ক্রিকেটার তানজিম সাকিব। সম্প্রতি আলোচনায় আসেন এক বছর আগে তাঁর করা নারীদের নিয়ে একটি পোস্টের কারণে। এর জের ধরে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এমনকি বিষ্যটি খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। তবে সাকিব বিসিবিকে জানিয়েছেন, তিনি মোটেও নারীবিদ্বেষী নন। এমনকি কাউকে আঘাত করার জন্য সেই পোস্ট দেননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বিসিবির তরফেও এই ক্রিকেটারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। আজ (মঙ্গলবার) মিরপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিবির এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এরই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমকে আজ জালাল ইউনুস বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মিডিয়া কমিটি থেকেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা অবগত করেছিলাম, যেসব পোস্ট ফেসবুকে এসেছে...। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য হচ্ছে- কাউকে আঘাত করার উদ্দেশে এরকম পোস্ট দেওয়ার কথা না। সে যেসব পোস্ট দিয়েছে, তার নিজ থেকেই দিয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে না। এটা দেওয়ার পর কারও আঘাত যদি লেগে থাকে, সেজন্য সে দুঃখিত।’
‘সে বলেছে আমি দুঃখিত। আমরা সতর্ক করেছি ভবিষ্যতে যেন এমন পোস্ট না দেওয়া হয়। সে বলেছে এ ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকবে। সে যেহেতু ভুল স্বীকার করেছে। সে একটা বড় কথা বলেছে- সে নারী বিদ্বেষী নয়। সে বলেছে আমার মাই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারী বিদ্বেষী হতে পারি। (সে কোনো ধ্যানধারণার অনুসারী, তার মানসিকতা কেমন) অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করব।’--যোগ করেন ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান।
ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জালাল বলেন, ‘তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারাও আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে তরুণ ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও ওরকম কিছু যদি থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকদিন ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েক বছর আগে দেয়া সাকিবের বেশ কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট। ২০ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটারের পোস্ট নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
গত বছর দেয়া একটি পোস্টে সাকিব লিখেছিলেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’
এছাড়াও, আরও একটি পোস্টে সাকিব বলেন, ‘ভার্সিটির ফ্রি মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যাই হোক, নিজের সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীলা মা দিতে পারবেন না।’
সাকিবের এসব পোস্ট নিয়ে ভক্ত-সমর্থক সহ সকলের মাঝেই শুরু হয় আলোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় তর্ক বিতর্ক। পরে গতকাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস।
এর আগে গণমাধ্যমকে তানজিম সাকিব বলেন, ‘আল্লাহ তো কুরআনে বলেই দিয়েছেন আমি জিন এবং মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার এবাদতের জন্য। ক্রিকেট আমার পেশা, আমি এখান থেকে ইনকাম করি। আমার তো মেইন জীবনটা অফলাইনের জীবন। মৃত্যুকে সকলেরই মোকাবিলা করা লাগবে। কখন কে মারা যাবে, কেউ কিছু জানে না। আমি পরকালে সফল হতে না পারলে তো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই থেকে যাব। সুতরাং সেই হিসেব করে আমি ইসলামকে মেনে চলার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি সবসময় ইসলামের মধ্যে থাকার জন্য। আর এই জিনিসটি আমাকে খেলার মধ্যেও অনেক সাহায্য করে।’
বাংলাদেশের তরুণ এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘ইসলাম আমাকে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে সাহায্য করে। তাতে মানসিকভাবে আমি শক্ত থাকতে পারি। আমার মানসিকতা অন্যদিকে যায় না। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের মানসিকতা ধরে রাখতে পারি। সুতরাং এটি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত- দুইদিক থেকেই সাহায্য করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সতীর্থরা আমার এই বিষয়টা খুবই পজিটিভলি নেয়। যখন তারা কোনো জিনিস না বুঝে, বা ইসলামী কোনো একটা জিনিস জানার চেষ্টা করে তখন আমাদের দুজনের কাছেই আসে (সতীর্থ মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় ও তানজিম সাকিব)। সেই বিষয়গুলো আমাদের জানা না থাকলে আমরা জেনে তাদের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি।’