শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


কুরবানি সংক্রান্ত জরুরি পাঁচটি মাসআলা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী

১. কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

উত্তরঃ- Adult বা প্রাপ্তবয়স্ক,Complete healthy brain বা সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যাক্তি, যে ১০ই জিলহজ্ব সুবহে সাদেক থেকে ১২ই জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে(৭.৫) সড়েসাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ।

স্বর্ণ বা রুপার কোন একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয়, তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে Need extra বা প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার Ornaments বা অলংকার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয়না এবং প্রয়োজন-অতিরিক্ত আসবাবপত্র- এসবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব যোগ্য।

আর প্রয়োজনীয় জিনিস বলতে বোঝায় বসবাসের জায়গা, বাড়ি, এক বৎসরের খোরাকীর ধান ও চাল, শস্য, প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র, বাসার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ইত্যাদি। পক্ষান্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলতে সোনার অলংকার, সঞ্চিত টাকা, বসবাস ও খোরাকীর প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ি-ঘর ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ইত্যাদি। বাদায়েউস সানায়ে, ৪/১৯৬, আলমুহীতুল বুরহানী,৮/৪৫৫
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ১৭/৪০৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া,৪/৩০৯।

২. কোন কোন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায় এবং ঐ প্রাণীসমূহের বয়স সর্বনিম্ন কত হতে হবে?

উত্তরঃ- গৃহপালিত পশু তথা উট, গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কুরবানী করা যায়। উট এর বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু-মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে।

আর দুম্বা, ভেড়া বা ছাগল এক বছরের হতে হবে। তবে কোনো ভেড়া যদি ছয় মাস বা তদূর্ধ্ব বয়সের হয়; কিন্তু শরীরের গঠন এর দিক থেকে এক বছরের ভেড়ার মতো Strong বা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটি দ্বারাও কুরবানী সহীহ হবে। বাদায়েউস সানায়ে,৪/২০৬; রদ্দুল মুহতার,৬/৩২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া,৫/২৯৭

৩. সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ- জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা তার মূল্য পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হবে।বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বাজারে এক ভরি ২২ ক্যারেট রুপার দাম ১৫১৬ টাকা। অতএব নেসাব পরিমাণ টাকা হবে (১৫১৬ × ৫২.৫০=৭৯৫৯০) টাকা। আর এক ভরি ২১ ক্যারেট রুপার দাম ১৪৩৪ টাকা।

অতএব নেসাব হবে(১৪৩৪×৫২.৫০=৭৫২৮৫) টাকা। ১৮ ক্যারেট এক ভরি রুপার মূল্য ১২২৪ টাকা। অতএব নেসাব হবে ১২২৪×৫২.৫০= ৬৪২৬০) টাকা।

মোট কথা হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সর্বনিম্ন ৬৪২৬০ টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য, স্বর্ণ-রুপার বাজারমূল্যে যেহেতু হ্রাস- বৃদ্ধি ঘটে,তাই তাৎক্ষণিক সাড়ে বায়ান্ন(৫২.৫০) ভরি রুপার বাজার মূল্য হিসাব করে কুরবানীর নেসাব বের করা যাবে। আলমুহীতল বুরহানী,৮/৪৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া,৪/৩০৯।

৪. কুরবানীর গোশত মেপে মেপে তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজে রাখা এবং বাকি দুই ভাগ বিলিয়ে দেওয়া জরুরি কিনা?

উত্তরঃ-কুরবানী করা এবং কুরবানীর গোশত দান করা ভিন্ন ভিন্ন দুটি আমল। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারা কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়।

আর কুরবানীকারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হলো সে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, যারা কোরবানীর সামর্থ্য রাখে না তাদের ও দান করবে। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা করে রাখ এবং গরীব অসহায়দের দান করো। হাদীস নং ১৯৭১ অন্য এক বর্ণনায় আছে তোমরা খাবে এবং অন্যদেরকেও খাওয়াবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ১৯৭৩

তবে দানের ব্যাপারে কুরবানীকারীর উপর শরীয়ত কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি। বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য সমর্থবানদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম হলো মোটামুটি তিন ভাগ করে এক অংশ গরিব মিসকিন ও অসহায়দের দান করা, আরেক অংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া, আরেক অংশ নিজের জন্য রাখা।

কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তার কুরবানীর গোশত তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন, আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করতেন। আল মুগনী,১৩/৩৭৯।

মোট কথা হচ্ছে তিন ভাগে ভাগ করাটা মুস্তাহাব, আবশ্যক নয়। তবে সামর্থ্যবানদের জন্য উচিত হল এই মুস্তাহাব বিষয়টির উপর আমল করা। অবশ্য কারো পরিবারের সদস্য বেশি হলে; কিংবা নিজেদের প্রয়োজন বেশি থাকলে সে ক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোস্ত রাখতে পারবে। এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া,১৭/৪৩৭; বযলুল মাজহুদ,১৩/৪৩; রদ্দুল মুহতার,৬/৩২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক,৬/৪৮৬; ইলাউস সুনান,১৭/২৬২
৫. কুরবানীর দিনে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি জবাই করা জায়েজ আছে কিনা?

উত্তরঃ- কুরবানির দিনেও কুরবানীর নিয়ত না করে কেবল খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁস মুরগি ইত্যাদি জবাই করা জায়েজ। এতে দোষের কিছু নেই। তবে কোরবানির নিয়তে কিংবা কোরবানির সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে হাঁস মুরগি জবাই করা যাবে না। ফাতাওয়া হিন্দিয়া,৫/৩০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া,৩/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার,৬/৩১৩ হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর,৪/১৬০।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ