শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


বিদ্যুত সংকট নিরসন: ইসলামী অর্থনীতি কী বলে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। আবু সাঈদ ।।

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপাকে বাংলাদেশ। সময় যত সামনে গড়াচ্ছে, সংকট তত ঘনীভূত হচ্ছে। জনজীবনে এ যেন এক কঠিন ছন্দপতন। সমস্যা নিরসনে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সবাইকে কৃচ্ছতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় আমদানী। জ্বালানীর ব্যাপারেও দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। তবুও যেন সমস্যার সুরাহা হয় না। অর্থনৈতিক নানা মহল থেকে বিভিন্ন আলোচনা সামনে এসেছে। সরকারের নানা করণীয় তারা নির্দেশ করেছে। সরকার সেগুলো আমলেও নিচ্ছে। সর্বজনীন ও সার্বজনীন অর্থনীতির অনুপম মডেল হিসেবে ইসলামী অর্থনীতি এ সমস্যার কী সমাধান নির্দেশ করে?

এ বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতির পথিকৃত প্রতিষ্ঠান আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর প্রধান ও বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাওফির গভর্ণেন্স এ্যান্ড ইথিকস বোর্ডের ওয়ার্কিং গ্রুপ মেম্বার বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুত সংকট কাটানোর জন্য প্রথমে আমাদের সংকটের উৎস নির্ণয় করতে হবে। তবে সংকট কাটিয়ে উঠা আমাদের জন্য সহজ হবে।’

বিদ্যুত সংকটের উৎস নির্দেশ করতে গিয়ে বিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের পাওয়ার জেনারেট করার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। কিন্তু সে এবিলিটিকে কনজামশন করার সক্ষমতা খুবই কম। জাতীয় সম্পদ- কয়লা ও গ্যাসকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। তাছাড়া সরকার কর্তৃক কয়েকটি পাওয়ার কোম্পানীর সাথে কৃত ক্যাপাসিটি চার্জ কন্ট্রাক্টও এর জন্য দায়ী।’

উক্ত সমস্যাবলীর সমাধানে ইসলামী অর্থনীতির পরামর্শ ব্যাখ্যা করে আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বলেন, ‘এ সংকট নিরসনে ইসলামী ফাইন্যান্সের মূল নির্দেশনা হলো, আমাদের ন্যাশনাল সোর্সকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের যে নীড তৈরি করেন, প্রকৃতিতে তা পূরণের জন্য এ্যাবিলিটি দিয়ে দেন। এজন্য সূরা জুমআয় আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমাদের যখন সালাত শেষ হবে, যমীনে ছড়িয়ে পড়ো। এবং যমীনে যে এ্যাবিলিটি আছে, তা এচিভ করো। অতপর কনজুম করো। সেজন্য সংকট নিরসনে আমাদেরকে ন্যাশনাল সোর্সের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। এবং জাতীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।’

বিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ ন্যাশনাল সোর্স চিহ্নিত করে বলেন, ‘আমাদের দেশে আছে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের খনি। গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতি ছয়টি সন্ধানে একটি গ্যাস কূপ পাওয়া যায়। আমাদের আছে বিপুল পরিমাণ কয়লার খনি। আমরা যদি আল্লাহ প্রদত্ত এসব ন্যাশনাল সোর্সকে যথাযথভাবে কাজে লাগাই, তবে অল্প সময়ে আমরা জ্বালানী সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

এবিলিটিকে কনজুম করতে না পারার সমস্যা নিরসনে বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাওফির গভর্ণেন্স এ্যান্ড ইথিকস বোর্ডের এ ওয়ার্কিং গ্রুপ মেম্বার বলেন, ‘আমরা যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছি না। সেজন্য আমাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একটি বাতির সামান্য বিদ্যুত সরবরাহের জন্য শত শত শ্রমিকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়! এতো কষ্টের বিদ্যুত যদি প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করা হয়, তবে শ্রমিকদের শ্রমকে কী পরিমাণ অবমূল্যায়ন করা হয়! যারা এ কাজে শ্রম দিচ্ছে, তারা আমাদেরই ভাই। আমাদেরই স্বজন। সেজন্য তাদের শ্রমকে আমাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। এবং বিদ্যুত ব্যবহারে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে।’

ক্যাপাসিটি কন্ট্রাক্টের ব্যাপারে আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর প্রধান বলেন, ‘তৃতীয় যে সমস্যা, তা নিরসনের জন্য সরকারকে পাওয়ার কোম্পানীগুলোর সাথে কৃত ক্যাপাসিটি চার্জ কন্ট্রাক্ট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা এই কন্ট্রাক্টের সাথে জড়িত, তাদেরও উচিৎ এ কন্ট্রাক্ট থেকে বের হয়ে আসা।’

ক্যাপাসিটি কন্ট্রাক্ট চার্জ বিশ্লেষণ করে মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার উপস্থিত সংকট নিরসনের জন্য কয়েকটি পাওয়ার কোম্পানীর সাথে ক্যাপাসিটি চার্জ কন্ট্রাক্টে চুক্তিবদ্ধ হয়। তাতে স্থির হয়, সরকারের জন্য তারা পাওয়ার জেনারেট করবে। সে পাওয়ার কনজুম হোক বা না হোক, সরকার তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করবে। বিদ্যুত সংকটের পেছনে মৌলিকভাবে এই তিনটি সমস্যাই কাজ করছে বেশি।’

ক্যাপাসিটি কন্ট্রাক্ট চার্জে ইলেক্ট্রেসি ছাড়াও পেমেন্ট গ্রহণকে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ অধিগ্রহণ সাব্যস্ত করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আল্লাহ তাআলা সূরা নিসাতে বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে- কোন ধরনের বিনিময় ছাড়া অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করো না। ক্যাপাসিটি কন্ট্রাক্টে ইলেক্ট্রিসি ছাড়াও সরকারকে রাষ্ট্রের সম্পদ থেকে চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তারা যে পরিমাণ পাওয়ার উৎপাদন করে, সবটুকু সরকারের দরকার নেই। তাদের পাওয়ার গ্রহণ করা না হলে চার্জ আদায় করা ইনসাফ পরিপন্থি ব্যাপার। এজন্য সরকার ও ক্যাপাসিটি কন্ট্রাক্টের সাথে জড়িত সবাইকে এই অন্যায্য কন্ট্রাক্ট রহিতকরণে আন্তরিক ও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। পারস্পরিক নীতি হওয়া উচিৎ- নো ইলেক্ট্রেসি নো পেমেন্ট।’

সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের উচিৎ আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে যাওয়া। তাওবা করা। আমরা প্রত্যেকেই যেন মনে করি, আমার গুনাহের কারণেই আজ এই জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থান থেকে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টিমূলক কাজ থেকে বের হয়ে আসি। এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাই। এ সংকট নিরসনে আল্লাহ তাআলার সহযোগিতা ছাড়া বাঁচার কোন উপায় নেই।’

ইসলামী অর্থনীতি সব সময় গোড়ায় হাত দেয়। এবং মূল থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। আমরা যদি ইসলামী অর্থনীতিকে আমলে নিয়ে আমাদের সমস্যা নিরসনের চিন্তা করি, তবে আশা করা, সংকট সমাধানে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো। দেশ বেঁচে যাক। সুখে থাকুক জনগণ।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ