মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫ ।। ১১ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭


প্রথমে আমাকে ‘ফজু পাগলা’ বলেছে মুফতি আমির হামজা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, আমার ‘ফজু পাগলা’ নাম প্রথমে বলেছে মুফতি আমির হামজা নামে একজন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও বলছে আমি নাকি ‘ফজু পাগলা’।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন

রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। এ সময় তার স্ত্রী ও ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

দেশের স্বাধীনতার জন্য ৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে দেশবাসীর উদ্দেশে ফজলুর রহমান প্রশ্ন করেছেন, এই দেশে তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি না। বিশ্বজুড়ে ঘৃণিত ‘মব জাস্টিস’ তার ওপর চলতে পারে কি না। এগুলোর উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে এসবের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে গত রোববার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। এরপর মধ্যরাত থেকে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফজলুর রহমানের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন একদল ব্যক্তি।

এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলুর রহমান সোমবার আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

নিজের ও স্ত্রী–সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হে বাংলাদেশের মানুষ, আমি তো আজ থেকে ৫৪ বছর আগে আপনাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। আজকে যে সন্তানেরা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, তোমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। তোমাদের কাছ থেকে কি অপমৃত্যুটা আমার কাম্য?’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘যদি আমার কোনো কথায় তোমরা মনে করো, আমি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলছি বা তোমাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছি, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমাকে গ্রেফতার করো, আমাকে শাস্তি দাও। কিন্তু আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বাসা পর্যন্ত মব সৃষ্টি করো গিয়া, যেটা গত এক বছর যাবৎ বাংলাদেশে, এই পৃথিবীতে এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে কুখ্যাত নাম মব, সেই মব জাস্টিস আমার ওপর চলতে পারে কি না এবং চলবে কি না, সেটা আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।…আমি একজন মানুষ। আমার অধিকার আছে বেঁচে থাকার।

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জিডি করব না, মাইরা ফেললেও… জিডি–টিডি কিছুই করব না।

সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রধান কাজ হলো, রাজনীতি করা। আর নিজের জীবন–জীবিকা নির্বাহের জন্য আমি ওকালিত করি।…গতকালকে একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি পাঁচটার দিকে শুনতে পেলাম যে আমাকে দল একটা শোকজ নোটিশ দিয়েছে। রাত নয়টায় দলের একটা কাগজও পেলাম।…দেখলাম, আমার নামে দল কিছু কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার জন্য শোকজ নোটিশ করেছে, উত্তর দেওয়ার জন্য। এটা খুবই একটা স্বাভাবিক ঘটনা।

তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক দলের একজন কর্মীর প্রতি তার দল যদি মনে করে, কর্মীর বোধ হয় কিছু ক্রটি–বিচ্যুতি আছে, তাকে শোকজ করতেই পারে। আমাকেও করেছে। নির্দিষ্টভাবেই আমি বলতে চাই, আমি তার উত্তর দলকে দেব। দল যা জানতে চায়, তা–ও আমি বলব। তারপরে দল আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন পর্যন্ত কিন্তু আমি দলের মধ্যেই আছি, এখন পর্যন্ত আমি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।’

শোকজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো লিঙ্ক (যোগসূত্র) খুঁজে পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ‘শোকজের সঙ্গে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছি, এটি এখনো বলব না। তবে তারা আগে থেকে অনেক মানুষের…আমি তো ফজলুর রহমান, সামান্য মানুষ; কত মহান মানুষের গালে তারা জুতা মারছে।…আমার কথা হলো জুতা মারে, কথা বলে, সেটা তো বলবেই। তাদের ব্যাপারে মানুষ বিচার করবে। কিন্তু আমার বাসার সামনে গিয়া আমাকে হত্যা করার জন্য বা আমার মৌলিক অধিকারকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য; কথাটা জাতির সামনে জানিয়ে গেলাম। তারা আমাকে জুতা মারবে না মিছিল করবে, এটা করুক গিয়ে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকলে তারা গিয়া মামলা করুক আমার বিরুদ্ধে।’

মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে বলেছি, বলব

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, ‘ছেলেরা বা ছাত্ররা যদি মনে করে, অন্য দলের লোকেরা যদি মনে করে, আমি জামায়াতশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোকজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, এটা আমি বলব। এতে যদি কোনো ধরনের আমার কথার মধ্যে কারও প্রতি অসম্মান করে থাকি, আঘাত করে থাকি, তারা মনে করে, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে এটার জবাব দেবে, আমি তাদের জবাব দেব। এটার জন্য তো পরস্পরকে হত্যা করার ব্যাপার নাই। বাসার সামনে মব করার তো দরকার নাই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে (সোমবার) হঠাৎ করে সকালে যেটি দুর্ভাগ্যজনক, আমার বাসার সামনে কিছু মিছিলের শব্দ পাইলাম। সেই শব্দগুলো বলাটাও আমার কাছে মনে হইল, কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আমার সন্তানের সমান। এরা কারা, আমি চিনিও না। এরা স্লোগান আমার নামে দিল, ফজু পাগলাকে গ্রেফতার করো...ইত্যাদি ইত্যাদি। ফজু পাগলা মানে আমি বাংলাদেশে এখন ফজু পাগলা হয়ে গেছি।

এই নামটা আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী—আমি নাকি ফজু পাগলা। প্রথম এই কথাটা বলেছে, মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।…এই ছেলেপেলেরাও আমার নামে ফজু পাগলা স্লোগান দিয়েছে, আমি বাংলাদেশের একজন পাগলা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। আমাকে মারতে চায়, তারা আমার বাসার সামনে যেভাবে গিয়ে মব সৃষ্টি করেছে... আমি দেখছি, গত এক বছর ধরে ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের কিছু সন্তান মব সৃষ্টি করে তাদের দাবি-দাওয়া বলেন, আর যা–ই বলেন, আদায় করতে চায়।…কিন্তু আমার মতো একজন সিনিয়র মানুষ যে দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমি যুদ্ধ না করলে বা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ না করলে এই সন্তানেরা তো বাংলাদেশের সন্তান হইত না, এরা হইত পাকিস্তানের সন্তান।

অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি লজ্জাজনক

ফজলুর রহমান বলেন, ‘মৃত্যুকে আমি কোনো দিন ভয় করি না। কিন্তু অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি লজ্জাজনক। মনে হচ্ছে, দেশ–বিদেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যারা ইউটিউবার এবং যারা তাদের পক্ষে সাংবাদিকতা করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে দেশ–বিদেশে থেকে বেশ কয়েক দিন ধরে প্রথম বলছে, ফজলুর রহমানকে মব জাস্টিস করো, তার ওপর মব জাস্টিস এখন প্রযোজ্য।…ফ্রান্স থেকে দুজন সাংবাদিক বলেছে, তাকে হত্যা করাই দরকার।…জামায়াতের একজন ইউটিউবার বলেছে, ফজলু পাগলাকে জবাই করেই হত্যা করতে হবে। এই যে অবস্থা, এই অবস্থাটা জানানোর জন্য আমি আপনাদের কাছে এসেছি। তার রেজাল্ট দেখছি, আমার বাড়ির সামনে সাত–আট বা নয়জন ছেলেমেয়ে, তারা কারা, কোন দলের; আমি চিনি না।

আমার বাঁচার অধিকার এ দেশে আছে

এই যে অবস্থা, এই অবস্থাতে আমি তো বাংলাদেশের একজন নাগরিক; আমার তো বাঁচার অধিকার আছে’ উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি হাত জোড় করে জানাব, আমি একজন মানুষ। আমি হাত জোড় করে আপনাদের কাছে, জনগণের কাছে বলতে চাই, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাঁচার অধিকার এ দেশে আছে, এটা আমি মনে করি। এটা আপনারা মনে করেন কি না? কিন্তু আপনারা কি মনে করেন, এভাবে আমাকে হত্যা করলে পরে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের যে অবস্থা, সে অবস্থাটা কি এ রকমই থাকবে? আমাকে হত্যা করা উচিত বলেই কি আপনারা মনে করেন? আমাকে হত্যা করার জন্য যারা আসল, আমি তাদের চিনি না, জানি না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নাই। তাদের সঙ্গে আমার শত্রুতাও নাই। আমার কোনো মিত্রতাও নাই।

আমি একা একা দেশে চলতে পারব না?

সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জনগণকে আবারও প্রশ্ন করতে চাই, এ দেশে আমার বাঁচার অধিকার আছে কি না? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগোযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি শুনেছি আর্মিও এসেছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পুলিশ আর আর্মি আসাই কি আমার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে খুব সম্মানজনক ব্যাপার। যারা আমাকে বাঁচাইতে চাবে যে পুলিশ–আর্মি গার্ড করবে, আমি একা একা দেশে চলতে পারবো না?’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।…আমি একজন মানুষ। আমার অধিকার আছে বেঁচে থাকার। সূত্র-Logo

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ