মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


করোনা: এ যেন এক মহাদুর্ভিক্ষের বার্তাবাহক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল আমিন রাহমানী।।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস শুধু ইউরোপ বা আমেরিকাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে না, বরং সারা বিশ্বকে অচল ও গতিহীন করে দিয়েছে। এ ভাইরাসের প্রলয়তান্ডব মনে করিয়ে দিচ্ছে পুরনো ইতিহাসকে।

১৩৪৩ খিষ্টপূর্বে আমরা দেখি গ্রিসে দ্য প্লেগ অব এথেন্স। এটাকে বলা হয় প্লেগের প্রথম মহামারি যা হাজার গ্রিক সৈন্যের মরণ এনেছিল। শুধু তাই নয় এনেছিল গণঅভাব ও অনাহার।

ঐতিহাসিক থুসিডাইডস তাঁর রচনাংশ হিস্ট্রি অব দ্য পলোপনেসিয়ান ওয়্যার তে তার চোঁখে দেখা প্লেগের বর্ণনা দিয়েছেন। কিভাবে তা গ্রামের পর গ্রাম জনমানবহীন করে দিয়েছে। মানুষকে ফেলে দিয়েছিল মহাবিপন্নতায়। যার থেকে মাথা তুলতে লেগে যায় অনেক সময়।

রোমান আমলে ইউরোপ দেখেছে অনেক বড় বড় মহামারি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দ্য প্লেগ অব জাষ্টিনিয়ান।
৫৪০/৪১ সালে এ মহামারি ছড়িয়ে পড়ে ইদুরের মাধ্যমে।যা প্রবলভাবে কাঁপিয়ে দেয় বাইজেন্টাইন সাম্রজ্যকে। নিয়ে আসে অভাব গণমৃত্যু আর অনাহার। প্রায় ৫০ টি বছর তা ইউরোপকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে রাখে। কেড়ে নেয় প্রায় ১০ কোটি মানুষের প্রাণ।

এর চেয়ে বড় মহামারি ছিলো ১৩৪৬ সালে। দ্যা ব্লাক ডেথ ব্লাক সি বা কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী থেকে ছড়ায় এ মহামারি। ঐতিহাসিকদের মতে তার নাম ছিল ইবোলা ভাইরাস। এ ভাইরাসে ইউরোপ মহাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নিহত হয়। ১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ পর্যন্ত মানুষ শুধু লাশ দেখেছে। দাফনের ফুরসৎ ছিল না। প্রায় দুইশ বছর জারি ছিল তার প্রভাব।

কিন্তু করোনাভাইরাসের পূর্বনজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই। এশিয়া আফ্রিকা ইউরোপ আমেরিকা আজ একই সাথে আক্রান্ত।
আগেকার মহামারি বৈশ্বিক ছিল না, ছিলো আঞ্চলিক। কিন্তু এবারের মহামারি গোটা দুনিয়াকে অচল করে দিয়ে এক মহাদুর্ভিক্ষের বার্তা দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু যেন আজ মাথার উপরে ঘুরছে।

আজ বিশ্বে যে অভাব ধেয়ে আসছে তার বিপরিদে দেশে দেশে নতুন অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি অবলম্বন করা অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু মাত্র রাষ্টীয় কর্মসূচিতেই আসন্ন দুর্ভিক্ষের মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক পারিবারিক ও ব্যক্তিক উদ্যোগগুলো অপরিহার্য।

১. আমাদেরকে বিলাসী ও অপচয়ী জীবনধারাকে পরিহার করতে হবে। ২. ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। এবং সবাইকে বাঁচতে হবে। ৩. কমপক্ষে তিন মাসের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। ৪. কৃষিজমি বাড়ীর অতিরিক্ত জমিকে কাজে লাগাতে হবে। ৫. আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ৬. অনাবাদী জমির অভিশাপ থেকে বাঁচতে হবে। নামতে হবে চাকরিজীবী থেকে কৃষক হওয়ার যুদ্ধে। এবং হতে হবে ঘুমকাতুরে থেকে পরিশ্রমী।

এমনটি আমরা কখোনই কামনা করি না। তবে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে সব উপায় অবলম্বন করার পরে আল্লাহর উপর ভরসা করার নামই হলো তাকওয়া।

লেখক: লালমাটিয়া মাদরাসা ঢাকা।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ