রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর কারণ জানতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সোমবার (৪ আগস্ট) আদালত লাশ উত্তোলনের এ আদেশ দেন। কিন্তু আদেশের কপি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এতে বুধবার লাশ উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে
সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) জসিম উদ্দিন খান বলেন, লাশ উত্তোলনের জন্য সিআইডির সব ধরণের প্রস্তুতি ছিল। শেষ মূহুর্তে আদেশ পেতে দেরি হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার (আজ) থেকে উত্তোলন শুরু হবে।
তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, রায়েরবাজার গণকবরে জুলাই ও আগস্টে যেসব অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করা হয়, সেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়।
একনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিআইডির ফরেনসিক টিম ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন ও ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে আজ থেকে।
২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, এখানে ১০০ জনের ওপরে দাফন করা হয়েছে। তাদের অনেককে শনাক্ত করা যায়নি। খুব তাড়াতাড়ি তাদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। এতদিন স্বজনদের অনেকেই লাশ কবর থেকে ওঠানো নিয়ে রাজি ছিলেন না। এখন তারা রাজি হয়েছেন।
পুলিশের করা এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সময় নিহত ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। আদালতের অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম লাশ উত্তোলন চেয়ে এ আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শহীদ হন করেন। তাদের মধ্যে ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদকে অশনাক্তকৃত হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার কররস্থানে দাফন করা হয়। ভবিষ্যতে আইনতগত পদক্ষেপ ও শহীদদের মৃতদেহ শনাক্তের জন্য লাশ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কবর হতে তোলা প্রয়োজন। এসব লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, মৃতদেহের ডিএনএ সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া আইনি কার্যক্রম শেষে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতকরণের পর পরিবারের চাহিদা মোতাবেক হস্তান্তর বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বিচারক আবেদনসহ নথি পর্যালোচনা আবেদনটি মঞ্জুর করেন। সেইসঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন।
এমএম/