শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মীর হাবীব আল মানজুরের ৩টি কবিতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুর, ধ্বনি ও অজ্ঞতা বিষয়ক ~
মীর হাবীব আল মানজুর

এক নিরেট যাপনছায়া অতঃপর এসে যে সুর ছড়িয়ে গেল
কর্কশে-ঢিমেতালে
পথে পথে দেখা লাস্যের আলস্যে
আমি এক সুরের কথা বলে গেছি এতোদিন।

এতোদিন সে আত্মগত শব্দস্বননে
নিঝুম, নিস্তব্ধ, ধ্যানী হয়ে বসে
কোথাকার ব্যথা-বিধুরতা নিরালাপী বাঁশীতে টেনে

সুর ফুঁকে ফুঁকে যেন গেয়ে গেছি
সঙ্গী হারানো পাখির মৃত্যুকাতর গান।

এক রুক্ষ, নিঃসঙ্গ কাক নিভৃতে কেঁদে গেল,
কোথাকার কোন দূরদেশে দূরবনে

সিংহের হাতে ধৃত জেব্রার অনুলাপ
কেউ জানলো না, জানবে না।

জানবে না শৈশবে দাঁড়িয়ে
কোন যে বৃক্ষের মুখোমুখি
প্রাতিবিম্বিক ছায়া দেখে

এক বিকেল কীভাবে কেঁদেছি আকুলে প্লাবিত হয়ে।

আরো কতো কী যে রয়ে গেছে,
অবলা-অবধূত-অবধ্য হয়ে
জেগে আছি যে আকাশের নিচে

তারাপতনের কোনো বায়ুমন্দ্রন না শুনেই
মৃত্যুর কাছে ক্রমাগত পরাজিত হওয়া হয়ে যাচ্ছে।

ক্রমাগত ধারাপাতী রক্তজ দীর্ঘশ্বাসে শ্বাসে
সুষুম্না বারিত হয়ে লু-হাওয়া বয়ে যাওয়া খরতা

শুনি, অচলিষ্ণুকালের কাছে হাত ও রতির অভিশাপ।

তারপর সুগন্ধি বাতাসেরে বলে,
এক এক করে আরো কতো অবরোহী প্রমিথিউস

মানুষেরে আগুন শেখাবার ভুলে
আবো বহুবার শৃঙ্খলিত হয়ে কোথায় চলে গেছে কে জানে!

বই

বিনিঃশঙ্ক আবিলে জ্বলে ওঠে মুক্তো সব। ব্ল্যাক লেটার সাদা কাগজে। সাজানোই মুক্তোর মতো। মেনে নিই, নেই কোনো প্রাণছাপ, যদিও মানুষের পদছাপে ভরা তাঁর পৃষ্ঠান্তর পৃষ্ঠা । পাতার প্রান্তে হলুদের ছোপছাপ । এ যেন সোপানে উঠবার পথে পায়ে পায়ে লেগে থাকা জুতোর ধূলির আস্তরণ প্রাণের ।

বই, এক অনিঃশেষ অনিকেত প্রাণধারী । যেন মা'র স্নেহালু মায়ার করতল।

ভাব্যিক বিভাবন-অচিন্তন অথবা কোনো দূর কোনো উন্মুক্ত কিবা আবরণী স্থানিকতায় আনয়নকারী।

বই, স্বপ্নে খুশির রণনরেণু মন্দ্রনকারী এক সৌরজাগতাতীত সৌরাকরের বহনপেয়ালা ।

বই, আলোর জলপল্লব।

বই, ক্ষয়িত নীলিমার অসম নিসূদক।

বিশ্বসিতের স্ফুটনোন্মুখ স্ফুটনীয় আবেগে অরণ্যাণীয় ঝিরিঝিরি কাঁপনে অদর্শিত দরোজার-যার অভ্যন্তরে ঐশ্বরিক আলোর ফসফরাস-বিকাশক ।

বই, কাঙালের মাথা উঁচু , অনাবিল,দূর্বিনীত, ধীরোদাত্ত আত্মমর্যাদা।

রক্ত জ্বলে উঠে তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে, মিহিমহিম জলোৎসারের এক নিভৃত বাণী সরোদে বেজে উঠে, দূর্বল হয়ে পড়ি, স্নায়ু ধিমে-ধীরে বিবশ হয়ে আসতে থাকে, তাকে ধরে থাকি অবশ-হ্যাংলা দু'হাতে নেতিয়ে নেতিয়ে।

বই, আমি তাকে ভাষার অক্ষরে অক্ষম সৃজক...

ক্ষমা করবেন পাঠক

চিরকালীন প্রয়াণ

নাগরিক স্বপ্নের নিরব প্রয়াণে আমার এ কিশোরবেলায় অদ্ভুত মতো কী এক বিগলিত পুঁজ যেন, ক্লান্তি ক্লান্তি বিমর্ষতার মতো, সকল সোচ্চার থেকে নির্জন অনুচ্চারে, বইয়ের বিবরে, মাথা নিচুঁ বিবশ মতো, শীতল-স্থির-অস্থৈর্য মতো, মগজে-মননে-মেধায় শ্রান্তি শ্রান্তি বলে অস্ফুট অস্ফুট নড়েচড়ে।

যেন ঘুণপোকা ক্রমাগত খেয়ে যায় ধিমে-দ্রুতে এক এক করে ধর্মের কিংবা ভীতির সমস্ত অঙ্গজ অঙ্গ।

যেন শীৎকারে আবিষ্ট আত্মা কোনো এক না স্বস্তিতে সুখ পাচ্ছে না এ সুখদ নিনাদে।

যেন বিহ্বল মানুষ কোনো অল্প একটু হা মুখে নির্নিমিখ নিস্পন্দ তাকিয়ে ব্যথাতুর অনাকস্মিক আকস্মিকে।

যেন বিপর্যাসে আক্রান্ত আর অপজাতে অবনত হয়েছে সে।

তবু মাঝে মাঝে--মানুষ তো--কোনো সব আকাঙ্খা পুরোনো কিসের এক অবভাস এসে এসে ( হেসে হেসে নাকি?) পাললিক সৌরভে মাতাতে চেয়ে অবসন্নতার অমোঘীয় অবসাদী দরোজা সপাটে খুলে দেয়।

তখন যেন বের হয়ে আসে গুমোট-ভ্যাপসা-অশুভ-অশোধিত-ম্লানি-হলদেটে, দীর্ঘ প্রলয়ী অশোক কিংবা তৈমুরের বিশদ বিশাল বাতাসের সেনাবহর।

ভেসে যেতে যেতে স্বপ্ন, উড়ে যেতে যেতে স্বপ্ন, ছিঁড়ে যেতে থাকা আশাদীপিকা, হেরে যেতে যেতে আকাঙ্খী আকাশ, ঘটে নাগরিক কিশোরস্বপ্নের উত্তরোত্তর উত্তরোত্তর মৃত্যু, অবসিত গুলিবিদ্ধ দেহের আপাত অথবা চিরকালীন প্রয়াণ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ