শায়খ মাহমুদুল হাসান
শক্তিমান এক প্রশ্ন। গায়ে মেখে লুকিয়ে থাকা ঈমানের সুপ্ত আভা বের করে আনার মতো মজবুত হাতুড়ি। বিবেকের দরজায় কড় নাড়ার শব্দপুঞ্জ এটি।
ফজর হলো- একজন বিশ্বাসীর জন্য প্রথম পরীক্ষা। যে প্রভু আমাকে সুস্থ রেখেছেন, একটি নতুন দিন নতুন উপহার হিসেবে দিয়েছেন— সে প্রভুর মায়াবী আহ্বান ‘হাইয়া আলাস-সালাহ’ কী করে আমি বেমালুম উপেক্ষা করব?! বিছানার উষ্ণতা, শীতের সকালে উত্তাপ ছেড়ে আমার রবের তীব্র ভালোবাসা যখন আমাকে টেনে তাঁর ঘরের দিকে নিয়ে যায়; তখন আমি তৃপ্ত কণ্ঠে বলে উঠি— ‘ওয়াও’ আমি পাশ করেছি। অলসতার শত্রুকে আমি পরাজিত করতে পেরেছি, আমি সত্যই বীর।
কয়েক মিলিয়ন মানুষ রাতের ঘুমে পৃথিবীজুড়ে প্রতি বছর মৃত্যু বরণ করে। অথচ আমি আজ জাগতে পেরেছি, হাত-পা সচল রয়েছে; দিনের শুরুতে কত বড় উপহার আমার হাতে তুলে দেওয়া হলো— আর যে দিলেন, তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ হব না?
* * *
আমরা ইংল্যান্ডে ‘ফজর চ্যালেঞ্জ’ বা ‘ফজর ক্লাব’ নামে সমাজ ও নতুন প্রজন্মকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করছি। ফজর জামাত ও পরবর্তী নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রচেষ্টা সাড়া ফেলছে। আশা করি, আমাদের দেশেও ফজরকে আনন্দমুখর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফজরে মসজিদগুলো উপচেপড়া ভীড়ে মুখরিত করা গেলে উম্মাহ জেগে উঠবে। সংকটের ঘনঘটা কেটে উম্মাহর জন্য সাফল্যের ভোর ফুটে উঠবে। বিদ্রোহী কবির শব্দে—
`আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে,
তোমার ছেলে উঠলে গো মা
রাত পোহাবে তবে।’
* * *
প্রতিদিন ভোরে আলস্য ফিসফিস করে বলে— ‘হয়নি সকাল, ঘুমোও এখন’। তখন আলস্যের বিপক্ষে প্রত্যাখান হওয়া উচিত— ‘হয়নি সকাল, তাই বলে কি সকাল হবে নাকো! আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে?’
যারা ফজরে যাব যাব করে দিনের পর দিন পার করছি, তারা আড়মোড় ভেঙে নিজেকে টেনে তলুন, নিয়ে যান প্রভাতের স্নিগ্ধতায় মসজিদের আঙিনায়।
আমরা চাই— যুবকেরা জেগে উঠবে, মা-বাবারা মমতার পরশ দিয়ে সন্তানদের জাগিয়ে দেবেন। আর আপনারা ফজর পড়তে আগ্রহী হতে কচিদের পুরস্কার দেবেন— সপ্তাহে ও মাসে। মসজিদগুলোতেও ফজরে আসা শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে— অন্তত কিছু চকলেট।
আসুন, প্রভাতের ঈমানি মিছিলে আমরা শরিক হই।
লেখক: এসেক্স জামে মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাকাডেমি, ইংল্যান্ড
এনএইচ/