বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২১ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যৌন হয়রানি: নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বাংলাদেশে প্রতিদিন অসংখ্য নারী—কর্মজীবী, শিক্ষার্থী কিংবা গৃহিণী—অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় বা বাজারে যাতায়াত করেন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। বাস, রিকশা, সিএনজি, ট্রেন বা লঞ্চ—সবখানেই এখন নারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে বেড়েছে নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং যৌন হয়রানির ঝুঁকি, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে শহুরে ব্যস্ত জীবনে নারীদের জন্য দৈনন্দিন যাতায়াত যেন এক বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু সচেতনতা ও প্রস্তুতি নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

যাত্রার আগে পরিকল্পনা করুন: যাত্রার আগে গন্তব্য, রুট ও পরিবহন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন।
কোন বাস বা পরিবহনে উঠবেন, কোথায় নামবেন—আগেই নির্ধারণ করে রাখলে বিভ্রান্তি ও বিপদের সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বের হলে পরিচিত ও নিরাপদ রুট বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

বিশ্বস্ত পরিবহন বেছে নিন: ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে এখন নারী-বান্ধব বাস সার্ভিস, রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ (যেমন উবার, পাঠাও) এবং নারী চালক-নির্ভর পরিবহন সুবিধা রয়েছে।
এগুলো ব্যবহার করলে নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হয়।
রিকশা বা সিএনজিতে উঠলে চালকের নাম ও নম্বর খেয়াল করুন এবং প্রয়োজনে পরিবারের কাউকে জানিয়ে দিন।

সিট বেছে নিন সচেতনভাবে: বাসে উঠলে সবসময় সামনের দিকে বা নারী নির্ধারিত সিটে বসুন।
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়াতে হলে ব্যাগ বা ফোন শরীরের সামনে রাখুন, যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে স্পর্শ করতে না পারে।
সম্ভব হলে রাতে একা যাত্রা এড়িয়ে চলুন।

জরুরি নম্বর ও নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করুন: মোবাইলে ‘৯৯৯’, নিকটস্থ থানার নম্বর ও পরিবারের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণ করুন।
প্রয়োজনে “Narir Nirapotta” বা “Trust Circle”–এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন—যেগুলো এক ক্লিকেই আপনার অবস্থান পরিবারের সদস্যদের জানাতে সক্ষম।

আত্মবিশ্বাসী থাকুন ও প্রতিবাদ করুন: কেউ অস্বস্তিকর আচরণ করলে চুপ না থেকে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করুন।
আত্মবিশ্বাসী শরীরী ভাষা ও কড়া প্রতিক্রিয়া অনেক সময় সম্ভাব্য হেনস্তাকারীকে নিরুৎসাহিত করে।
স্মরণ রাখুন—নীরবতা নয়, প্রতিবাদই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।

প্রয়োজনে সাহায্য চান: যদি কোনো ধরনের হেনস্তা বা বিপদের মুখে পড়েন, আশপাশের যাত্রী বা চালকের কাছে সাহায্য চান।
বেশিরভাগ মানুষই পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত থাকে—কেবল সাহস করে মুখ খুলতে হয়।
আপনার সাহস অন্য নারীদেরও সুরক্ষা দিতে অনুপ্রেরণা হতে পারে।

আত্মরক্ষার কৌশল শিখুন: এখন অনেক প্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য আত্মরক্ষার সংক্ষিপ্ত কোর্স (self-defense) পরিচালনা করে।
সহজ কিছু কৌশল জানলে বিপদের মুহূর্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, এটি নারীর স্বাধীনতার প্রতীক।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, পরিবহন মালিক, চালক এবং সাধারণ যাত্রী—সবাইকে সচেতন ভূমিকা নিতে হবে।
তবে ব্যক্তিগত সতর্কতা ও আত্মবিশ্বাসই নিজের সবচেয়ে বড় ঢাল।
নিজের প্রতি আস্থা রাখুন, সচেতন থাকুন—তাহলেই প্রতিদিনের যাত্রা হবে নিরাপদ, সম্মানজনক ও আত্মবিশ্বাসী।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ