বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ ।। ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :

দুদকের রেকর্ড সাফল্য: ৮ মাসে ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত আট মাসে একটি বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে, যা দেশের ইতিহাসে নতুন একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই সময়ে দুর্নীতিবাজদের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, সরকারি অর্থ লোপাটকারী এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত আট মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন ব্যক্তির এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সম্পদ জব্দ করেছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন রেহানা সিদ্দিকের পরিবারের সদস্যরা এই তালিকায় রয়েছেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী, এমপি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও নাম রয়েছে। এছাড়া, শিকদার গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সালমান এফ রহমানসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি জড়িত। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের নামও রয়েছে।

দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত আট মাসে দেশের ভেতরে ১২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে, আর ৭৭৩ কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দেশের বাইরে ১২০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক এবং ৪৫ কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তবে, এবার দেশের ভেতরে এবং বাইরে যে পরিমাণ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, তা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৪ সালের পুরো বছরে মাত্র ৩৬১ কোটি টাকা সম্পদ জব্দ হয়েছিল, অথচ মাত্র আট মাসে এই পরিমাণের তুলনায় প্রায় ৩৬ গুণ বেশি সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

এছাড়া, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের কাছে যে সম্পদগুলি জব্দ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ১৯১ একর জমি, ৫৮২টি ফ্ল্যাট, ২৮টি বাড়ি, ৩৮টি ফ্ল্যাট, ১৫টি প্লট, ২৩টি গাড়ি, ২৩টি কোম্পানি, তিনটি কোম্পানি ও তিনটি জাহাজসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার। ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৮৮ হাজার ডলার, ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ ইউরো, ৬৬০ গ্রাম সোনা, এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের বিপুল পরিমাণ টাকা, যার পরিমাণ ৮১৭ কোটি টাকার বেশি।

২০১৯ সাল থেকে শুরু করে, দুদক এই ধরনের কার্যক্রমে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অধীনে এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। গত আট মাসে ক্রোক ও অবরুদ্ধ সম্পদের পরিমাণ বিপুল হলেও, এটি কেবলই একটি শুরু। এখন পর্যন্ত এত কম সময়ে এত বিপুল সম্পদ জব্দ করা হয়নি, যা গত এক বছরের অর্জন হিসেবে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, “গত আট মাসে সম্পদ জব্দের এই পরিমাণ নিঃসন্দেহে বিপুল। এত কম সময়ে এত পরিমাণ সম্পদ জব্দ করার রেকর্ড এর আগে কখনো হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতির প্রমাণ, এবং এই ধরনের পদক্ষেপ আগামীতে আরও জোরদার হবে।”

দুদক জানায়, এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে, যারা অবৈধভাবে অর্থপাচার ও সরকারি সম্পদ লোপাট করছে।

 এই ব্যাপক সাফল্য দেশের জনগণের মধ্যে এক ধরনের আশার আলো দেখিয়েছে। জনগণ মনে করছে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশ থেকে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে এবং মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাগরণ তৈরি হবে। তবে, এসব পদক্ষেপের কার্যকর প্রয়োগ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর না ঘটে।

এছাড়া, দুদক জানিয়েছে যে, যদি আদালতের কোনো বিশেষ নির্দেশনা না থাকে, তবে তাদের ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মাধ্যমে এসব সম্পদের দেখভাল করা হবে। এই ইউনিটের কাজ হলো ক্রোক এবং অবরুদ্ধ করা সম্পদগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে এগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হয় এবং যাতে কোন ধরনের অপব্যবহার না ঘটে।

সম্প্রতি দুই হাজার কোটিরও বেশি সম্পত্তি জব্দ করার পাশাপাশি, আগামী দিনগুলোতে আরো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ