আল্লামা তাকি উসমানি।।
কুরআনে বর্ণিত খুশু (বিনয়) গুণটি শুধু নামাজের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত নয়। খুশু মানব জীবনের জন্য আবশ্যকীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
الخاشعين والخاشعات
এখানে বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী গুণটির সাথে বিশেষ কোন কয়েদ লাগানো হয়নি। অন্য জায়গায় নামাজের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে,
قد افلح المؤمنون الذين هم في صلاتهم خاشعون
এখানে নামাজের খুশু-খুযুর কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে الخاشعين والخاشعات -এগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও গুণ। এই সিফাত (গুণ)গুলো নামাজের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত নয়। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন; চাই সে নামাজে থাকুক অথবা এবাদতে; বাজারে কিংবা ঘরে স্ত্রী-সন্তানের সাথে অবস্থান করুক-জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার সামনে নিজেকে সমর্পণ করে দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
খুশু আসলে কাকে বলে?
খুশু শুরু হয় বিনয় থেকে। বিনয় বলা হয়- মানুষ অন্তরে ভাববে আমার কোনো সফলতা নেই, যা কিছু আছে সব আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত, তিনি যখন চাইবেন তা ছিনিয়ে নিতে পারেন, আবার যখন চাইবেন দিতে পাবেন। আমার সম্পদ আমার বিশেষ কোন শক্তি বলে নয় বরং এটা আল্লাহ তালার বিশেষ দান।
কারো হয়তোবা ব্যবসা আছে, অনেক ভালো ব্যবসা চলছে, ক্রয়-বিক্রয় চলছে মানুষ পণ্য ক্রয় করছে। এর মাধ্যমে অঢেল সম্পদ কামাই হচ্ছে। এসবের ফলে কখনো কখনো মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়, সে ভাবে এসব আমার অর্জন। আমি নিজের যোগ্যতা ও মেধা খাটিয়ে এই সম্পদ অর্জন করেছি। মানুষের এই ভাবনা তাকে অহংকার-এর দিকে নিয়ে যায়, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আবার এই সম্পদ যখন কোন বিনয়ী মানুষের কাছে আসে তখন বিনয়ে তার মাথা অবনত হয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবে এটা আল্লাহ তায়ালার দান; শুকরিয়া তারই। আমি এর যোগ্য ছিলাম না, আল্লাহ তায়ালা নিজের অনুগ্রহে আমাকে এটা দিয়েছেন।
কোরআন শরীফে দুজনের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, একজন হলো কারুন, কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, কারুনকে এত পরিমান সম্পদ দেওয়া হয়েছিল যে তার চাবি বহন করার জন্য আলাদা বহরের প্রয়োজন হতো। তার ধন সম্পদ দেখে মানুষ বলতো; হায়! আমাদের যদি কারুনের মতো ধন সম্পদ থাকতো। সে অনেক ভাগ্যবান।
কারুন বলত ; এই সমস্ত সম্পদ আমার যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে আমি অর্জন করেছি। এ ছিল কুরআনে বর্ণিত অহংকারী সম্পদশালী কারুনের ঘটনা। অপরদিকে কোরআনে সম্পদশালী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
অঢেল সম্পদ পেয়ে সুলাইমান আলাইহিস সালাম বলেছেন; পৃথিবীর এমন কোন নেয়ামত নেই যা আমাকে দান করা হয়নি, কিন্তু এই সম্পদের উপর আমার কোন গর্ব নেই, কোন অহংকার নেই। এই সম্পদের কারণে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার কিছুই নেই, বরং যা কিছু রয়েছে এগুলো আমার রব আমাকে অনুগ্রহ করে দান করেছেন।
তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! যেহেতু এগুলো আপনি দান করেছেন তাই আমাকে আপনার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দিন। এটা ছিল হযরত সুলাইমান আলাই সালাম এর ঘটনা।
কারুন-এর কাছে সম্পদ ছিল, সুলাইমান আলাইহিস সালামের কাছেও সম্পদ ছিল; কিন্তু কারুন তার সম্পদ দিয়ে অহংকার ও হিংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ করেছিল, অপরদিকে সুলাইমান আলাই সাল্লাম তার সম্পদের মাধ্যমে বিনয় প্রকাশ করেছিলেন।
যখন মানুষ ভাবে যে, আমার যা কিছু আছে তা আল্লাহ তায়ালার দান; তখন বিনয়ে তার মাথা অবনত হয়ে আসে, তার কাজে কর্মে অহংকার প্রকাশ পায় না। তার কথাবার্তা চলনে-বলনে প্রত্যেকটি কাজে বিনয় প্রকাশ পায়। আমি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত এই ভাব প্রকাশ পায়।
অনুবাদ: নুরুদ্দীন তাসলিম।
এএ/এনটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        