মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
‘ইসলামপন্থীরা এক থাকলে জাতীয় স্বার্থে কেউ আঘাত করতে পারবে না’ হাতপাখা নিয়ে লড়ছেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের শীর্ষ ৮ নেতা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, জরিপ যা বলছে যশোরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের যৌথ মতবিনিময় সভা তরুণ কওমি-ওলামার প্রতি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় মাওলানা আবুল কালামের শয্যাপাশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ তফসিল ঘোষণার তারিখ জানালেন ইসি মাছউদ ‘দুর্ভাগ্য ১০০ বছরেও আরেকজন বেগম রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারিনি’ হজের বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করলো এনবিআর পাকিস্তানে ভয়াবহ হামলা, ৬ সেনা নিহত

প্রকাশ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা নেতানিয়াহুর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে মার্কিন চাপ প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এমনকি গাজায় যুদ্ধ শেষ হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করার বিষয়টি তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েও দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন- গাজায় সংঘাত শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন তিনি।

এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের ফিরে আসার মাধ্যমে ‘সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত’ আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এতে ‘আরও অনেক মাস’ সময় লাগতে পারে।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া হামলায় গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ মানুষই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় ইসরায়েলকে তার আক্রমণের লাগাম টানতে এবং যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তির জন্য অর্থপূর্ণ আলোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্ররা সংকট সমাধানে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ ফর্মুলার পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছে।

আর সেটি হলে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েলি রাষ্ট্র পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

অনেকের আশা, বর্তমান সংকট তথা সহিংসতার অবিরাম চক্রের একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসাবে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনীতিতে ফিরে যেতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্তব্য থেকে দেখা যাচ্ছে- তার উদ্দেশ্য একেবারেই বিপরীত।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমের সমস্ত ভূমির ওপর ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। মূলত এই অঞ্চলটি ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের মধ্যে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি প্রয়োজনীয় শর্ত এবং এটি (ফিলিস্তিনের) সার্বভৌমত্বের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। কি করতে হবে? আমি আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের এই সত্যটি বলি এবং আমি আমাদের ওপর এমন একটি বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাও আটকে দিই যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতি করবে।’

বিবিসি বলছে, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্ব তথা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে কাটিয়েছেন। গত মাসে ইসরায়েলি এই প্রধানমন্ত্রী গর্ব করেছেন যে, তিনি এর (ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠা রোধ করতে পেরে গর্বিত। তাই তার সর্বশেষ এই মন্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের বিষয়ে প্রকাশ্যে এই ধরনের মন্তব্য এবং বর্তমান সামরিক হামলা বজায় রাখার সংকল্প কার্যত ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের সাথে দেশটির দূরত্ব আরও প্রসারিত করবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে এসেছে। কিন্তু গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সেখানে ভয়াবহতার দৃশ্য বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশেগুলো ইসরায়েলকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউস বারবার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে: মূলত ব্যাপকভাবে বিস্তৃত বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল-নির্দেশিত অস্ত্রের মাধ্যমে হামলা করার আহ্বান; স্থল আক্রমণ নিরুৎসাহিত করা; এবং গাজায় সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকাসহ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু ওয়াশিংটনের এসব পরামর্শের বিপরীতে ইসরায়েল প্রায়শই কার্যত বধির থেকেছে বা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে - সেগুলোও আবার প্রায়শই প্রকাশ্যে। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সফরের সময়ও।

এদিকে নেতানিয়াহুর সর্ব-সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, তার সরকার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে কাজ করা বন্ধ করবে না। এমনকি ‘গাজাকে পুনর্দখল করা হবে না’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য তার ক্ষয়িষ্ণু জনসমর্থনের ভিত্তি এবং তার সরকারকে সমর্থনকারী অতি-ডানপন্থি মন্ত্রীদের খুশি করবে।

কিন্তু তারা দেশ-বিদেশে যারা এই যুদ্ধের মানবিক মূল্যে ক্রমশ আতঙ্কিত হচ্ছেন তাদের হতাশ করবে। সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে- বেশিরভাগ ইসরায়েলি হামাসকে ধ্বংস করার সম্ভাব্য অসম্ভব লক্ষ্যের চেয়ে বাকি বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দিতে চায়।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ