||রশীদ জামীল||
এনসিপির প্রথম ভুলটা ছিল, এনসিপি নামক রাজনৈতিক দল গঠন করা। এতো জলদি রাজনীতিতে না নেমে তাদের উচিত ছিল একটি ছায়া সরকারের ভূমিকায় থাকা। তাহলে তারা সাধারণ মানুষের মাথার মুকুট হয়ে থাকতো। রাজনীতি করবার জন্য সারা জীবন তো পড়েই ছিল।
তাদের দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, জুলাইকে কুক্ষিগত করা— ঠিক যেমনটি বলতো আমার ভাই ও/স/মা/ন হা/দি। তারা কয়েকজনই শুধু জুলাইকে ওউন করে। জুলাই মানেই এনসিপি— এই মনোভাব তাদেরকে মানুষ থেকে কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
তাদের তৃতীয় ভুল হচ্ছে, জুলাই শ/হি/দ এবং আহতদের নিয়ে তাদের যতটা সরব থাকা উচিত ছিল— তারা থাকেনি। তাদের ডাকে বাংলাদেশের নারী, পুরুষ, শিশু কিশোর সবাই রাস্তায় নেমে এলো। দেড় হাজারের অধিক মানুষ জীবন দিলো। ত্রিশ হাজারের বেশি মানুশ তাদের হাত পা চোখ হারিতে পঙ্গু হলো। তাদের নিয়ে কার্যত কোনো উদ্যোগ এনসিপির ছিল না।
তাদের চতুর্থ ভুল হলো, জুলাই স্পিরিটকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে ফেলা। মানুষ এটা পছন্দ করেনি। যে কারণে এখন আর তাদের সভায় মানুষ হয় না। জুলাইকে পূঁজি করে নির্বাচনী ফায়দা হাসিলের সস্তা রাজনীতি করার ব্যাপারটি মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। নির্বাচনী দর কষাকষির বাজারে নিজেদেরকে রাজনৈতিক পণ্য বানিয়ে তারা তাদের অবস্থানটাকে বাজারি করে ফেলেছিল।
পঞ্চম ভুলটা কি এনসিপি করতে যাচ্ছে? তারা কি জানে, এটাই তাদের শেষ ভুল করা হবে? কারণ, এর পরে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুরোটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। অবশ্য, ইতঃমধ্যেই সেটা হয়েই গেছে কি না— কে জানে।
এনসিপি কি সত্যি সত্যি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে গিয়ে প্রমাণ করবে, নতুন বন্দবস্তের স্লোগান দিলেও তারাও মূলত নতুন বোতলে সেই পুরনো মালই। তারা কি বুঝতে পারছে, বিএনপি জোট, জামায়াত জোট, যে জোটের সাথেই যাক, তাদের রাজনৈতিক মৃত্যুটাই অনিবার্য।
এনসিপির উচিত ছিল হাদিকে ফলো করা। কারও দরজায় ধরনা না দিয়ে কীভাবে মানুষের মন জয় করা যায়, কীভাবে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠার দখল নেওয়া যায়, হাদি কি এটা দেখিয়ে দিয়ে যায়নি? সে কি বুক ফুলিয়ে বলেনি, কোনো দল বা জোটে যাবার প্রশ্নই আসে না। আমি স্বতন্ত্র পার্থী হিশেবেই লড়াই করব। বিনা পয়সায় যদি ৫শ ভোটও পাই, তা-ও ভালো।
হাদি পারলে এনসিপি কেন পারছে না? এমপি হতেই হবে কেন? তারা যদি এই নির্বাচনে সারা দেশে নিজেদের মতো করে অংশগ্রহণ করতো, একজনও যদি পাশ না করতো, তাতেও তারা বিজয়ী হতো। মানুষের কাছে তাদের নৈতিক দৃঢ়তার ম্যাসেজটা পৌঁছে যেত। পাঁচ বছর রাজপথের বিরোধীদল হয়ে মানুষের পাশে থাকতো। তাহলে পরের নির্বাচনে তারাই হয়ে উঠত মূল ফ্যাক্টর।
এনসিপি কি সত্যিই ভোটের রাজনীতিতে জোটে যাবে? শেষ পর্যন্ত তারা কি রাজনৈতিক আত্মহত্যার পথটাই বেছে নেবে?
লেখক: বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও কথাশিল্পী
এনএইচ/