শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ।। ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত  মজলিসে আমেলার বৈঠকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ‘ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করালে বিপ্লবী সরকার গঠন করবে ছাত্র-জনতা’ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অর্থবহ সমাধান আসবে: জামায়াত আমির নোয়াখালীতে আন-নুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা লন্ডনে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ প্রধান উপদেষ্টার যেসব চাপে থাকার কথা জানালো নিউইয়র্ক টাইমস হজে গিয়ে অসুস্থ ১১১ বাংলাদেশি, হাসপাতালে ৩০ ইসলাম গ্রহণের পর জবি শিক্ষার্থীর হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান – "একবার কুরআন পড়ুন" সন্ধ্যায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

সামরিক শক্তি অর্জনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাজমুল হাসান

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা কেবল ব্যক্তিগত নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনা, সমাজ গঠন ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। আত্মরক্ষা ও উম্মাহর স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সামরিক শক্তিকে ইসলাম অপরিহার্য বিবেচনা করে। যদিও ইসলাম আক্রমণাত্মক আগ্রাসনের বিপক্ষে, তবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সংগঠিত ও শক্তিশালী সামরিক কাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশনা রয়েছে কোরআন-সুন্নাহতে।

কোরআনে সামরিক প্রস্তুতির নির্দেশ

সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্তি ও যুদ্ধঘোড়া প্রস্তুত রাখো, যার দ্বারা আল্লাহর ও তোমাদের শত্রুদের ভয়ভীতি দেখাতে পারো।”
(সূরা আনফাল: ৬০)

তাফসিরে ইবন কাসিরে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “শক্তি বলতে বোঝায় এমন সব উপকরণ ও কৌশল, যা দিয়ে মুসলিম উম্মাহ শত্রুর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।”

ইমাম কুরতুবি বলেন, “এই আয়াতে স্পষ্টভাবে সামরিক প্রস্তুতির নির্দেশ রয়েছে। যুদ্ধবিদ্যা ও প্রতিরক্ষা কৌশল রপ্ত করা ইসলামের একটি আবশ্যিক অনুশীলন।”

হাদিসে সামরিক প্রস্তুতির গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে একাধিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং সাহাবিদের সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:

“জেনে রাখো, শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৭)

তিনি আরও বলেন, “যে তীর-ধনুক চালানো শিখে তা ভুলে যায়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (মুসলিম, হাদিস: ১৯১৯)

এই হাদিসগুলো সামরিক দক্ষতা রপ্ত করা ও তা বজায় রাখার ওপর ইসলামের বিশেষ গুরুত্ব প্রতিফলিত করে।

সাহাবায়ে কিরামের দৃষ্টিভঙ্গি

মহান সেনাপতি খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা.), যিনি ‘সাইফুল্লাহ’ নামে পরিচিত, যুদ্ধ প্রস্তুতিকে শুধুমাত্র সামরিক কৌশল হিসেবে নয়, বরং ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করতেন। তিনি বলতেন,

“আমি এমন রাতে ঘুমাই না, যখন আমার তরবারি আমার বালিশের নিচে না থাকে।”
(হায়াতে খালিদ, হুসাইন হায়কাল)

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন:

“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তীরন্দাজি ও ঘোড়ায় চড়ার শিক্ষা দাও।”
(তুহফাতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা ২২)

এই নির্দেশনা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ও আলেমদের মূল্যায়ন

খিলাফতের সোনালি যুগে মুসলিম সেনাবাহিনী ছিল বিশ্বের অন্যতম সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত বাহিনী। খলিফা হারুনুর রশীদ তার সেনাবাহিনী এতটাই আধুনিক করেছিলেন যে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য পর্যন্ত তাদের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত।

শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) বলেন:

“উম্মাহর পতনের মূল কারণ শুধু আধ্যাত্মিক দুর্বলতা নয়, বরং সামরিক ও কৌশলগত প্রস্তুতির ঘাটতিও অন্যতম।”
(নাজরাতুন ফি তারিখিল ইসলাম)

ড. ইউসুফ আল-কারাযাভী (রহ.) মন্তব্য করেন:

“প্রতিরক্ষা খাতে দুর্বলতা মানেই মুসলিম বিশ্বকে শত্রুদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া।”
(আল-ইসলাম ওয়া আত-তাহাদ্দিয়াত আল-মুআসিরাহ, পৃষ্ঠা ১২৯)

সমকালীন বাস্তবতা ও সামরিক শক্তিতে মুসলিম বিশ্বের অবস্থান

আজকের বিশ্বে সামরিক শক্তি শুধু অস্ত্রভিত্তিক নয়। এর সঙ্গে প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, গোয়েন্দা দক্ষতা, মনস্তাত্ত্বিক কৌশল ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ২০২৪ অনুযায়ী সামরিক শক্তিতে শীর্ষস্থানীয় মুসলিম দেশগুলো হলো:

দেশ বৈশ্বিক র‍্যাংক সেনাবাহিনী বাজেট (বিলিয়ন ডলার) বৈশিষ্ট্য
তুরস্ক ৮ম ৮ লক্ষ+ ২৬+ নিজস্ব ড্রোন, ন্যাটো সদস্য
পাকিস্তান ৯ম ১০ লক্ষ+ ১০.৪ পারমাণবিক শক্তি, ক্ষেপণাস্ত্র
ইরান ১৪তম ১০ লক্ষ+ ২০+ ক্ষেপণাস্ত্র, মিলিশিয়া
মিশর ১৫তম ৯ লক্ষ+ ১০+ সুয়েজ ক্যানালের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ
সৌদি আরব ২২তম ২ লক্ষ+ ৬৯ বিশাল বাজেট, আধুনিকায়নে ঘাটতি

কোরআন, হাদিস, সাহাবায়ে কিরাম এবং ইসলামী ইতিহাসে সামরিক প্রস্তুতির গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্ট। এটি কেবল প্রয়োজনের মুহূর্তে ব্যবহারযোগ্য নয়, বরং ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি স্থায়ী ও কোরআননির্দেশিত কর্তব্য।

আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উচিত প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক দক্ষতা অর্জন, গবেষণায় বিনিয়োগ, এবং যৌথ প্রতিরক্ষা জোট গঠন করে বিশ্বে ন্যায়ের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখা। এই প্রস্তুতিই হবে আত্মরক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনের পথ এবং ইসলামের শান্তিপূর্ণ আদর্শের রক্ষাকবচ।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ