ইসলামি শরিয়ত সক্ষম পুরুষদেরকে জামাতের সাথে নামাজের নির্দেশ দিয়েছে। জামাত তরক করা থেকে হুঁশিয়ার করেছে আমাদের নবীজি সা.। এমনকি অন্ধ ব্যক্তিকেও নবি সা. জামাত ছাড়ার অনুমতি দেননি। তবে ঢাকা শহরের মানুষ অন্য নামাজের তুলনায় ফজর নামাজে তিনগুণ কম আসে। কেউ কেউ আবার বাড়িওয়ালা চাবি না দেয়ায় আসতে পারেন না। এ বিষয়ে আওয়ার ইসলাম মুখোমুখি হয়েছে বিজ্ঞ দুই আলেমের। কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক মুফতি আবদুল্লাহ তামিম।
জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসার শিক্ষাসচিব, বহুগ্রন্থ প্রণেতা, মুফাসসিরে কুরআন মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া, ঢাকা শহরে বাড়িওয়ালারা চাবি না দেয়ায় ফজর নামাজ আদায় করতে যেতে পারে না অনেকে, এর দায়ভার কারা নেবে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন-
“এ বিষয়টার দুইটি দিক থাকে। একটি হলো বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়। বাস্তবিকভাবেই যদি নিরাপত্তার সমস্যা থাকে তাহলে এর দায় বাড়িওয়ালার ওপর আসবে না। আর যদি এমন হয়, বাড়িওয়ালা দীনদার না, ভাড়াটিয়াদেরে ইচ্ছে করেই ফজরে বের হতে দেয় না, তাহলে তো এটা স্পষ্ট বাড়ীওয়ালাই এর দায় গ্রহণ করবে।
বাকি এ বিষয়টি অন্যভাবে সমাধা করা যায় কি না লক্ষ্য রাখতে হবে। বাড়িওয়ালা দারওয়ান রাখলো। বা বিশটি ফেমিলি যদি থাকে একেকদিন একেকজন পাহাড়ার দায়িত্ব নিয়ে নিলে বাকিরা নামাজ আদায় করতে পারবে জামাতে। এভাবেও একটা সমঝোতার মধ্যে যাওয়া যায়।”
প্রায় একই রকম উত্তর দিয়েছেন, ঢাকা মানিকনগর মাদরাসার শাইখুল হাদিস, জামিয়া শায়েখ জাকারিয়া কাঁচকুড়া উত্তরখান উত্তরার ইফতা বিভাগের প্রধান, মুফতি মোহাম্মদুল্লাহ সাদেকী।
তিনি বলেন, “বাড়িওয়ালার বিষয়টি হলো নিরাপত্তার জন্য তারা চাবি দেয় না। ঢাকা শহরে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাই অনেক বাড়িওয়ালার নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করে চাবি দেয় না। কিন্তু বাড়িওয়ালারও উচিত জামাতের দিকে খেয়াল রাখা। তার ভাড়াটিয়ারা নামাজ জামাতে পড়তে পারছে কি না লক্ষ্য রাখা এটা তার দায়িত্ব।
দুর্ঘটনা ঘটার থাকলে ঘটবেই। দুনিয়া ক্ষণস্থয়ী। একদিন সব শেষ হয়ে যাবে। তখন নামাজ রোজা আর ইবাদতই থাকবে। তাই জামাতের প্রতি গুরুত্ব দিতে বাড়িওয়ালার উচিত দারওয়ান রাখা। না হয় যেভাবেই সম্ভব ভাড়াটিয়াদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা করা।
বাস্তবতা দেখা যায়, যে বাড়িওয়ালারা নিজেরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার ভাড়াটিয়ারাও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। আর যারা জামাতে নামাজ আদায় করে না তারা ভাড়াটিয়াদেরও নামাজ আদায় করতে দেয় না। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে নামাজি বাড়িওয়ালাদের।
তারা বাড়িওয়ালাদের নিয়ে বসে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করবে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের ফজিলত। এতে ইমামরাও সহযোগিতা করলে বিষয়টি আরো সহজ হবে বলে আমি মনে করি।”
মুফতি শামসুদ্দীন জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ফজর নামাজে বর্তমান সময়ে মুসল্লিদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। অন্য নামাজের তিন ভাগের একভাগও উপস্থিত হয় না ফজর নামাজে। এর কারণ হিসেবে আপনি কী মনে করছেন?
প্রথমে আমি বলতে চাই, নামাজ মানুষের ওপর ফরজ, আর জামাতে নামাজ না পড়লে রাসুল সা. এর অনেক বড় ধমক আছে। এ বিষয়গুলো মানুষের কাছে যতবেশি আলোচনা হবে, জামাতে উপস্থিতি তত বেশি হবে। জমাতে নামাজ পড়ার ফজিলত ও গুরুত্ব বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে।
মসজিদে আলোচনা করতে হবে। তাবলিগে আলোচনা করবে, নামাজ শেষ ইমামরা আলোচনা করবে, এভাবে আলোচনা করলে জামাতের গুরুত্ব মানুষের বুঝে আসবে।
ফরজ নামাজে শরিক হওয়ার বিষেয়টি বাস্তবায়নের জন্য কোনো নাম দিয়ে লোক নিয়োগ দেয়া যায়। অথবা নামাজের পর পর গাশত করা যায়। তিনি বলেন, আমরা যখন গ্রামে ছিলাম, সমাজবদ্ধ গ্রাম হওয়ায় আমরা গ্রামের পরিবারদের একটা লিস্ট করে নিতাম। প্রতিদিন আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে যেতাম। মসজিদে তাদের নাম ধরে ধরে ডাকা হতো।
ফজর নামাজে কেউ না আসলে আমরা তার বাড়িতে যেতাম। এতে সে যদি অসুস্থও থাকতো তাহলে তার খোঁজ নেয়া হতো। আবার দেখা যেতো একদিন না আসলেও, পরদিন অবশ্যই মসজিদে আসতো।
একই প্রশ্নের উত্তরে , মুফতি মোহাম্মদুল্লাহ সাদেকী বলেন, ফজরের নামাজে উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ গাফিলতি আর অলসতা হচ্ছে বড় কারণ। জামাতের প্রতি ইহতিরাম সম্মান কম থাকার কারণেও জামাত মিস হয়।
এর থেকে উত্তরণের উপায় হলো- ইমাম খতিব প্রতিটি জুমায় ও নামাজের পর তারা এ বিষয়ে বয়ান করবেন। এছাড়া ইমাম সাহেব একটি লিস্ট তৈরি করবেন। তার মুসল্লিদের মধ্যে অন্য নামাজগুলোতে কতজন মুসল্লি নিয়মিত। ফজর নামাজে কতজন আসছে না। এর একটি তালিকা করে তিনি একটি দাওয়াতি কাফেলা তৈরি করে তাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাবেন। এতে করে ফজর নামাজে উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি।
তাছাড়া নবি কারিম সা. জামাতের যে গুরুত্ব দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম আম্বিয়ায়ে কেরাম জামাতের যে গুরুত্ব দিয়েছেন এগুলোও তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে।
যুবকদের কথা বলতে গেলে তাদের উদাসিনতাই সবচেয়ে বড় কারণ নামাজে উপস্থিত না হওয়া। যারা আসে তারা তাবলিগের সঙ্গে সময় লাগানো। এ ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগতভাবে ইমাম সাহেব তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে তাদের যত্ন-আত্তি করলেই ইমাম সাহেবের কথা শুনতে আগ্রহী হবে তারা। তখন তাদেরকে জামাতের ফজিলত বলতে হবে। বাবা মাকে সন্তানের নামাজ আদায় না করলে কি শাস্তি ভোগ করতে হয় সেগুলো শুনাতে হবে।
মানুষ ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যায় করে গভীর রাতে ঘুমায়, আপনি কি এটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন? এমন প্রশ্নে মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া বলেন, এটা তো বাস্তব একটা সত্য কথা। আজকাল মানুষ প্রযুক্তিতে এ পরিমাণ অসক্ত হয়ে গেছে। অথচ আমাদের মুরব্বিরা এশার পরপরই ঘুমিয়ে যেতেন যেনো ফজর নামাজ জামাতে আদায় করতে পারেন। আমার শায়েখ বোয়ালি হুজুর ছাত্রদের সঙ্গে আছরের পর ভাত খেয়ে নিতেন। যেনো এশার পর সময় নষ্ট না হয়। এশার পরপরই তিনি শুয়ে যেতেন।
মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত সব কাজ শেষ করে নিতেন। তিনি মাদরাসার তালিমাতের দায়িত্বে ছিলেন। তারপরও তিনি সব কাজ থেকে ফারেগ হয়ে বিছানায় চলে যেতেন।
আজকাল জেনারেল মানুষের কথা বাদই দিলাম, মাদরাসার ছাত্ররাও দেখা যায় মোবাইল ইন্টারনেট তথ্য প্রযুক্তির আসক্ত হয়ে পড়ছে।
আজ গোটা মানব জাতি ধ্বংসের মুখে। এ ইন্টারনেট মানুষকে কতটা জঘণ্য করে তুলছে। অসভ্যতা আর বেহাপনায় গোটা জাতি আজ নিমজ্জিত। এর থেকে বাঁচাতে দেশের কর্তারা অবশ্যই এগিয়ে আসবেন বলে আশা রাখি। এমন হতে পারে, রাত এগারোটার পর দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে। সেসসয় যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে তাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। দেশের মানুষকে ধংস থেকে বাঁচাতে এমন কিছু নিয়ম করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
-এটি