সোমবার, ০২ জুন ২০২৫ ।। ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৬ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :

সংস্কার প্রস্তাবনায় 'লিঙ্গ পরিচয়' নিয়ে ১৮০ শিক্ষকের উদ্বেগ


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সংবিধান ও অন্যান্য সংস্কার প্রতিবেদনে 'লিঙ্গ পরিচয়' এর মোড়কে সমকামিতাকে বৈধতাদানের শঙ্কায় ১৮০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। শনিবার (৩১ মে) তারা এই বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ১৮০ জন সচেতন নাগরিক যারা সংবিধান, আইন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সম্প্রতি প্রকাশিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে বৈষম্যের অননুমোদিত কারণগুলোর তালিকায় 'নারীপুরুষভেদ' এর স্থলে অসংজ্ঞায়িত 'লিঙ্গ' শব্দের ব্যবহারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, কেননা এই লিঙ্গ শব্দটি অসংজ্ঞায়িত থাকার সুযোগে একে লিঙ্গ পরিচয় বা 'জেন্ডার আইডেন্টিটি' হিসাবে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে এলজিবিটিকিউ+ তথা সমকামী অধিকারকে সংবিধানিক বৈধতা দানের পথ উন্মুক্ত করবে।’

‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকরণ (Diversity and Inclusion) বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, যা সুস্পষ্টভাবে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের নামে এলজিবিটিকিউ+ অন্তর্ভুক্তিকরণের ইঙ্গিত বহন করে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের সব পর্যায়ে (‘নারী-পুরুষ’ এর পরিবর্তে) ‘সব জেন্ডার’-এর অংগ্রহণ নিশ্চিত করার সুশারিশ করা হয়েছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও (‘নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’ এর পরিবর্তে) ‘জেন্ডার ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’-এর সুপারিশ করা হয়েছে।’

‘একইভাবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনও সংবিধানের ২৮ ও ২৯ নম্বর ধারায় ‘নারী-পুরুষ’ শব্দযুগলের পরিবর্তে অসংজ্ঞায়িত 'লিঙ্গ' শব্দের ব্যবহারের সুপারিশ করেছে যার বাস্তবায়ন ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে এলজিবিটিকিউ+ তথা সমকামীদের রাষ্ট্রীয় বৈধতা দেওয়ার শামিল হবে।’

১৮০ জন শিক্ষকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামসহ এদেশে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসসমূহে সমকামিতা ও অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ক স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা আজও বলবৎ রয়েছে, যা অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ককে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে। যদি সংবিধান সংস্কার কমিশন বা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ২৮ ও ২৯ নম্বর ধারা এমনভাবে প্রয়োগ করা হয়, যা দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার বিরোধী বা তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাহলে এটি দেশের প্রচলিত আইন ও নৈতিক কাঠামোর মধ্যে এক বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে এবং সমকামিতা ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারকেন্দ্রিক সমাজকে হুমকির মুখে ফেলবে।’

তারা বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার নাম কখনোই উন্নয়ন বা সংস্কার হতে পারে না। নারী অধিকার এবং মানবাধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা আমাদের নিজস্ব সমাজব্যবস্থা ও আইনি কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে হতে হবে। অন্যথায়, তা হবে আত্মঘাতী এবং বিভ্রান্তিকর।’

বিবৃতি প্রদানকারী ১৮০ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন: ৪৪ জন প্রফেসর, ৩১ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৬২ জন অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং ৪৩ জন লেকচারার।

বিবৃতি প্রদানকারীদের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ জন, বুটেক্সের ১৩ জন, সাস্টের ১২ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১১ জন, আইইউবি’র ৯ জন, বুয়েটের ৭ জন, কুয়েটের ৫ জন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ৩৩ জন সহ অনান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষকগণ রয়েছেন। বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষকদের বিস্তারিত তালিকা www.mullobodh.com ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যোগাযোগ: ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত (সমন্বয়ক, মূল্যবোধ আন্দোলন)

+8801927-002569

Mullobodh.com | মূল্যবোধ সংরক্ষণে সদা তৎপর

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ