শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অবাধ ও মুক্ত হওয়া উচিত’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও লক্ষ্মীপুরের কাজির দিঘীর পাড় আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা দুটি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনলাইন-অফলাইনে আলোচনার মূলে ছিল চুল কেটে দেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন ও লক্ষ্মীপুরে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি।

এ নিয়ে সরগরম নেট মাধ্যম। একই শাসনে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হলেও এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক- কোথাও কোথাও আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছে এ বিষয়টি। যুক্তি হিসেবে পেশ করতে দেখা গেছে, রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও মাদরাসা শিক্ষকের ক্ষেত্রে বিষয়টি থানা পুলিশ থেকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত গড়িয়েছে।

কেউ কেউ আবার আলোচনায় তুলেছেন, শিক্ষার্থীদের আদর্শিক ও নৈতিক অবস্থানের দিকটি নিয়ে। তাদের ভাষায়, ‘একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শুধু শেখাবেন না, নৈতিক ও আদর্শিক দিকগুলোতেও গুরুত্ব দেবেন। তাই এ জাতীয় ঘটনাকে অনভিপ্রেত হিসেবেই উল্লেখ করতে দেখা গেছে।

‘সহমর্মিতার সাথে শাসন সুফল বয়ে আনে’

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকের শাসন এবং পরবর্তীতে অপ্রীতিকর ঘটনাকে আসলে কিভাবে দেখছেন দেশের শিক্ষাবিদরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা অবশ্যই সহনশীল ও সহমর্মিতা বজায় রেখে শাসন করবেন। শাসনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকবে ছাত্রকে সংশোধন করা। তাহলেই সুফল পাওয়া যাবে। তাকে বিদ্রোহী করে তোলা যাবে না। তার উপর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা যাবে না’।

বর্তমানে যারা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত; দীর্ঘ একটা সময় তারা ছাত্র হিসেবে কাটিয়েছেন। আগেকার ও বর্তমান সময়ের ছাত্রদের মাঝে নৈতিক ও আদর্শিক বিষয়গুলোতে কোন পার্থক্য উপলব্ধি করেন কিনা এমন প্রশ্নে ড.মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের এই কাল বা সেই কাল বলে আসলে তেমন কিছু নেই। সব যুগেই কিছু ভালো ও কিছু আচরণে উশৃংখল শিক্ষার্থী থাকে। তবে কারো পক্ষ থেকে কোন ভাবেই শিক্ষকদের হেনস্থা করা যাবে না’।

‘সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ শাসনের কারণে বহিষ্কারের দাবি এবং গ্রেফতার এ জাতীয় ঘটনাগুলো সমর্থনযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন’।

তিনি বলেন, ‘আদর্শিক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষকরা অবশ্যই শাসন করতে পারেন, তবে কড়া শাসন, অতি শাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়; এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে’।

‘শিক্ষকরা মানসিক চাপ বোধ করেন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসা কোনোভাবেই কাম্য নয়’

এদিকে রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী বলেছেন, একজন শিক্ষক শুধু পড়াবেন না; অভিভাবক হিসেবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্মাণে তার জন্য কল্যাণকর সব পদক্ষেপ নেবেন’।

তিনি বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি-কালচারের সাথে যায় না শিক্ষার্থীরা এমন কোন কালচার ও হেয়ার স্টাইল অনুসরণ করলে এক্ষেত্রে শিক্ষক অভিভাবকের ভূমিকায় শাসন করতেই পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকের ওপর আইন প্রয়োগের ঘটনা ঘটলে শিক্ষক আর তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তখন তিনি বেতনভুক্ত চাকুরীজীবির মত হয়ে যাবেন;।

‘শিক্ষকদের চাকুরীজীবী পর্যায়ে নামিয়ে আনার উপকরণগুলো বাড়তে থাকলে আগামী প্রজন্ম আদর্শিক শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে’ বলে মনে করেন তিনি।

‘এমন ঘটনা জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো কোন ইঙ্গিত বহন করে না‘ বলেন তিনি ‌।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা  দেখেছি বখাটে স্টাইলে চুল রাখায় পুলিশ অনেক তরুণের চুল কেটে দিয়েছেন; এখানে প্রশাসনের লোকজন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অবাধ ও মুক্ত হওয়া উচিত’ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘সাম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা হয়তোবা শতকরা ৩ শতাংশ ধরা যেতে পারে; কিন্তু এমন দু’একটি ঘটনার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষকই এক ধরনের মানসিক চাপ বোধ করবেন এবং অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে ভয় পাবেন। শিক্ষকরা মানসিক চাপ বোধ করেন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসা কোনোভাবেই কাম্য নয়’ বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী ।

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ