শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সুদের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘করজে হাসানা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| আব্দুল্লাহ আফফান ||

ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের কলঙ্কময় অধ্যায় সুদ। সুদ ব্যবসা করে ধনী হয় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। গরিব হয় নিঃস্ব। এর অভিশাপে ধংস হয়েছে বহু পরিবার। ইসলাম সুদের বদলে করজে হাসানাকে প্রাধান্য দিয়েছে। উৎসাহ দিয়েছে।

ব্যবসার জন্য এক লক্ষটাকা সুদে ঋণ নেয় সুনামগঞ্জের এক যুবক। ৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার পরেও সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ রয়ে যায়। মানসিক চাপে ওই ব্যক্তি ফেসবুকে সুইসাইড নোট পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটা গত বৃহস্পতিবারের।

সুদের অভিশাপ থেকে সমাজ কীভাবে মুক্ত হবে এ বিষয়ে কথা বলেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ার শিক্ষক ফাহিম সিদ্দিকী।

তিনি বলেছেন, মহাজনী সুদ ও সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সমাজের অভিশাপ। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এ- কারবার চালানো হয়। এর অভিশাপে বহু পরিবার ধংস হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলো করজে হাসানা থেকে শক্তি অর্জন করে অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে পারে। সেই সঙ্গে যারা অসহায়ত্বের শিকার হয়ে সুদে ঋণগ্রহণ করে তাদেরকে সুদ নামক ভয়ানক অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনের ৬টি আয়াতে মোট ১২টি স্থানে করজে হাসানার কথা উল্লেখিত হয়েছে। ইসলামে করজে হাসানা’র প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। করজে হাসানা হচ্ছে- সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা হবে, কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্ত অর্থ নিতে পারবে না। আর করজে হাসানা দাতার জন্য তো অগণিত সওয়াবের ওয়াদা আছেই।

‘করজে হাসানা হতে পারে দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যাপকভিত্তিক শক্তিশালী মডেল এবং সুদি ঋণের উত্তম বিকল্প। তাছাড়া করজে হাসান বা সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র লোকদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। যারা অত্যন্ত অসহায়ত্বের শিকার তাদেরকে করজে হাসানা প্রদান করে ছোটখাটো কোনো ব্যবসা ধরিয়ে দিয়ে দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনা যায়। যেমন পোশাক তৈরি, এমব্রয়ডারি, খাদ্য তৈরি, মোটরসাইকেল মেকানিক, ছাগল পালন, হাঁস-মুরগির খামার, কাঠের সরঞ্জাম তৈরি ইত্যাদি।’

তিনি আরও বলেছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে করজে হাসানা চালু থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করজে হাসানা প্রদানের সংস্কৃতি এখনও দেশে চালু হয়নি। বিভিন্ন ইসলামি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ট্রাস্ট বিনা সুদে ছোট ও মাঝারি আকারের ঋণ প্রদান করে অসহায় পরিবারগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করার পথ দেখাতে পারে। আবার বিশেষ প্রয়োজন এবং সময়মত পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়াও ঋণগ্রহণ জায়েয নয়। আর অপচয় ও অন্যায় কাজে ঋণ নেওয়া এবং ঋণকে জীবনের সাধারণ নিয়মে পরিণত করার তো প্রশ্নই আসে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইতেন। আমাদের সমাজে এ করজে হাসানা প্রচলিত নয়। অনেকে বিষয়টি জানে না; নেই স্পষ্ট ধারনা। ঋণ নেওয়ার সময়ই খারাপ নিয়ত রাখা বা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়া খুবই অন্যায়। এতে শুধু আল্লাহর সাহায্যই হাতছাড়া হয় না, জানমালের বরকতও নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে, যে মানুষের সম্পদ পরিশোধের নিয়তে ঋণ নেয়, আল্লাহ তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেন। আর যে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়- ঋণ নেয়ার পর তা সময় মতো পরিশোধ করে না। ঋণ পরিশোধ না করার প্রবনতাও অনেকের মাঝে দেখা যায়। সে সময় ঋণ দাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দাতা অন্য কাউকে করজে হাসানা দিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো অবশ্যই, চেষ্টা করা, তার আগেই পরিশোধ করার। টালবাহানা, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ওয়াদার তো প্রশ্নই আসে না। এধরনের আচরণ তো যে কারো সাথেই না-জায়েয। আর যে বিপদে ঋণ দিয়ে অনুগ্রহ করেছে তার সাথে তো আরো ভয়াবহ।

‘ঋণদাতা এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে- ঋণ দেয়ার সময় মূল্যবান কিছু জমা রাখতে পারে। সেটি ব্যবহার বা তার থেকে লাভবান হবে না। ঋণ পরিশোধ করার সময় সেটি মালিককে ফেরত দেয়া। ঋণ গ্রহীতারও নিদির্ষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধের কথা ভাবতে হবে। কোন কারণে সময়মতো ঋণ দিতে না পারলে, সময় বাড়িয়ে নিবে। তাহলে আশা করা যায়- ঋণদাতারও ক্ষতি হবে না। এবং সমাজ থেকে সুদি অর্থ ব্যবস্থাও দূর হবে।’

করজে হাসানাও ফেরত দিতে হয়: মুহিউদ্দিন ফারুকী

গবেষক আলেম ও আদ-দাওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহিউদ্দিন ফারুকী বলেছেন, আমাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সামাজিক জীবনে আমরা কখনো কখনো অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। নিজের কাছে অর্থ না থাকলে অন্যের কাছে দারস্থ হই। পরিচিত কারো কাছ থেকে আমরা ঋণ নিতে চেষ্টা করি। কখনো কখনো প্রিয়জন বা কাছের মানুষের কাছ থেকে করজে হাসানা বলে ঋণ গ্রহন করি। কিন্তু ঋণ গ্রহন করার পর সেটাকে করজে হাসানা মনে করে সেটা আর ফেরত দেয়ার চেষ্টা করি না। একেবারেই ভুলে যাই আমাকে এটা পরিশোধ করতে হবে বা করজে হাসানাও ফেরত দিতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, যিনি ঋণ দিয়েছেন তিনি যদি স্পষ্ট বলে থাকেন আপনি না দিলেও চলবে। সেটা তো ভিন্ন বিষয়। সেটা তার জন্য হাদিয়া হিসেবে বিবেচিত হলো। এটা যদি ঋণ হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে এবং যিনি দিয়েছেন তিনি ঋণ হিসেবে দিয়েছে— যদি এমনটি হয়ে থাকে। তাহলে এই করজে হাসানাও ফেরত দিতে হবে। যখন ফেরত দেয়ার কথা বলে ঋণ নেয়া হয়েছিল। সে সময়ের মধ্যে ঋণ ফেরত দেয়ার চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে কোন ধরনের শিথিলতা কাম্য নয়। ইসলাম এ ধরনের শিথিলতা পছন্দ করে না। এ অঙ্গিকার পূরণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যথা সময়ে করজে হাসানা আদায় করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ