শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সংস্কৃতি বনাম কাওয়ালি চর্চা: যা বললেন ঢালকানগরের পীর মুফতি জাফর আহমাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওয়ালী ব্যান্ড সিলসিলা'র ব্যানারে‌ সম্প্রতি রাজধানীর টিএসসিতে কাওয়ালি সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। অনৈসলামিক ভোগবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে ইসলামী দর্শনের চর্চা ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাওয়ালি সন্ধ্যার আয়োজন বলে দাবি করছেন সিলসিলা ব্যান্ড দলের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

আয়োজকদের বক্তব্য

আয়োজকদের একজন আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, ঢাবি ক্যাম্পাসে সরাসরি আপনি গজল গাইতে বা এ নিয়ে বড় পরিসরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারবেন না। তবে সুফি ধারার এই কাওয়ালি অনুষ্ঠান সহজেই করতে পারবেন, এর মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতির অন্যান্য পথগুলো সামনে হয়তোবা আরো সুগম হতে পারে।

এই আয়োজক আরো দাবি করছেন, বাংলাদেশে প্রচলিত যেসব ইসলামী সংগীত অথবা সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে সবগুলো নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মাঝে সংস্কৃতি ছড়াচ্ছে। ইসলামী সংস্কৃতি ও দর্শনের বাইরে থেকে যাচ্ছেন অনেকেই। তার দাবি কাওয়ালি সব ধরনের মানুষের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত। তাই সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে এই আয়োজন।

নেট মাধ্যমে বিতর্ক

টিএসসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কাওয়ালি অনুষ্ঠানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে নেট মাধ্যমে। পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে তুমুল।

কাওয়ালীতে বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ, অপসংস্কৃতি, যেই সুফি ধারার সাথে মিলিয়ে তা চর্চার কথা বলা হয় বর্তমান কাওয়ালি সরাসরি এই ধারার বিপরীত হওয়াসহ, এতে শিরক-বিদ'আতের সংমিশ্রণের বিষয়টি উল্লেখ করে সরব হয়েছেন আলেম ও তরুণদের অনেকেই। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেও চলেছেন তারা।

 শরয়ীতের দৃষ্টিতে কাওয়ালির বৈধতা

বাংলাদেশে সবশ্রেণীর মানুষের মাঝে ইসলাহের কাজ আসছেন শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার রহ.-এর খলিফা ও মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকা নগরের পরিচালক মুফতি জাফর আহমদ

এ বিষয়ে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, আমাদের আকাবিরদের মাঝে একে মজলিসে সামা বলা হত। আকাবিরদের সবাই একে বৈধ বলতেন না, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহ.,নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহ.-সহ কেউ কেউ একে বৈধ বলতেন। তবে এর বৈধতার জন্য তারা বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন।

প্রথম শর্ত হলো, যে গাইবে সে নাবালেগ বাচ্চা অথবা মহিলা হতে পারবে না।

দ্বিতীয় শর্ত হলো, কোন ধরনের মিউজিক এবং বাদ্যযন্ত্র থাকতে পারবে না।

তৃতীয় শর্ত হলো, যারা গাইবে তাদের আহলে দিল হতে হবে, অর্থাৎ সুলুক তরিকতের লাইনে তাদের পরিশুদ্ধ থাকতে হবে। এবং যারা শুনবে তাদেরও এমন হতে হবে,  তাদের আহলে হাওয়া হওয়া যাবে না। অর্থাৎ কাওয়ালিতে ইশক মহব্বতের যেই পঙক্তিমালা রয়েছে; গায়ক এগুলো আল্লাহ তায়ালাকে উদ্দেশ্য করে গাইছে, কিন্তু শ্রোতার জন্য এগুলোকে কোনো নারী অথবা দুনিয়াবী ভালোবাসার দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

কাওয়ালি আয়োজনের ক্ষেত্রে অনেকেই ইসলামী সংস্কৃতি ও সুফি ধারার চর্চার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন-

এক্ষেত্রে ঢালকানগরের পীর মুফতি জাফর আহমদ বলেছেন, ‘যেই আকাবীরগণ একে বৈধ বলতেন তারা এর জন্য যে প্রথম শর্ত দিয়েছিলেন বর্তমান কাওয়ালিগুলোতে সেই প্রথম শর্তই অনুপস্থিত।

দেখা যায় এতে সুন্দর ছেলে অথবা মেয়েদের সাজিয়ে তাদের মাধ্যমে গাওয়ানো হচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো বালেগ পুরুষকে গাইতে হবে। তাই ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার দোহাই দিয়ে একে বৈধ বলার কোন সুযোগ নেই’।

তিনি আরো বলেছেন, ‘বর্তমান কাওয়ালি অনুষ্ঠানগুলোতে দেখবেন কেউ একজন গাইছে, তাকে আরেকজন এসে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে, এ বিষয়টি একেবারে নাজায়েজ’।

ফতোয়ায়ে শামীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, একজন নারীকে সরাসরি দেখা যতটা গুনাহ এর থেকেও বেশি গোনাহ হলো ছোট শিশুদের সাজিয়ে তাদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে দেখা।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে মুফতি জাফর আহমদ বলেন, আমি মানুষের মাঝে ইসলাহের কাজ করে থাকি, তাই তাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করি। আমার অভিজ্ঞতা হলো, এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলো থেকে ছোট ছোট ছেলেরা বড়দের থেকে সমকামীতাসহ এমন অনেক নির্যাতন শিকার হয়ে থাকে, যা সরাসরি শরীয়ত বিরোধী। এবং যে গুনাহ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।

গানবাদ্যসহ সরাসরি অপসংস্কৃতি চর্চায় লিপ্ত, বলিউড, হলিউডে মত্ত থাকার বিপরীতে কাওয়ালিকে সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চা বলতে চান অনেকে-

এ বিষয়ে ঢালকানগরের পীর মুফতি জাফর আহমদের স্পষ্ট ভাষ্য হল, ‘এটা সম্পূর্ণ শয়তানি যুক্তি, অনেকটা টয়লেট খাওয়ার পরিবর্তে পেশাব খেতে বলা’।

তিনি বলেন, ‘নাজায়েজ অল্পও নাজায়েজ, পরিমানে বেশি হলেও নাজায়েজ। কোন বিষয় বৈধতার সীমার মধ্যে থাকলে তা সম্পূর্ণই সমর্থনযোগ্য। এর বাইরে গেলে অল্প হোক অথবা বেশি সম্পূর্ণই নাজায়েজ বলে গণ্য হবে’।

‘ইসলাম ও শরীয়তের বিষয়গুলো বৈধ পন্থায় এবং বৈধ রাস্তায় প্রচার করতে হবে। বৈধ পন্থায় মানুষকে অপসংস্কৃতি থেকে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ইসলাম প্রচার করা কোনোভাবেই জায়েজ নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল পথ ও ভুল ধারণা। একে সমর্থন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার রহ.-এর খলিফা ও ঢালকানগরের পীর মুফতি জাফর আহমদ।

এটি/কেএল/এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ