শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


জেল-জুলুমে হার না মানা এক মনীষীর গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর

পবিত্র কুরআনের বেশকিছু আয়াতে মহান প্রভূ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা নিবেন বলে বারবার জানিয়ে দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় যুগে যুগে তাঁর প্রিয় বান্দাগণ সবচেয়ে বেশি যে পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তার অন্যতম বন্দিত্ব বা কারাজীবন। কারাগার কারো হয়েছিল কবরস্থান। কারো বিষাদের ঘর। তবে তারা বিচলিত হন নি। বাতিলের সঙ্গে আপোশ না করে হাসি মুখে বেঁছে নিয়েছিলেন এ পথ।

যারা বাতিলের সঙ্গে আপোশ না করে হাসি মুখে কারাজীবন বেঁছে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আমাদের হানাফি মাযহাবের ইমাম, ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ। জালিমের সঙ্গে আপোশ না করায় কারাগার হয়েছিল তার মৃত্যুঘর। এটাই সত্যনিষ্ঠদের পথ। কারাগারের এ পরীক্ষায় কেউ উত্তীর্ণ হয়, কেউ ভয়ে জালিমের সঙ্গে আপোশ করে। কিন্তু হকপন্থীরা সর্বদা সত্যের ওপর অবিচল থাকেন।

জালিম শাসক খলিফা মানসুর ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জালেম শাসকের সমর্থনের দায় এড়ানোর জন্য এ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এতে অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে বন্দী করেন। প্রতিদিন তাকে কারাগার থেকে বের করে প্রকাশ্যে দশটি করে চাবুক মারা হতো। চাবুকের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত বেয়ে পড়তো। সে রক্তে রঞ্জিত হতো কুফার মাটি । চাবুক মারার পাশাপাশি তার ওপর চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। দেয়া হতো না ঠিকমতো খাবার-দাবার। সত্তর বছর বয়সী এ নিষ্ঠার বাহক তবুও জালিমের সঙ্গে আপোশ করেন নি।

তার ওপর চালানো অমানুষিক নির্যাতন দেখে খলিফা মানসুরের নিকটতম কিছু মানুষ ভেবে ছিল এখন আবার যদি তাকে খলিফার প্রস্তাবটি দেয়া যায় তাহলে অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। সে আশায় তারা শাসককে রাজি করিয়ে কারাগারে ইমাম আযমের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তারা এসে দেখেন ইমাম আবু হানিফাকে চাবুক মারা হচ্ছে। তারা তখন তাকে খলিফার প্রস্তাবটি মেনে নিতে বললে তিনি বলেন, ‘ আমার রব জালিম ও জালিমদের সহযোগীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘এবং তাদের জন্যে আছে লোহার হাতুড়ি।’ [সূরা আল-হাজ্জ, ২১] সুতরাং জাহান্নামে উত্তপ্ত লোহার হাতুড়ির আঘাতের চেয়ে চাবুকের আঘাত সহ্য করা আমার জন্য সহজ। আল্লাহর কসম, সে যদি আমাকে হত্যাও করে, আমি এই পদ গ্রহণ করব না।

নিষ্ঠুর জালিম শাসক খলিফা মানসুর অবশেষে ব্যর্থ হয়ে সত্যি সত্যিই ফিকহের এ বরপুত্রকে হত্যা করেছিলেন। তার নির্দেশে ইমাম আযমকে পরিবেশন করা পানীয়র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল কারাকর্তৃপক্ষ। সে বিষ তাকে দিয়েছিল জালিমের হাত থেকে মুক্তি এবং মহান প্রভূর নৈকট্য। হিজরি ১৫০ সন মোতাবেক ১৪ জুন ৭৬৭ ইংরেজি সালে তিনি ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়া ত্যাগ করেন।

মহান প্রভূ তার কবরকে জান্নাতের টুকরো বানিয়ে দিন। তার রেখে যাওয়া আদর্শের ওপর আমাদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ