শনিবার, ১৭ মে ২০২৫ ।। ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১৯ জিলকদ ১৪৪৬


গরমের কারণে মসজিদে বিশ্রাম করা নিয়ে যা বলছে ইসলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

গ্রীষ্মের তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন। বাসায় বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলেও কর্মজীবী মানুষরা চাইলেও অনেক সময় বিশ্রাম নিতে পারে না। তাই সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে, যেন মসজিদগুলো ও তার অজুখানা খোলা রাখা হয়। যাতে মানুষজন সেখানে আশ্রয় ও বিশ্রাম নিতে পারে।

তবে প্রশ্ন হলো ইসলাম এ বিষয়ে কি বলছে? এককথায় উত্তর হলো, একান্ত প্রয়োজনে বিশেষ শর্ত রক্ষা করে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ ও বিশ্রামের অবকাশ আছে।

মনে রাখতে হবে, মসজিদের প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডেকো না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)

এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মসজিদের উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত। সুতরাং মসজিদে ইবাদতের পরিবেশ রক্ষা করা অপরিহার্য। যেহেতু মসজিদ নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত, তাই ইবাদত ও ইবাদতসংশ্লিষ্ট কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজে তা ব্যবহার করা উচিত নয়।

কিন্তু একান্ত প্রয়োজনে সীমা ও শর্ত মেনে সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন—গরম, ঠাণ্ডা, বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে সাময়িকভাবে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া জায়েজ। তবে এটি যেন মসজিদের আদবের পরিপন্থী না হয় এবং স্থায়ী বসবাস বা ব্যবসায় রূপ না নেয়। 

ফাতাওয়ায়ে আলমগিরিতে বলা হয়েছে, ‘মসজিদকে পথরূপে ব্যবহার করা বা বিশ্রাম বা ঘুমের জন্য বসা জায়েজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনে তা করা যেতে পারে। তেমনি নামাজ, জিকির, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত ছাড়া মসজিদে বসা জায়েজ নয়, তবে কোনো ওজর থাকলে অনুমোদিত। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/২৪৮)

মসজিদকে মর্যাদায় সমুন্নত করার ও মসজিদে তার নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়ে এবং মসজিদে ইবাদতকারীদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

فِیۡ بُیُوۡتٍ اَذِنَ اللّٰهُ اَنۡ تُرۡفَعَ وَ یُذۡکَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ یُسَبِّحُ لَهٗ فِیۡهَا بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَال رِجَالٌ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّکٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ

যেসব গৃহকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং তাতে তার নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখেনা, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা নুর: ৩৬, ৩৭)

মসজিদে ঘুমানো বা বিশ্রামের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো, ইতিকাফ ছাড়া সাধারণভাবে মসজিদে ঘুমানো পুরুষদের জন্য মাকরুহ। তবে মুসাফির বা মিসকিনদের জন্য (যাদের থাকার জায়গা নেই) অনুমোদন আছে। 

ইমাম কাসানি (রহ.) বলেন, মসজিদে ঘুমানো যদি ইতিকাফকারী বা পথিক হয়, তাহলে কোনো দোষ নেই। অন্যথায় তা মাকরুহ (নিন্দনীয়), কারণ এতে মসজিদের সম্মান রক্ষা হয় না।’ (বাদায়েউস সানায়ে : ২/৮৯)

অন্যদিকে বাহরুর রায়েক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মসজিদে ঘুমানো সাধারণভাবে মাকরুহ, তবে ইতিকাফকারী ছাড়া। তবে গরীব বা ভিনদেশি হলে (যার থাকার জায়গা নেই), তা প্রয়োজনবশত জায়েজ। (বাহরুর রায়েক : ২/৪৯)

উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা গেল, মসজিদকে শুধু নামাজের জায়গা মনে করেই ব্যবহার করা উচিত। তবে মানবিক প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।

সুতরাং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উচিত, গরমের তীব্রতা থেকে লোকদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তা হওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িকভাবে মসজিদকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে মসজিদের মালপত্র ও আদব যেন সুরক্ষা হয়, সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ