রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হল মুসলিম ছাত্রী সুলতানা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকে এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম ছাত্রী। পিছিয়ে পড়া গোত্র মুসলিম হিসেবে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মুসলিম কোনো শিক্ষার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ স্থান পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। তাই তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস চলছে কদিন ধরে। পাশাপাশিই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ধর্মের পরিচয়ে তার পরিচয়, নাকি তিনি একজন মেধাবী ছাত্রী? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত নেটিজেনরা। বিতর্ক হলো, ছাত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে কেন তার ধর্মের পরিচয় টানতে হল তা নিয়েই বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিতর্কের সূত্রপাত উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার সময় পরীক্ষার্থীর নাম না করেই উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা সংসদের সভাপতি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা। মুর্শিদাবাদ জেলার এক মুসলিম গার্ল। তিনি ৫০০ এর মধ্যে একক ভাবে ৪৯৯ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।’মহুয়ার এই মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় হয় নেট দুনিয়া।

উচ্চ মাধ্যমিকে এককভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কান্দি রাজা মনীন্দ্র চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানা। বাড়ি কান্দি শহরের হোটেল পাড়া। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৯। মাধ্যমিকেও সে প্রথম দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। রুমানার বাবা মা দুই জনেই শিক্ষক।

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার প্রত্রিকায়তে রুমানা বলেন, একজন এককভাবে প্রথম হব ভাবিনি। প্রথম হওয়ায় ভাল লাগছে। তবে পরীক্ষা হলে আরও ভাল লাগত। আমি ভেবেছিলাম নম্বর ভালো হবে। খুবই সন্তুষ্ট আমি। সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার খবর পৌঁছাতেই পরিবারের সদস্যরা আনন্দে মেতে ওঠেন। এলাকার মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীরা বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান। ভবিষ্যতে একজন বিজ্ঞানী হতে চায়।

এই কৃতী ছাত্রী খবর পাওয়া পরেই উচ্ছ্বসিত সাংসদ অধীর চৌধুরীও। তিনি আনন্দবাজারকে জানান, মুর্শিদাবাদের তথা বাংলার আমাদের ঘরের কন্যা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হল, আমাদের বুকটা গর্বে ভরে গেল, নাম রুমানা সুলতানা। শিক্ষা যে শিখবে তার সম্পত্তি, রুমানা আমাদের শিক্ষা দিল। সবাই পড়ো সবাই এগিয়ে চলো। আজ বাংলার নতুন সুলতানা রাজ্য কে কাঁপিয়ে দিল, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক এবং শিক্ষাগত অবস্থার প্রতি মনোনিবেশ করি তবে তাদের এই অবাস্তব পরিস্থিতি তাদের ভারতীয় প্রতিরূপীদের দুর্দশার প্রতিফলন ঘটায়। ‘ভারতের রাজনীতিতে এখন ধর্মের চলন বেড়ে গিয়েছে। ভোটের ক্ষেত্রেও দেখি ধর্মের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। ধর্মকে ঘিরে এখন ভোট হয়। ভারতের সব ক্ষেত্রেই ধর্ম উল্লেখ করতে হয়, যে কোনও ফর্ম ভরতে গেলেও লিখতে হয়। যেটা একদমই আমরা মানতে পারি না, তাদের শিক্ষা সংসদের সভাপতি কেন বলেছেন জানি না, তবে একজন ছাত্রী সে শুধুই ছাত্রীই। একুশের প্রথম স্থানাধিকারী একজন ছাত্রী বললেই ভালো হয়।’

‘কোনও ছাত্র-ছাত্রীর রেজাল্টকে ধর্ম দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। তাতে ছাত্র ছাত্রীদের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা, উৎসাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপরে উঠতে হবে মানুষকে। সমাজের চিন্তাধারা বদলে ধর্ম নয় একজন নাগরিককে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হবে।’
ধর্মের কথাই যদি বলা হয় তা হলে দেখা উচিত কোন পরিবেশে সে বড় হয়েছে। যেখানে তাঁর বাবা-মা উভয়ই শিক্ষক। একইসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন রুমানা। অর্থাৎ অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন এই ছাত্রীর পক্ষে এই ধরনের মন্তব্য ঠিক নয়।’

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের প্রথম স্থানাধিকারীর ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা নিয়ে তোলপাড় রাজ্যের শিক্ষা মহল। উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের পদত্যাগের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সংসদ সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে এদিন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষক ঐক্য মুক্ত। বিতর্কের আবহে এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন মহুয়া দাস।

বিতর্ক প্রসঙ্গে মহুয়া দাস এদিন বলেছেন, মেয়েটি শিক্ষারত্ন। সেই হিসেবে বলেছি। মহিলা সমাজে আমাদের অলঙ্কার। এও আমাদের পথিকৃৎ। আমাদের রত্ন। বেশি করে আলোয় আনতে চেয়েছি। সংসদ গর্বিত।একটা নিষ্পাপ মেয়ে একটি প্রত্যন্ত জেলা থেকে সংসদের ইতিহাসে প্রথমবার ভালো ফল করেছে। আবেগের বশে বেগম রোকেয়ার কথা মনে করেছিলাম। সেই হিসেবে বলেছিলাম, যাতে মেয়েটির গৌরব শেয়ার করা যায়। উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া বাঙালি মুসলিম নারী সমাজের পথিকৃৎ। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো এনেছিলেন তিনি।

অন্যদিকে রুমানার মামা মহম্মদ নুরুল হককে বলতে হয়, ‘মুসলিম মেয়ে প্রথম হয়েছে বলে যারা বারবার বলছেন, তাদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে? মুসলিম মেয়ে বলে কি কোনো অঘটন ঘটেছে? মেধা-বুদ্ধি-পরিশ্রমের সমন্বয়ে প্রথম হতে হয়। আমরা গর্বিত যে, রুমানা আমাদের পরিবারের সন্তান। সে একজন ছাত্রী। মুসলিম মেয়েরা এগিয়ে চলেছে এটাই লক্ষণীয় এবং আনন্দের ব্যাপার। শুধ মুসলিম বলে নাম পরিচয় সম্বোধন না করা ঠিক হয়নি।

‘মহুয়া দাসের এ ধরনের মন্তব্য তাঁর মানসিক সংকীর্ণতার প্রকাশ। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই এ কথা তিনি বলেছেন। যা সমাজের সাধারণ মানুষ ভাল অধিকারী রুমানা সুলতানের এগিয়ে চলা উচিত।’’রুমানার স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বলতে হয়, ‘আমরা গর্বিত। আমাদের স্কুল রাজ্যে প্রথম হয়েছে। এটাই বড় পরিচয়। মুসলিম বা হিন্দু— কোনো ধর্ম নিয়ে পরিচয় হোক, এটা বাস্তবে ঠিক নয়। এই বিতর্কের এ বার অবসান হোক।’

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ