দুয়ারে কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসাগুলোর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। মাদরাসাগুলোতে ইতিমধ্যেই খেয়ার শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা ও আশপাশের বেশিরভাগ মাদরাসায় পরীক্ষা শুরু হবে ৩ তারিখ থেকে।পরীক্ষায় ভালো করতে প্রস্তুতি চলছে ছাত্রদের।
পরীক্ষায় ভালো করতে প্রস্তুতি কেমন হবে এসব বিষয়ে আমরা কথা বলেছি রাজধানী ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষা-সচিব মুফতি আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপে তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিবেদক মাওলানা সুফিয়ান ফারাবী।
প্রতিটি ছাত্রই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল চায়। ভালো ফলাফলের আসা থাকে সবার মনেই। তারপরও অনেকেই ভালো ফলাফল করতে পারেন না। পরীক্ষার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে পড়তে হয়, প্রস্তুতি নিতে হয়। সিস্টেম অনুযায়ী সামান্য পড়াই হতে পারে ভালো ফলাফলের কারণ। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে অনেক পরিশ্রম বিফল হতে পারে। পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে ছাত্রদের জন্য চারটি উপদেশ উপহার দিচ্ছি আজ।
১. শুরুতেই যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে, সেটা হল কোনোক্রমেই হতাশ হওয়া যাবে না। হাল জামানার অধিকাংশ ছাত্র পড়াশোনা নিয়ে হতাশায় ভোগেন। এত লম্বা নেসাব কিভাবে পড়বো? শেষ করতে পারবো তো!
ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা চিন্তিত থাকেন। যার ফলে এ চিন্তার মধ্যেই তাদের দুই তিন দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় বাকি দিনগুলোতে কোনক্রমেই পরিপূর্ণ নেসাব শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা হতাশ হয়ো না। মনের ভিতরে এ বিষয়টিকে জায়গা দাও-
পরিপূর্ণ নেসাব শেষ করা আমার জন্য জরুরি না। আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি এবার যদি আল্লাহ তৌফিক দান করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ শেষ করতে পারবো।
এ চিন্তাটা মনের ভেতর রাখতে পারলে শয়তান কোনক্রমেই ধোকায় ফেলতে পারবে না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় খেয়ারের পুরো সময়টা ব্যয় করলে একটা পর্যায় পর্যন্ত ছাত্ররা পৌঁছতে পারে। এজন্য আমি বলব কোনক্রমেই মনের ভিতরে এ কথা জায়গা দেওয়া যাবে না- এত লম্বা নিসাব কিভাবে শেষ করবো?
২. পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা।
প্রতিটি কামরায় (কক্ষে) পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা। নির্দিষ্ট এ দিনগুলোতে আড্ডালাপ পরিত্যাগ করা। প্রয়োজনে মশওরার মাধ্যমে পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা। পড়াশোনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এমন বিষয় গুলো কে দূরে সরিয়ে রাখা।
কিছু কিছু ছাত্র আছে যারা নিজেরাও পড়েনা অন্যদেরকেও পড়তে দেয় না, তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলা, তোমাদের যদি পড়তে ইচ্ছে না হয়, তোমরা পড়বে না ।
কিন্তু মেহেরবানী করে তোমরা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করোনা। বুঝিয়ে শুনিয়ে বলার পরও যদি তারা বুঝতে না পারে, পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে- নিকটস্থ ওস্তাদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা।
মোট কথা হল যে ভাবেই সম্ভব সেভাবেই পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা।
৩. সুবিন্যস্ত করে পড়া।
সুবিন্যাস্ত করে পড়া। পুরো কিতাব অধ্যায় অধ্যায় নির্দিষ্ট করে পড়া। কোন অধ্যায়ে কয়টি পরিচ্ছেদ রয়েছে, কোন পরিচ্ছেদে কি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এবং সেই অধ্যায়ের মূল ভাষ্য কী? এসবের দিকে লক্ষ রেখে পড়া।
অন্যথায় দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ মেহনত করা সত্ত্বেও পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট আসে না। সেদিন একজন ছাত্রকে দেখলাম। সে পড়ছিল ‘যাআ জায়েদুন’ ‘যাআ জায়েদুন’ । প্রায় এক ঘণ্টা যাবত সে শুধু এদুটি বাক্যই পড়ছে। এতে তার কী লাভ হচ্ছে!
বরং সে যদি শুধু এতটুকু মনে গেঁথে নেয়- ‘যাআ জায়েদুন’ এটি জুমলায় ফেলিয়া এর উদাহরণ। তাহলেই কিন্তু যথেষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমার উপদেশ থাকবে বন্ধুরা তোমরা তোমাদের পড়াকে সুবিন্যাস্ত করে পড়ো। অধ্যায় পরিচ্ছেদ এবং আলোচনা নির্দিষ্ট করে পড়ো।
৪. নামাজ ও দোয়ার পাবন্দি হওয়া।
আমাদের সমাজের স্কুল কলেজ ও ভার্সিটির ছেলেদের কে দেখা যায় পরীক্ষা আসলে তারা নামাজ আদায় করছে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমামের পিছনে দাঁড়াচ্ছে। অথচ তারা এতদিন নামাজ পড়তো না। পরীক্ষা তাদেরকে বেনামাজি থেকে নামাজি বানিয়ে দিল।
বিপরীতে আমাদের মাদ্রাসার ছাত্ররা নিয়মিত নামাজ আদায় করে। কিন্তু পরীক্ষার সময় তাদের মধ্যে একপ্রকার অলসতা পরিলক্ষিত হয়।
অন্যান্য সময় ঠিকঠাকমতো নামাজ আদায় করলেও পরীক্ষার সময় এসে অলসতাকে নিজের মধ্যে জায়গা করে দেয়। তাহলে বিষয়টি এই দাঁড়াল- পরীক্ষা নামাজীকে বে নামাজি বানিয়ে দিচ্ছে, আর বেনামাজিকে নামাজি বানিয়ে দিচ্ছে।
বিষয়টি পরিতাপের। আমি আমার প্রিয় বন্ধুদেরকে বলব তোমরা অলসতাকে দূরে ঠেলে ৫ ওয়াক্ত নামাযের পাবন্দী হও।
এর সাথে সাথে ইশরাক, আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে দাও। ইনশাআল্লাহ এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখলে তুমি ভাল ফলাফল করবে।
-এটি