শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাজী নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণার গেজেট প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন ৯ ডিসেম্বর ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত হেফাজতের পল্টন জোনের সভাপতি সালাহ উদ্দিন, সম্পাদক সিরাজী ও সাংগঠনিক সাখী ভারতের হিন্দুদের চেয়ে বাংলাদেশের হিন্দুরা আরামে আছে: মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব হাব নির্বাচন ২২ ফেব্রুয়ারি, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিন প্যানেল! মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিএনপির বিশাল কর্মী সমাবেশ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে, নেই ভারতে: হেফাজত মহাসচিব ভোলায় হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত কুখ্যাত ডাকাত গ্রেফতার কাল সোহরাওয়ার্দী মুক্তমঞ্চে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ভারত পায়ে পাড়া দিয়ে যুদ্ধ করতে চায়: ফয়জুল করীম

উকবা ইবনে নাফি: মুসলিম বিশ্বের আলেকজান্ডার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইশতিয়াক আহমেদ ।।

তিনি একজন মুসলিম সেনাপতি। যাকে বলা হয় মুসলিম বিশ্বের আলেকজান্ডার। উনার জন্ম ৬২২ সালে মক্কা নগরীতে। উনার জন্ম হয়েছিল কুরাইশ বংশের সাথে সম্পৃক্ত বংশে৷

আমর ইবনুল আসের উত্তর আফ্রিকা অভিযানের সময় উকবা ইবনে নাফি তার সাথে অংশগ্রহণ করেন। ৬৭০ সালে তিনি কমান্ডার হিসেবে একটি দলের নেতৃত্ব পান।

উকবা ইবনে নাফি প্রচন্ড বেগে ধেয়ে যাচ্ছিলেন আফ্রিকা মহাদেশের দিকে। একের পর এক ভূখন্ড জয় করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে।

তিনি তার বাহিনী নিয়ে তিউনিসিয়ার তিউনিস শহর থেকে ১৬০ কিমি দক্ষিণে একটি শহর স্থাপন করেন কাইরুয়ান নামে। কাইরোয়ান শব্দটির মূল অর্থ সেনাছাউনি। শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। যেহেতু উকবা ইবনে নাফি এখানে প্রথম সেনাছাউনি স্থাপন করেছিলেন, সে সূত্রেই এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় কাইরোয়ান বা সেনাছাউনি। এই কাইরুয়ান শহর থেকেই পরবর্তীতে তিনি তার সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন। বর্তমানে এটি তিউনিশিয়ার একটি প্রাদেশিক রাজধানী।

১৯৮৮সালে ইউনেস্কোর ১২তম অধিবেশনে এই শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে। ওআইসি ২০০৯ সালে এই শহরটিকে ইসলামী সভ্যতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং একে আফ্রিকা মহাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে অভিহিত করেছে।

এ শহরেই তিনি একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন। তাঁর নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় মসজিদে উকবা বিন নাফি। এই মসজিদ থেকেই আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান ধ্বনিত হয়।

আফ্রিকার ভয়ঙ্কর অরণ্যের হিংস্র জীব-জন্তু ও অধিবাসীরা উকবা ইবনে নাফু ঈমানী শক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে জঙ্গল খালি করে সেখান থেকে চলে যাওয়ার ঘটনা আফ্রিকার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ও বিস্ময়কর বটে।

উকবা ইবনে নাফি ছিলেন অত্যন্ত খোদাপ্রেমিক এবং মোস্তাজাবুত দাওয়াত, তিনি দোয়া করলে তা কবুল হতো। ভীতিকর স্থানে তিনি অতি বিনয়ের সাথে এসব হিংস্র জীবজন্তু, কীট-পতঙ্গ দূর করে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দো’আ করতেন, ‘আইয়্যুহাল হিয়াদা ওয়াস-সিবা! ইন্না আস্হাবু রাসূলুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইরহালুআল্লা, ফা ইন্না নাজেলুন। ওয়া মান-ওয়াজ নাহু বা’দা জালিকা কাতাল্লাহু।

অর্থাৎ এই অরণ্যে বিচ্ছিন্নভাবে বিচরণকারী হিংস্র হে জন্তুকূল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সা. এর সাহাবা, তোমরা আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যাও। আমরা এখানে অবতরণ করবো। এ ঘোষণার পর যাকে এখানে আমরা পাবো তাকে হত্যা করবো।

হজরত উকবা ইবনে নাফির মর্মস্পর্শী ঘোষণা বিদ্যুৎ গতিতে সমগ্র জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকল চতুষ্পদ জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, সাপ-অজগর প্রভৃতি তাদের অবস্থান কেন্দ্রগুলো খালি করতে থাকে। এবং সাপ-বিচ্চুসহ সকল বিষাক্ত জীব-কীট-পতঙ্গ মুহুর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।

উকবা ইবনে নাফি গোটা মরক্কো জয় করে সাগর তীরের বার্লিয়ান নামক স্থানে পৌঁছে অত্যন্ত অনুতাপের সাথে বলেছিলেন-

‘ইয়ারাব্বি, লাওলা হাজাল বাহ্রু লামাশতু ফিল- বালাদি মোজাহেদান ফিসাবিলিকা’। অর্থাৎ হে রব, আমার সামনে যদি সাগর না থাকতো তাহলে আমি তোমার পথে তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধ করতে করতে বিজয়ী বেশে এই দেশের প্রান্ত সীমায় উপনীত হয়ে যেতাম।

আটলান্টিক মহাসাগর প্রতিবন্ধক না হলে উকবা সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ মুসলিম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ইউরোপও তার বিজয়ের আওতায় নিয়ে আসতেন।

৬৮৩ সালে বিসক্রার নিকটে বার্বা‌র খ্রিষ্টান রাজা কুসাইলার দ্বারা সেনাপতি উকবা ইবনে নাফি শহিদ হন।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ক্যামব্রিজ প্রেস।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ