আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, ফ্যাসিবাদী ও তার দোসরদের বিচার এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ২য় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব সরকারের প্রতি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের এতোগুলো রাজনৈতিক সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন যেনো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলোর মতো এই সরকারও জনতার দাবীর প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করছে। এই সরকার একমাত্র জনতার রক্তমাখা-জীবন উৎসর্গ করা অভিপ্রায়ে গঠিত। ফলে জনতার দাবীর প্রতি ক্রমাগত উপেক্ষা এই সরকারের নৈতিক ও আইনগত বৈধতাকে নষ্ট করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের মহাসচিব আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ইস্যুতে আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান চাওয়া “স্বৈরতন্ত্রের স্থায়ী বিলোপ” পূরণে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় নাই। জুলাই সনদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয় নাই, যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে টানাপোড়েন এখনো শেষ হয় নাই। ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িতদের বিচারে ধীরগতি ও স্বল্পমাত্রা হতাশা তৈরি করেছে। পুলিশের হিসাবমতেই ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িত আটক হওয়া ব্যক্তিদের ৭৩% জামিন পেয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা মহাসমারোহে নির্বাচন করার ঘোষণা দিচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কোন প্রচেষ্টাই দৃশ্যমান না বরং সরকার শীর্ষস্থান থেকে নির্বাচনের আগেই ফলাফল নিয়ে বার্তা দেয়ার একধরণের নগ্ন প্রচেষ্টা দেখা গেলো জাতিসংঘের বৈঠক যাত্রায়।
এমন বাস্তবতায় আজকের এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা যারা এসেছেন তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শাহাদাত বরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি।
যুগপৎ আন্দোলনের দাবীসমূহের পুনরুল্লেখ করে অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, আমাদের দাবিসমূহ হলো-
১) জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
২) নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪) গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।
৫) বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
এসব দাবী আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দফায় আমরা গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরসমূহে বিক্ষোভ হয়েছে এবং গত ২৬ সেপ্টেম্বর সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও থানা শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন জোনভিত্তিক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা প্রচার পত্র বিলি করাসহ মিডিয়াতে বিভিন্ন টকশোর মাধ্যমে আমাদের দাবী ও তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচিতে জনতার ব্যাপক সাড়া পাওয়ার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, আমরা জনতার প্রতি কৃতজ্ঞ। কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণে আমরা আপ্লুত। আমরা দেশের মানুষ, সাংবাদিকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা আমাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নানাভাবে সহায়তা করেছেন। কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া ও উৎসাহী অংশগ্রহণ আমাদেরকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ এবং সংস্কার-বিচার নিয়ে তাদের হতাশা আমাদেরকে আরো দায়বদ্ধ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া আহত ও নিহতদের পরিবারের কান্না আমাদেরকে উদ্দীপ্ত করেছে।
যুগপৎ আন্দোলনের ২য় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি জানান, ৫ দফা দাবী আদায়ে আন্দোলনের ২য় ধাপে আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে-
১) পহেলা অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ
২) ১০ অক্টোরব’২৫ ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে গণমিছিল
৩) ১২ অক্টোবর’২৫ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান
দেশের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা উৎসবের কারণে প্রথম দিকে রাজপথে কোন কর্মসূচি রাখা হয় নাই।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এবিএম জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মুফতী মোস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ।
এনএইচ/