশারফ মিয়া বলেন, ব্যস্ততার মধ্যেই একটু সুযোগ পেয়ে আল্লাহকে খুশি করার জন্য ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে এসেছি।

ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতের জন্য এবার প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছে আলমী শুরার অনুসারী মুসল্লিরা। বরকতময় এ কাজের মাধ্যমে কীভাবে প্রস্তুত করছেন তারা ইজতেমার ময়দানকে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমী শুরার অনুসারী মুসল্লিদের দায়িত্বশীলগণ জানান, দুই বছর পর বহুল প্রত্যাশীত ইজতেমার খবর শুনে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা অনেক আনন্দিত। কীভাবে মাঠ প্রস্তুত করা যায় তা নিয়ে প্রথমে আমাদের তিন চিল্লার সাথিদের নিয়ে টিনশেডে স্বল্প পরিসরে পরামর্শ করা হয়। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সার্বিক কাজের। বিদেশি মেহমানদের আগমন ও তাদের মেহমানদারীর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তারা জানায়, ১০ জন সূরা সদস্যের তত্বাবধানে বিভিন্ন জামাতে বিভক্ত হয়ে মাঠ প্রস্তুতের কাজ চলছে। ভাগে ভাগে প্রায় ২০ হাজার তাবলিগ জামাতের সাথি স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছেন।

তাদের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, ইজতেমায় যেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি তৈরি করা যায় সেজন্য প্রতি ইজতেমার ৪০ দিন পূর্বে জোড় হয়ে থাকে। এবছরও আমাদের জোড় সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন জামাত খুরুজে বের হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে ইজতেমা থেকে এক চিল্লা, তিন চিল্লা ও সালের জন্য ব্যাপক জামাত খুরুজ করা।

মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিদের দায়িত্বশীলগণ বলেন, আমরা চেয়েছিলাম মাঠের কাজে অংশ নেয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন থেকে আমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে ওলামায়ে হযরতগণ যেহেতু প্রথম পর্বে ইজতেমা করবেন তাই তারাই মাঠ প্রস্তুত করবেন। তাছাড়া আমাদেরকে বলা হয়েছে আগামী বছর আমাদেরকে প্রথম পর্বে দেয়া হবে। তখন মাঠ প্রস্তুতের দায়িত্বও আমাদের থাকবে।

তারা বলেন, মাঠের কাজের দায়িত্ব না পেলেও আসন্ন ইজতেমাকে সফল করার জন্য আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। তাবলিগের মূল মাকসাদ হলো খুরুজ। আমরা জেলায় জেলায় ইজতেমার মাধ্যমে সে কাজটি করছি। আশা করছি ইজতেমার মাঠ থেকে কয়েকশ’ জামাত খুরুজ হবে ইনশাআল্লাহ।

এদিকে ইজতেমার প্রস্তুতি বিষয়ে র‌্যাব-১ জানায়, গতবারের মতো এবারও মুসল্লিদের নিরাপত্তায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর জিএমপি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সভা হয়েছে। কমিটি গঠন হয়েছে, দায়িত্ব বণ্টণ হয়েছে। আমরা বিশ্ব ইজতেমার সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছি।

অপরদিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলম বলেন, আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের দিকনির্দেশনায় ময়দানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ চলছে।

প্রসঙ্গত, প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে হযরতজি মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহ’র হাত ধরে প্রচলিত দাওয়াত তাবলিগের সঙ্গে পরিচয় মুসলমানদের। সময়ের ব্যবধানে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পায় তাবলিগ। বাড়তে থাকে তাবলিগের সাথী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সংখ্যা। তাবলিগের ছোট ছোট জমায়েতগুলো রূপ নেয় ইজতেমায়। সেখান থেকে বিশ্ব ইজতেমা। ভাগ্যক্রমে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।

টঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়ে বিশ্বের প্রায় ১০২টি দেশের নাগরিকদের নিয়ে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ৫৫টি বিশ্ব ইজতেমা। ৫৬তম ইজতেমা আটকে যায় প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়। তবে এখনো স্বাভাবিক হয়নি বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বাংলাদেশের তাবলিগের মুরব্বিদের তৎপরতা ও উদ্যোগ।

মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বেশকিছু বক্তব্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী তাবলিগের মুরব্বিদের মাঝে মতের অমিল তৈরি হয়। দৃশ্যমান হয় তাবলিগের দুটি ভিন্নগ্রুপ। দু’গ্রুপ নিজেদের মতো করে উদ্যোগ গ্রহণ করে ৫৫তম ইজতেমাও আয়োজন করে। দু’পর্বের ইজতেমায় আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের মতো করে কার্যক্রম পরিচালনা করে উভয়পক্ষ।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ