 আওয়ার ইসলাম: তুরস্ক এখন আইএসের টার্গেটে। কঠিন সময় পার করছে তুরস্ক। দেশটি পররাষ্ট্রনীতিতে মোড় পরিবর্তনের সাথে সাথে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছে ।
আওয়ার ইসলাম: তুরস্ক এখন আইএসের টার্গেটে। কঠিন সময় পার করছে তুরস্ক। দেশটি পররাষ্ট্রনীতিতে মোড় পরিবর্তনের সাথে সাথে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছে ।
সর্বশেষ ইংরেজি নববর্ষের দিন একটি নাইট ক্লাবে হামলায় মারা গেছেন ৩৯ জন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর আগে ইস্তাম্বুলে একটি স্টেডিয়ামের কাছে হামলায় মারা যায় ৩৮ জন।
বিদায়ী বছর দেশটিতে একাধিক আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ নাগরিক ছাড়াও এসব হামলায় বিদেশী নাগরিক, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হতাহত হয়েছেন। এসব হামলার সাথে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ছাড়াও বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি সংগঠনগুলো দায় স্বীকার করেছে।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান দেশের মধ্যে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনেন। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পাশাপাশি সিরিয়া নীতিতে পরিবর্তন আনেন। এর ফল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। যদিও নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
কিন্তু রাশিয়ার সাথে ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্লিপ্ত ভূমিকায় হতাশ এরদোগান রাশিয়া ও ইরানের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে সিরিয়া সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে। তিন দেশের মধ্যস্থতায় সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। যদিও এতে আলোপ্পোসহ সিরিয়ার ওপর আসাদ সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু রাশিয়া-তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠতা মধ্যপ্রাচ্যে ঘটনাপ্রবাহ আগামী দিনে বদলে দিতে পারে।
ওবামা প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি কার্যত ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় রাশিয়ার প্রভাব বাড়বে। ইরানের সাথে রাশিয়ার পুরনো এবং তুরস্কের সাথে কৌশলগত মিত্রতা বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়া অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে।
রাশিয়ার সাথে তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে তুরস্কের ওপর নানা ধরনের চাপ বাড়ছে। তুরস্কে একের পর এক আইএসের হামলার মধ্যে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট এরদোগান দাবি করেছেন, এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেছেন, এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ তাদের হাতে আছে। অপর দিকে, শরণার্থী নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্লিপ্ততার কড়া সমালোচনা করেছেন।
তুরস্কের অভিযোগ, কুর্দি সশস্ত্র সংগঠনগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে অস্ত্র ও অর্থসহ নানাভাবে সমর্থন পেয়ে আসছে। আসলে ওবামা প্রশাসন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে তুরস্ক দ্রুত পররাষ্ট্রনীতিতে এই পরিবর্তন আনে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, তুরস্ক-রাশিয়া সম্পর্কে ফাটল ধরাতে তৎপর হয়ে উঠেছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে হত্যা ছিল এ ধরনের একটি পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু এরদোগান-পুতিনের দূরদর্শী অবস্থান দু’দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলেনি। বরং এ ঘটনার পর সিরিয়া নিয়ে তিন দেশের মধ্যস্থতাবিষয়ক আলোচনা আরো এগিয়ে গেছে। তুরস্ককে চাপে ফেলতে এখন দেশটির অভ্যন্তরে আইএস ও কুর্দি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হামলা আরো বাড়তে পারে।
নতুন বছরে নাইট ক্লাবে হামলার মধ্য দিয়ে হয়তো তার সূচনা হলো। নতুন মিত্র রাশিয়াকে সাথে নিয়ে এরদোগান মধ্যপ্রাচ্য তার প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করলেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্কট কিভাবে কাটিয়ে ওঠেন তা দেখার বিষয়। তবে এরদোগানের শক্তি হচ্ছে দেশটির জনগণ তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ আছে। ব্যর্থ ক্যুর পর এরদোগানের প্রতি জনসমর্থন যেমন বেড়েছে তেমনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বেড়েছে।
ডিএস
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        