বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ ।। ১১ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ১ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইরান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে : ট্রাম্প আদর্শ সমাজ গড়তে মাদরাসা অধ্যক্ষদের নেতৃত্ব জরুরি : ইআবি ভিসি নির্বাচনের আগে শাপলা ও জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে: ইসলামাবাদী ফরিদপুর ভাঙ্গা থানায় ব্রীজ থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু  টেলিগ্রামে প্রেম,মাদরাসা ছাত্রীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি, গ্রেপ্তার-১   ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ৬ গবেষণাগার ধ্বংস, অপূরণীয় ক্ষতি সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজনের দাবি জামায়াতের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: তেহরান প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর করার পক্ষে বিএনপি, তবে... বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাচনে সভাপতি রিফাত, সম্পাদক ইনামুল

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শেষ কোথায়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

বিশ্বে এখন আলোচিত রাজনৈতিক সংকট ও মানবিক বিপর্যয় চলছে সিরিয়ায়। প্রতিদিনই
পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ে নারী, শিশুসহ
অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের হতাহত হওয়ার খবর। এক প্রকার ধ্বংস হয়ে গেছে দেশটি।

প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের নির্মম দমন-নিপীড়ন
থেকে শুরু করে দেশটিতে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ পর্যন্ত বহু মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী এ যুদ্ধ।
শোনা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার নানা আয়োজন চলছে।

বাশার আল আসাদকে উৎখাত করা গেলে সেখানে পশ্চিমা অনুচর-মার্কা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে আমেরিকা।

সাত বছর পূর্ণ হয়ে অষ্টম বছরে পড়েছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। সাত বছরের জটিল এ যুদ্ধে ৬ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। নিহতের এক তৃতীয়াংশই বেসমারিক নাগরিক। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গৃহহীন হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ, যা কিনা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক।

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিপক্ষে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে পরে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ এখন নানা পক্ষের জড়িত হওয়ায় জটিল এক সমীকরণে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এ যুদ্ধে আশাতীত সফলতা পাচ্ছে না পশ্চিমা বিশ্ব।

অভিযোগ রয়েছে, সিরিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে অধিকাংশ অর্থ বহন করছে সৌদি আরব ও কাতার। তুরস্ক ও জর্ডান তাদের দেশে বিদ্রোহীদের ট্রেনিং ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করছে। পশ্চিমারা অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে সিরিয়া যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আফরিনে কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়ছে তুরস্কের
সেনারা আবার অন্যদিকে রাজধানী দামেস্কের পাশে পূর্ব ঘৌতায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছে
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত সেনারা।

এতে দুই এলাকাতেই প্রতিদিন সমরাস্ত্রের বলি হচ্ছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। আর এ অবস্থায় ১৫ মার্চ আট বছরে পা ফেলল দেশটিকে ‘ক্ষত-বিক্ষত’ করা গৃহযুদ্ধ। ধারণা করা হচ্ছে, এই গৃহযুদ্ধে জয় শেষমেশ আসাদেরই হবে; কিন্তু তার হাতে থাকবেটা কী? বলা যায়, খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়া বিধ্বস্ত একটি দেশ।

একটু পিছনে ফেরা যাক, স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালের মার্চে সমগ্র আরব ভূখণ্ডে শুরু হয় ‘আরব বসন্ত’। তিউনেশিয়া ও মিসরে আরব বসন্তের সুফল হিসেবে দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এতে বুকে বল পায় সিরিয়ার গণতন্ত্রকামীরা।

একই বছরের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেশটির মুক্তিকামী তরুণরা। আন্দোলনের পেছনে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নিন্দা জানিয়ে রাজধানী দামেস্ক ও দক্ষিণের শহর দারায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে কঠোর হাতে দমন করার চেষ্টা করে সরকার। তবে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।

তারপর জুলাইয়ে আসাদের সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা সেনা কর্মকর্তা কর্নেল রিয়াদ আল আসাদ গঠন করেন তুরস্কভিত্তিক বিদ্রোহী ফ্রি-সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ)। কয়েক মাসের মধ্যে আলেপ্পো ও হোমসসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর নিয়ন্ত্রণে নেয় এই বিদ্রোহীরা।

কয়েক মাসের চেষ্টায় ২০১২ সালের মার্চে শহরগুলো পুনর্দখল করে সরকারি বাহিনী। জুলাইয়ে রাজধানী দামেস্ক দখলের লড়াই শুরু করে বিদ্রোহীরা। কিন্তু এতে ব্যর্থ হয় তারা। ২০১৩ থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অন্য এলাকাগুলোতে বিমান হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী।

এর এক বছর পরই সিরিয়া ও ইরাকে উত্থান ঘটে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের। দেশ দুটির বিশাল একটি অঞ্চল দখলে নিয়ে তারা পৃথক রাষ্ট্র ঘোষণা করে। ২০১৪ সাল থেকে আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বোমা হামলা শুরু করে আন্তর্জাতিক জোট। পরে হেজবুল্লাহ ও আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইল।

২০১৫ সাল নাগাদ সিরিয়া সরকারকে প্রায় উৎখাত করে ফেলেছিল বিদ্রোহীরা। কিন্তু হঠাৎই ওই বছর বাশারের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় রাশিয়া। এই প্রথম সিরিয়া যুদ্ধে বিদেশি হস্তক্ষেপ শুরু হয়। প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। আসাদকে সমর্থন দিতে শুরু করে ইরান, ইরাক ও লেবাননের হেজবুল্লাহ। বিপরীতে তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরব সমর্থন দেয় বিদ্রোহীদের।

‘ধুলামুক্ত ঢাকা চাই’ ক্যাম্পিং শুরু করছে আওয়ার ইসলাম

আর তখন থেকে সিরিয়া কার্যত পরিণত হয় একটি প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে। ২০১৬ সালে আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। এছাড়া কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনটির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আসাদবিরোধীদের অস্ত্র দিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী ও বিরোধীদের মধ্যে সমোঝতা ও যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে শান্তি আলোচনা। ২০১২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের সহায়তায় প্রথম দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। এরপর ২০১৭ সালেও সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা হয়। কিন্তু তা কোনো সুফল বয়ে আনেনি।

২০১৭ সালে মে মাসে কাজাখাস্তানের রাজধানী আস্তানায় তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া বৈঠকে বসে। সেখানে সিরিয়ায় চারটি এলাকা যুদ্ধমুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানানো হয়। ওই এলাকাগুলোর আকাশে রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমান ওড়ার নিষেধাজ্ঞার আহ্বান করা হয়।

সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ার সোচি শহরে সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানায়। তবে ওই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে আসাদবিরোধীরা। সিরিয়ায় যতদ্রুত সম্ভব গৃহযুদ্ধ শেষ হোক। দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

soyedfaizul@gmail.com
১৭.০৩.২০১৮


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ