লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার স্বাস্থ্যহানি হলে শরীরের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ‘হেপাটাইটিস-এ’ হলো এমনই একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা দূষিত খাবার বা পানি থেকে ছড়ায়। যদিও এটি সাধারণত গুরুতর নয়, তবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা থাকায় সচেতনতা জরুরি।
বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে যেখানে খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা নেই, সেখানে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ভ্রমণকালেও এটি ঝুঁকির কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নিই হেপাটাইটিস-এ সম্পর্কে বিস্তারিত।
হেপাটাইটিস-এ কী?
হেপাটাইটিস মানে হলো লিভারে প্রদাহ। এটি অ্যালকোহল, টক্সিন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যা বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে হতে পারে। হেপাটাইটিস-এ একটি ভাইরাস (HAV) থেকে ছড়ায়, যা প্রধানত মুখের মাধ্যমে দূষিত খাবার বা পানি থেকে শরীরে প্রবেশ করে।
লক্ষণগুলো কী কী?
অনেক সময় রোগীর কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়:
- জ্বর ও সর্দি
 - পেটব্যথা (বিশেষ করে ডানদিকে)
 - গাঢ় রঙের প্রস্রাব
 - হালকা রঙের পায়খানা
 - ক্ষুধামান্দ্য ও ওজন কমে যাওয়া
 - চোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব (জন্ডিস)
 - ক্লান্তি ও দুর্বলতা
 - এই লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর দেখা দেয়।
 
হেপাটাইটিস-এ ছড়ায় কীভাবে?
- দূষিত পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে
 - অপরিচ্ছন্নভাবে তৈরি খাবার খেলে
 - রাস্তায় বিক্রি হওয়া কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার খেলে
 - আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে
 - টয়লেট ব্যবহারের পর হাত না ধোয়ার কারণে
 - এই ভাইরাস শরীরে ঢুকে রক্তের মাধ্যমে লিভারে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
 
প্রতিরোধের উপায়
সর্বোত্তম প্রতিরোধ হলো হেপাটাইটিস-এ টিকা নেওয়া। এটি দুই ডোজে দেওয়া হয়—প্রথম ডোজের ৬–১২ মাস পর দ্বিতীয়টি। টিকা দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়।
- অন্যান্য সতর্কতামূলক পরামর্শ:
 - খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
 - শুধু ফুটানো বা বোতলের পানি পান করুন
 - রাস্তাঘাটের খাবার এড়িয়ে চলুন
 - পরিচ্ছন্ন ও বাসায় তৈরি খাবার খান
 - বিদেশ ভ্রমণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
 
কে বেশি ঝুঁকিতে আছেন?
- যেসব এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল
 - আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা
 - মাদকসেবীরা
 - সমকামী পুরুষেরা
 - গবেষণাগারে বা পশুর (বিশেষ করে বানর) সঙ্গে কাজ করেন যারা
 - এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিরা
 - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নত স্যানিটেশনবিহীন দেশগুলোর প্রায় ৯০% শিশু ১০ বছরের মধ্যেই হেপাটাইটিস-এ তে সংক্রমিত হয়।
 - রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা
 - রক্ত পরীক্ষা করেই HAV শনাক্ত করা যায়। এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে চিকিৎসা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণেই দেওয়া হয়।
 
যা করণীয়:
- প্রচুর বিশ্রাম নিন
 - পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি খান
 - হালকা, স্বাস্থ্যকর খাবার খান
 - অ্যালকোহল পরিহার করুন
 - ওষুধ নিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
 
জটিলতা ও সুস্থতা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেপাটাইটিস-এ রোগীরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং ভবিষ্যতে আবার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে খুব কম ক্ষেত্রে, বিশেষত যাদের লিভার আগে থেকেই দুর্বল, তাদের মধ্যে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সূত্র: হেলথলাইন
এনএইচ/