ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এ যোগ দিতে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ কাজাখস্তান। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত দেশটির সরকার এ ঘোষণা দিয়েছে।
দিনের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছিলেন, শিগগিরই নতুন একটি দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে—তারপরই কাজাখ সরকারের এই ঘোষণা আসে।
কাজাখ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আব্রাহাম অ্যাকর্ডে যোগদান আমাদের পররাষ্ট্রনীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক সম্প্রসারণ, যা সংলাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।”
১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজাখস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ২০১৬ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাজাখস্তান সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ নিয়ে সহযোগিতা চুক্তিও সই হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র-কাজাখ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ কী?
ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমান—এই তিন ধর্মেরই আদি পুরুষ হিসেবে সম্মানিত ইব্রাহিম (আঃ)-এর নামে চুক্তিটির নামকরণ করা হয়েছে। নামটির মাধ্যমে ধর্মীয় ঐক্য ও শান্তির প্রতীক তুলে ধরা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন। মূলত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ চালু করেন।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইনের মধ্যে। পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মরক্কো এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সুদান এতে যোগ দেয়।
আব্রাহাম চুক্তির মূল বিষয়
১️. ইসরায়েল ও স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ—দূতাবাস ও কনস্যুলেট স্থাপন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ।
২️. ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, কৃষি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৩️. পরিবহন ও ভ্রমণ সুবিধা উন্নয়ন—সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা সহজীকরণ, পর্যটন সম্প্রসারণ।
৪️. ইরান ও উগ্রপন্থার প্রভাব কমিয়ে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার; যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গোয়েন্দা ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৫️.ফিলিস্তিন প্রশ্নে পূর্ববর্তী আরব অবস্থান পরিবর্তন—স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি, যা অনেক আরব দেশে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলের চুক্তিভঙ্গ
চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো আব্রাহাম অ্যাকর্ড ভঙ্গ করেছে দখলদার ইসরায়েলি সরকার। ২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে ইসরায়েল একসঙ্গে ছয়টি আরব দেশে—কাতার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, তিউনেশিয়া ও ইয়েমেনে বিমান হামলা চালায়। ৭২ ঘণ্টায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়।
সৌদি আরবের অবস্থান অনড়
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে আব্রাহাম চুক্তিতে সৌদি আরবও যোগ দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রিয়াদ এখনো জানিয়ে এসেছে, তারা ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগ থেকে সরে আসছে না।
সে প্রস্তাবে বলা হয়েছে—“স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না সৌদি আরব।”
সূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান
এনএইচ/