|| বিশেষ প্রতিনিধি ||
এবারের ঈদুল আজহায় দেশজুড়ে ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি। অন্যান্য পশু কোরবানি হয় ৯৬০টি।
দেশে ২০২৪ সালের কোরবানি ঈদে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি পশু কোরবানির তথ্য দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। সেই হিসাবে এবার কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৩ লাখ।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশজুড়ে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদি পশু কোরবানি হয়েছিল। এর আগের বছর ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে কম ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। এরপর কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৬২টি। আর সবচেয়ে বেশি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি পশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ঢাকা বিভাগে কোরবানি হয় ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি পশু। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি পশু কোরবানি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি। কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি থাকায় অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
তবে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবার কোরবানির সংখ্যা অনেক কমে যাওয়া নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর নেপথ্যে কী কারণ সেটা জানার কৌতূহল অনেকের। কেউ কেউ নিজের মতো করে এর ব্যাখ্যাও করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার কোরবানির সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় ১৩ লাখ কমে যাওয়ার পেছনে মোটাদাগে কয়েকটি কারণ কাজ করেছে। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং দলটির নেতাকর্মীদের ছন্নছাড়া অবস্থা একটি বড় কারণ। আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রায় সবাই পালিয়ে আছেন কিংবা কারাগারে। একটি বড় অংশ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
গত ১৫ বছরে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগকালে কোরবানি ঈদে একাধিক কোরবানি দিতেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অনেকে অতিরিক্ত পশু কোরবানি দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করতেন। এবার আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোরবানির সংখ্যা এর একটা প্রভাব পড়েছে। তবে ১৫ বছর ধরে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা অবশ্য অতিরিক্ত কোরবানি করেছেন। যদিও আওয়ামী লীগের তুলনায় সেই সংখ্যাটি কম। ফলে এবার কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে এটি একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার একটা প্রভাব কোরবানিতে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে অনেকের পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা যেখানে কষ্টকর হয়ে পড়েছে সেখানে কোরবানির মতো ওয়াজিব আমলে এর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। আগে একা কোরবানি দিতেন এমন অনেকেই শরিক হয়ে কোরবানি দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে এর একটা প্রভাবও পড়েছে কোরবানির সংখ্যায়।
তবে কেউ কেউ এর অন্য একটি কারণও বলে থাকেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে সবকিছুর পরিসংখ্যানই একটু বেশি বেশি দেখাতো। সবকিছুতেই নিজেদের ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা থাকত দলটির। কোরবানির সংখ্যাও একটু বেশি করে দেখানো হতো। এবার সেটা হয়নি বলে কোরবানির সংখ্যা কমে যেতে পারে ধারণা কারো কারো।
এমএম/
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          