শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসতিখারার নামায ও দুআ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব।।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিরাট দান- ইসতিখারা।

কমযোর বান্দা দুনিয়ার জীবনে কত কিছুর মুখাপেক্ষী। তার কত প্রয়োজন, কত দায়িত্ব। এই সব বিষয়ে সে আসমানী সান্ত¡নার ছায়া পেতে পারে ইসতিখারার মাধ্যমে। আল্লাহর ফায়সালার প্রতীক্ষা, আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজেকে সমর্পণ এবং আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়ার অপূর্ব এক অনুশীলন এই ইসতিখারা। এরচেয়েও বড় কথা হল, ইসতিখারার মাধ্যমে বান্দা যেন সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে। নিজের ভবিষ্যত ও ভবিষ্যতের পরিণাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, দ্বিধাগ্রস্ত, দোদুল্যমান এক বান্দার জন্য এ কত বড় প্রাপ্তি!

ইসতিখারা শব্দের অর্থ হল, খাইর বা কল্যাণ প্রার্থনা করা। অর্থাৎ যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আগে উক্ত বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা এবং দুআ করা যে, হে আল্লাহ! যেভাবে এই কাজ করলে আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ হবে, সেইভাবে কাজটি করার তাওফীক দান করুন। তার জন্য সহায়ক সকল আসবাবের ব্যবস্থা আপনি করে দিন এবং আমার মনকে সেইদিকে ঝুঁকিয়ে দিন। আর যেভাবে করলে অকল্যাণ হবে, সেভাবে করা থেকে আমাকে বিরত রাখুন এবং আমার মনকে আপনার ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট করে দিন। মনের দ্বিধা ও দোদুল্যমানতা দূর করে দিন।

দুই রাকাত নামায পড়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো বিশেষ একটি দুআর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে কল্যাণ চাওয়াকে ইসতিখারা বলে। ইসতিখারা করা সুন্নাত।

ইসতিখারার পদ্ধতি ও দুআ

সহীহ বুখারীসহ হাদীসের নির্ভরযোগ্য অনেক কিতাবে হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা করবে প্রথমে দুই রাকাত নামায পড়বে। এরপর বলবে-

اَللّٰهُمّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوْبِ، اَللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ، ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ. وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِيْ بِه.

হে আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের ওসিলায় আপনার কাছে (আমার উদ্দিষ্ট বিষয়ের) কল্যাণ চাই এবং আপনার কুদরতের ওসিলায় আপনার কাছে (কল্যাণ অর্জনের) শক্তি চাই, আর আপনার কাছে চাই আপনার মহা অনুগ্রহের কিছু। কেননা, (সকল বিষয়ে) আপনার ক্ষমতা রয়েছে, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আপনি (সবকিছু) জানেন, আমি কিছুই জানি না। আপনি তো আল্লামুল গুয়ূব-গায়েবের সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। (অর্থাৎ আমার কাক্সিক্ষত বিষয়টি আমার জন্য কল্যাণকর কি না- তা আপনিই জানেন, আমি জানি না।) হে আল্লাহ! আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণামের বিচারে যদি এ বিষয়টি আমার জন্য কল্যাণকর বলে জানেন, তাহলে আমার ভাগ্যে তা নির্ধারণ করে দিন এবং বিষয়টিকে আমার জন্য সহজ করে দিন। এরপর তাতে আমার জন্য বরকত দান করুন।

আর যদি বিষয়টি আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণাম বিচারে আমার জন্য ক্ষতিকর বলে জানেন, তাহলে আপনি তা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আর আমার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করুন; তা যেখানেই হোক। অতপর তাতেই যেন আমি সন্তুষ্ট হয়ে যাই সেই তাওফীক দান করুন।

তিনি ইরশাদ করেন, দুআটির যে দুই জায়গায় هَذَا الأَمْرَ শব্দ আছে, সেখানে নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে। (কিংবা অন্তত মনে মনে কল্পনা করবে।) -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৬৬, ৬৩৮২, ৭৩৯০; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৮০ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৩৮

অনেকের ধারণা-ইসতিখারা করার সময় হল রাতে, ঘুমুতে যাওয়ার আগে। ধারণাটি ঠিক নয়। ইসতিখারা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই বরং যখন প্রয়োজন হবে তখনই ইসতিখারা করবে। তাতে রাত-দিন বা ঘুমানো-জাগ্রত থাকার কোনো বিষয় নেই।

কারো করো ধারণা, ইসতিখারা করার পর বিশেষ একটি স্বপ্ন দেখা যায়। সেখানে কাজটির ভালো-মন্দ সম্পর্কে নির্দেশনা থাকে। কিংবা কাজটি করা না করার বিষয়ে কোনো আদেশ-নিষেধ থাকে। এমন ধারণাও ভিত্তিহীন। ইসতিখারার সঙ্গে এমন কোনো স্বপ্ন বা ইঙ্গিত-ইশারার আবশ্যকীয়তা নেই। তবে কখনো এমন কোনো স্বপ্ন কেউ দেখতে পারে, কিংবা কেউ কোনো ইশারা-ইঙ্গিত পেতে পারে, সেটা ইসতিখারার অনিবার্য বিষয় নয়। তাই এমন স্বপ্ন-ইশারার অপেক্ষা করবে না।

কোনো কোনো বুযুর্গ বলেন, ইসতিখারা করলে সম্ভাব্য বিষয়গুলোর কোনো একটির দিকে দিলের ঝোঁক সৃষ্টি হয়। তবে যদি কোনো দিকে ঝোঁক নাও হয় এবং কোন্ কাজটি করবে সে ব্যাপারে মনে দ্বিধাদ্বন্দ্বও থেকে যায় তবু ইসতিখারার মাকসাদ পূর্ণ হয়ে যাবে। কারণ, ইসতিখারা করার পর আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে দিয়ে সেই কাজই করিয়ে নেন, যা বান্দার জন্য কল্যাণকর। ইসতিখারার পর সেই কাজেরই প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি তৈরি হয়, যাতে বান্দার জন্য কল্যাণ নিহিত থাকে। বান্দা তখন নিজের অজান্তেই সেই কাজের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।।’

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল কাজে ইসতিখারা করার তাওফীক দান করুন। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল ক্ষেত্রে আমাদের জন্য খাইর ও কল্যাণের ফায়সালা করুন- আমীন।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ