শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


বিশ্ববাণিজ্যে শীর্ষে যে ১০ কোম্পানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ আফফান: প্রতি বছরের মতো এ বছরও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবসাভিত্তিক সাময়িকী ফরচুন বিশ্বের বৃহত্তম ৫০০ করপোরেশনের তালিকা প্রকাশ করেছে। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ভিত্তিক ম্যাগাজিন।

এ ম্যাগাজিনটি বার্ষিক প্রতিষ্ঠানের আয় অনুযায়ী করা র‍্যাংকিংয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

ম্যাগাজিনের ২০১৮ সালের তালিকায় থাকা প্রথম ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। গত বছরের মতো এবারও তালিকার শীর্ষ স্থানটি টানা পঞ্চমবারের মতো নিজেদের দখলে রেখেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট।

 ওয়ালমার্ট স্টোরস ইঙ্ক:  ওয়ালমার্ট বলে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দোকান পরিচালনা করে। ওয়ালমার্ট বিশ্বের সর্ববৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া আয়ের দিক থেকেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়।

ওয়ালমার্ট মেক্সিকোতে ওয়ালমেক্স, যুক্তরাজ্যে অ্যাসডা, জাপানে সেইয়ু এবং ভারতে বেস্ট প্রাইস হিসেবে পরিচালিত হয়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা এবং পুয়ের্তো রিকোতেও এর দোকান রয়েছে।

ওয়ালমার্টের বার্ষিক বিক্রয় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক লভ্যাংশ প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্টেট গ্রিড করপোরেশন অব চায়না: এটি স্টেট গ্রিড নামে পরিচিত। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুৎ সেবাদাতা কোম্পানি এবং চীনের বিদ্যুৎ বাজারে একচেটিয়া দখল তাদের।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত করপোরেশনটি বর্তমানে পাঁচটি আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ও ২৪টি ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বছরে তাদের আয় প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ সাল এর ৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৩৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ৩৬৩ দশমিক ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় ছিল।

চায়না পেট্রোকেমিক্যাল করপোরেশন : যা সিনোপ্যাক নামে পরিচিত। তৃতীয় স্থানে রয়েছে এ কোম্পানিটি। এটি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস কোম্পানি।

এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি। ২০০৭ এ সেরা ৫০০টি কোম্পানির মধ্যে এটি প্রথম হয় এর বার্ষিক ১ ট্রিলিয়ন চীনা ইয়েন আয়ের মাধ্যমে।

২০১৪ সাল থেকে কোম্পানিটি বিক্রয়ের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম কেমিক্যাল প্রডিউসার হিসেবে স্থান ধরে রেখেছে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানিটির বার্ষিক আয় প্রায় ৩২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন: সংক্ষেপে সিএনপিসি। এ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে চতুর্থ স্থানে। চীনের বৃহত্তম তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। এর বার্ষিক আয় ৩২৬ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের তুলনায় যা ২৪ শতাংশ বেশি।

২০১৪ সাল থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। সিএনপিসি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের রিজার্ভ। ২০০৭ সালে সিএনপিসির উৎপাদন ছিল ৫৪ বিলিয়ন ঘন মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস।

চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়ামের আজারবাইজান, কানাডা, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ওমান, পেরু, সুদান, নাইজার, থাইল্যান্ড এবং ভেনিজুয়েলাতে ৩০টি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান ও উৎপাদন প্রকল্প রয়েছে।

রয়েল ডাচ শেল: শেল হিসেবে পরিচিত একটি অ্যাংলো-ডাচ বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি। পাঁচে রয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এই কোম্পানি।

শেল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিগুলোর একটি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার কোম্পানি ক্যাপিটাল গবেষণা গ্লোবাল ইনভেস্টরস ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সঙ্গে দ্বিতীয় ব্ল্যাকরক ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশকে ছাড়িয়ে রয়েল ডাচ শেল কোম্পানি এগিয়ে যায়।

শেল ২০১৩ সালে ফরচুন গ্লোবাল ৫০০-এর মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানির তালিকার শীর্ষস্থানে অবস্থান নেয়। এক সময়ে নেদারল্যান্ডসের ৫৫৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন জিডিপির মধ্যে রয়েল ডাচ শেলের ৮৪ শতাংশ সমান রাজস্ব ছিল। ফেব্রুয়ারি ২০১৬-এর হিসাবে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি।

২০১৬ এবং ২০১৭ সালের তালিকায় রয়েল ডাচ শেলের অবস্থান ছিল সাতে। রয়েল ডাচ পেট্রোলিয়াম এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক শেল পরিবহন ও লেনদেনের সংযুক্তির মাধ্যমে কোম্পানিটি গঠন করা হয়। ছয়টি তেল ও গ্যাসের মধ্যে সুপারমেজর হচ্ছে অন্যতম।  বার্ষিক আয় প্রায় ৩১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।

টয়োটা মোটর করপোরেশন: জাপানি গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর করপোরেশন গত বছরের তালিকার পাঁচে ছিল। কিন্তু এ বছর তারা এক ধাপ নিচে নেমে ছয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের বার্ষিক আয় ২৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে টয়োটা মোটর করপোরেশনের জাপানে নিজস্ব ১২টি কারখানা, ১১টি সাবসিডিয়ারি অ্যাফিলিয়েট কারখানা ছাড়াও বিশ্বের ২৬টি দেশে মোট ৫১টি কারখানা রয়েছে। এগুলোতে গড়ে প্রতি বছর ৫৫ লাখ গাড়ি তৈরি হয়।

২০১২ সালের জুলাইয়ে কোম্পানিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটি ২০০ মিলিয়ন যানবাহন প্রস্তুত করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে টয়োটা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৮ আগস্ট।

 ভক্সওয়াগন: গত বছরের তালিকায় এই জার্মান মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগনের অবস্থান ছিল ছয়ে। তবে এ বছর তারা এক ধাপ পিছিয়ে সাতে এসেছে দাঁড়িয়েছে। এর বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ২৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

২০১৬ সালের তুলনায় তাদের বিক্রি বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এ কোম্পানির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির মধ্যে রয়েছে ভক্সওয়াগন, স্ক্যানিয়া, নিওপ্ল্যান, মান, আউডি, স্কোডা, বেন্টলি, পোর্শ ও ল্যাম্বরগিনি। ভক্সওয়াগন বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫০টিরও বেশি মডেল তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে। ১৯৩৭ সালে জার্মানিতে কোম্পানিটি স্থাপিত হয়।

 ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম: যার সংক্ষেপ বিপি। আটে রয়েছে এ কোম্পানিটি। এটি ভার্টিক্যালয় ইন্টিগ্রেটেড কোম্পানি, যা তেল ও গ্যাস শিল্পের সব সেক্টরে অপারেটিং এবং উৎপাদন, পরিশোধন, বিতরণ ও বিপণন, পেট্রোকেমিক্যালস, পাওয়ার জেনারেশন এবং ট্রেডিং নিয়ে কাজ করে।

ব্রিটেনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের তালিকায় ১২তম অবস্থানে ছিল। তাদের বার্ষিক আয় ২৪৫ বিলিয়ন ডলার।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৭০টি দেশে বিপির কার্যক্রম রয়েছে, প্রায় ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে এবং মোট ১৮ দশমিক ৪৪১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রিজার্ভ করেছে। বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ জ্বালানি জায়ান্ট ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের প্রায় ১৮ হাজার ৩শ সার্ভিস স্টেশন রয়েছে।

 এক্সন মোবিল: যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ এ তেল কোম্পানি নয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালের তালিকায় তাদের অবস্থান ছিল দশে। বছরে তাদের আয় প্রায় ২৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০১৬ সালের থেকে তাদের আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক লভ্যাংশ প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব নাম ছিল স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি। ১৮৭০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এক্সন মোবিল পুনর্গঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৪৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৭ সালে এর বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

 বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে: বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ইনকরপোরেটেড রয়েছে তালিকার দশে। ২০১৬ সালের তুলনায় তাদের আয় বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। তাদের বর্তমান আয় প্রায় ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি অনেকগুলো সহযোগী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট বাজারমূল্য প্রায় ৭০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৬ কোম্পানির ২৩ প্রকারের ওষুধ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ