জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুধবার (২ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান দেশের প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ও নেতৃত্বে হয় নাই। এমনকি অনেক দল এই অভ্যুত্থানের সাথে প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পৃক্ততা পর্যন্ত অস্বীকার করেছে। জুলাই অভ্যুত্থান ছিল ছাত্রদের শুরু করা একটি আন্দোলন যেখানে গণমানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে এবং একটা পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত হয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এই আন্দোলন বিগত পনের বছর ধরে চলা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না। বরং জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের রন্দ্রে রন্দ্রে জেঁকে বসা অনিয়মকে দুর করা, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবং দেশ থেকে চিরতরে স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করা। যে তরুণরা অকাতরে জীবন দিয়েছে তাদের অধিকাংশই প্রচলিত রাজনীতি করতো না। কারণ তারা প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অপছন্দ করতো। তাদের আত্মত্যাগ প্রচলিত রাজনৈতি সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও একটি বিক্ষোভ ছিল।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, আজ জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির এই ক্ষণে দাঁড়িয়ে বেদনা ও দায় অনুভব করছি। জুলাই ঘোষণা এখনো দেওয়া যায় নাই, রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক জায়গায় একমত হওয়া যায় নাই, বিচার নিশ্চিত করা যায় নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা প্রকট হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি এখনো চলমান। চাঁদার দাবিতে রাতভর নির্যাতন করা, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো বর্বরতা এখনো বিদ্যমান। অথচ নির্বাচন নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচারের দাবিকে আড়াল করে দেওয়া হয়েছে। যে চাওয়া নিয়ে আমাদের তরুণরা গত জুলাইয়ে প্রাণ দিয়েছে এক বছর পরে এসে মনে হচ্ছে তাদের চাওয়া হতে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যে উদ্দীপনা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল এখন তাতে ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে লন্ডন বৈঠকের পরে সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তারা একমত না হলে সেই প্রস্তাব আর অগ্রসর হচ্ছে না। পিআরের মতো একটি বিষয় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কেবল একটা দলের জন্য বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অথচ স্বৈরতন্ত্র রোধে পিআর একটি পরীক্ষিত ও উত্তম পদ্ধতি। অন্তবর্তী সরকারকে তার প্রতিজ্ঞা ও দায় পূরণে অবিচল ও কঠোর হতে হবে। স্বৈরতন্ত্রের রাস্তা খোলা রেখে কারো চাপে যদি এই সরকার নির্বাচন আয়োজন করে তাহলে ইতিহাসে তারা চির অপরাধী হয়ে থাকবে। কারণ জুলাই রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহাসুযোগ তৈরি করেছে তা জাতীর জীবনে পুনরাবৃত্তি হবে এমন আশা করা যায় না।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুষ্ঠু ও সুন্দর হতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে শক্তিশালী হতে হবে। এরপরে নির্বাচন নিয়ে কথা বলা যাবে। রাষ্ট্রকে ভঙ্গুর করে কোনো দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য যেনতেন নির্বাচন আয়োজন করা হলে তার পরিণতি ভালো হবে না।
এমএইচ/