।।মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।।
বিশ্ব প্রযুক্তির ইতিহাসে প্রতিরক্ষা খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুত গতির এ অস্ত্র এখন আধুনিক যুদ্ধে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ঘণ্টায় গতি প্রায় ৬,১৭৪ কিলোমিটার (৩,৮৩৬ মাইল)—এই অভাবনীয় গতি একে করে তুলেছে ধ্বংসাত্মক, দুর্বোধ্য ও প্রায় অপ্রতিরোধ্য।
হাইপারসনিক মানে কী?
"হাইপারসনিক" বলতে বোঝায় এমন গতি, যা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি, অর্থাৎ ম্যাক ৫ বা তার বেশি। এমন গতিতে চলা কোনো বস্তুকে থামানো বা লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত কঠিন। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ছুটে যায় অত্যন্ত কৌশলে।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বনাম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র
সাধারণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় নির্দিষ্ট বক্রপথে—একবার নিক্ষেপের পর গতিপথ পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এই সীমাবদ্ধতা ভেঙে দিয়েছে। এটি চলার সময়ও দিক পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে এটি প্রতিপক্ষের রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই রূপ:
১. হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (HGV) টি মহাকাশে চলে গিয়ে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। যাত্রাপথে এটি এলোমেলো গতিপথে চলে, যাতে শত্রুপক্ষের রাডার একে ধরতে না পারে। মূল উদ্দেশ্য হলো গোপন থাকা এবং হঠাৎ করে আঘাত হানা।
২. হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল (HCM)
এটি অপেক্ষাকৃত নিচু স্তরে ছুটে চলে এবং গতিপথে গতি ও দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। এটি লক্ষ্যবস্তুর উপর হঠাৎ ও চূড়ান্ত আঘাত হানতে সক্ষম।
কোন দেশ এগিয়ে?
বর্তমানে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে। চীন DF-ZF নামের HGV তৈরি করেছে, রাশিয়ার রয়েছে Avangard ও Zircon, আর যুক্তরাষ্ট্র DARPA ও Lockheed Martin-এর মাধ্যমে নানা পরীক্ষা চালাচ্ছে।
হুমকি ও ভবিষ্যৎ
এই প্রযুক্তি শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এত দ্রুতগতির অস্ত্র প্রয়োগের আগে যদি কূটনৈতিক বা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া যায়, তবে যুদ্ধবিরতির সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারসনিক প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধ নয়, বরং বিশ্বে নিরাপত্তা ভারসাম্যকেও পাল্টে দিতে পারে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশল ও প্রতিরক্ষার ধরন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপরই অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
এই নতুন অস্ত্রপ্রযুক্তি বিশ্বকে এক নতুন পর্বে নিয়ে যাচ্ছে—যেখানে গতি মানে শুধু সময় নয়, বরং আধিপত্য ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রতীক।
এনএইচ/