শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


‘কওমি মাদরাসার নাম-নিশানাও থাকবে না‘

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

mufti faizullah copyমুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। বিশিষ্ট আলেম, শিক্ষক ও রাজনীতিক। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বিদগ্ধ রাজনীতিক ও আলেম মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর ইন্তেকালের পর তার উত্তরসূরি হিসেবে লাইমলাইটে আসেন মুফতি ফয়জুল্লাহ। মাদরাসার শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সরব রাজনীতিতে। ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব। এছাড়াও ২০১৪ সালের হেফাজত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিলেন তিনি। শিক্ষানীতি বিষয়ে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি দিদার শফিক

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষানীতি ২০১০ এবং খসড়া শিক্ষাআইন ২০১৬ সম্পর্কে আলেম-ওলামা ও বিজ্ঞমহলের নানান আপত্তির কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি কেমন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : শিক্ষানীতি ২০১০ এর লক্ষ্য-উদ্দেশে বলা হয়েছে, এ শিক্ষানীতি এবং এ সিলেবাসের অধীনে যারা লেখাপড়া করবে তারা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এ মতবাদ ও চিন্তাদর্শনের বিরুদ্ধেই মূলত ইসলামের আবির্ভাব ও উত্থান হয়েছে। ইসলাম সবসময় এ মতবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। ইসলাম বলে, ইসলাম সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল। আমি আবার বলছি, ইসলাম সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল কিন্তু শ্রদ্ধাশীল নয়। হতে পারে না। কোনো মুসলমান সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারে না। কেউ যদি সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে সে আর মুসলমান থাকে না। সে ইসলামশূন্য হয়ে যায়। আমি মনে করি, শিক্ষানীতি ২০১০ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এবং এ সিলেবাস এর মূল লক্ষ্যই হল আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন ইসলামশূন্য হয়ে যায়। ইসলামি চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা সব কিছুই যেন তাদের মাথা থেকে বের হয়ে যায়। একটা অনৈসলামিক, ইসলামবিরোধী, ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে যেন তারা গড়ে ওঠে।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষানীতিতে কী কী ত্রুটি আছে বলে মনে করেন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : শিক্ষানীতিতে অসংখ্য ত্রুটি আছে। এখানে সবগুলো বলা সম্ভব নয়। পুরো শিক্ষানীতিটাই ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের জন্য কখনই এ শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন প্রযোজ্য নয়। হতে পারে না। চলতে পারে না।
শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮টি সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক থাকবে। আটটি সাবজেক্টের
মধ্যে কী আছে? বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সমাজ, ইতিহাস, চারুকলা ও ভূগোল। প্রাথমিকশিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হবে। একজন ছাত্র আটটি বিষয় পড়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হলে এবং এ আটটি বিষয় একজন ছাত্র পড়তে থাকলে সে কখনো মাদরাসায় পড়তে পারবে না। আর এ সময়টাই মূলত কুরআন পড়ার সময়। কুরআনের হাফেজ হওয়ার সময়। কেউ যদি কুরআনে হাফেজ হতে চায় বা তার সন্তানকে হাফেজ বানাতে চায় সে তা পারবে না। কুরআনের হিফজ করাটা স্বাভাবিকভাবেই, প্রাকৃতিকভাবেই লোপ পাবে। ধীরে-ধীরে হিফজ করা বন্ধ হয়ে যাবে। আর এটাই পাশ্চাত্যের চাওয়া। ব্রিটিশরাও এটা চেয়েছিল। এ শিক্ষানীতির মাধ্যমে নূরুল ইসলাম নাহিদরা মূলত পূর্বের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন।mufti-foyjullah

দ্বিতীয়ত প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের ১১ নং ধারার ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘নিবন্ধন ব্যতীত কোনো অবস্থাতেই কোনো বেসরকারি বিদ্যালয় বা মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।’ যদি পরিস্থিতি এই হয়, লক্ষ-লক্ষ মসজিদকেন্দ্রিক যে মক্তব-মাদরাসা, গ্রামাঞ্চল অজপাড়াগাঁসহ সর্বত্র মসজিদ-মাদরাসা-মক্তবভিত্তিক সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রাথমিক দীন শিক্ষা দেয়ার যে একটা প্রচেষ্টা আছে তা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। কওমি মাদরাসার তো নাম-নিশানাও থাকবে না।

১৮৫৭ সালে আজাদি আন্দোলনের পর ব্রিটিশরা এ দেশে মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য এবং তাদের ক্ষমতাকে স্থায়িত্ব করতে মুসলমানদের চেতনারোধে একটি গবেষণা চালায়। তিন বছর গবেষণা করে প্রতিবেদন পেশ করে তিনটি কারণে মুসলমানরা সত্যের পক্ষে কথা বলে। ১. কুরআনি শিক্ষা ২. জিহাদি চেতনা ৩. আলেম-ওলামা তথা কওমি মাদরাসা। তাদের এ বাধাগুলো দূর করতে লক্ষ-লক্ষ কুরআন পুড়িয়ে ফেলে। হাজার-হাজার আলেমকে শহিদ করে আর মাদরাসাগুলো বুল্ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বলছেন, খসড়া শিক্ষাআইন ২০১৬ বাস্তবায়িত হলে আগামী প্রজন্ম ইসলামশূন্য হয়ে পড়বে, সেটি কীভাবে?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : ১৯৪৭ সালে ধর্মেও ভিত্তিতেই দেশ ভাগ হয়েছিল। যে অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সে অঞ্চল পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান নামে অখ- ভারত থেকে ভাগ হয়েছিল। আর যে অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সে অঞ্চল ইন্ডিয়া নামে থেকে যায়। যারা ধর্মকে উঠিয়ে দিতে চায় তারা এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে লড়ছে বলে আমি মনে করি। জাতিকে একথা ভাবতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে আমাদের দেশের অখ-তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নির্ভর করে ইসলাম এবং মুসলমান টিকে থাকার ওপর। ইসলাম এবং মুসলমান দুর্বল হয়ে পড়লে এ দেশের স্বাধীনতা, অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। নাস্তিক্যবাদী উগ্র জঙ্গিরা সেটাই চায়।

১৮৫৭ সালে আজাদি আন্দোলনের পর ব্রিটিশরা এ দেশে মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য এবং তাদের ক্ষমতাকে স্থায়িত্ব করতে মুসলমানদের চেতনারোধে একটি গবেষণা চালায়। তিন বছর গবেষণা করে প্রতিবেদন পেশ করে তিনটি কারণে মুসলমানরা সত্যের পক্ষে কথা বলে। ১. কুরআনি শিক্ষা ২. জিহাদি চেতনা ৩. আলেম-ওলামা তথা কওমি মাদরাসা। তাদের এ বাধাগুলো দূর করতে লক্ষ-লক্ষ কুরআন পুড়িয়ে ফেলে। হাজার-হাজার আলেমকে শহিদ করে আর মাদরাসাগুলো বুল্ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়।

আওয়ার ইসলাম : চলমান শিক্ষানীতি আন্দোলনে ঐক্যজোটের কোনো কর্মসূচি আছে?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সাংবাদিক সম্মেলন করেছি, গোলটেবিল করেছি, বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ-মিছিল করেছি। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এ বিষয়ে সারাদেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে। আমরা মনে করি, সরকার এই শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন ও সিলেবাস বাতিল করতে বাধ্য হবে।

আওয়ার ইসলাম :কিন্তু এ শিক্ষানীতি বাতিল না হলে সমাধানের পথ কী হতে পারে?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : আমি মনে করি এখানে, এই ইস্যূতে ঘুমিয়ে থাকবার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সজাগ। যারা ঘুমিয়ে আছে তাদেরও সজাগ করবার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, পুরো বাংলাদেশকে এর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আর বাংলাদেশের মানুষ জানে কীভাবে আন্দোলন সফল করতে হয়। কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ