নির্বিচারে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। খাবার পানির তীব্র সংকট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের বিমান ও কামানের হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি। হাসপাতালের মেঝেতে লাশের সারি। আহতদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ মাতার বলেছেন, গাজায় আমার ৯ বছরের চিকিৎসা জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখেনি। এখানকার অবস্থা ভয়ানক। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধের অনেক ঘটনা দেখেছি কিন্তু এবারের পরিস্থিতে অনেক, অনেক আলাদা। হতাহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে জানান ডা. মোহাম্মদ মাতার। তিনি বলেন, কেউ বুঝতে পারছে না গাজায় কি হচ্ছে?
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গাজায় যেসব হাসপাতাল আছে তাতে অবর্ণনীয় এক দৃশ্য। হতাহতদের স্থান দেওয়ার জায়গা নেই। মর্গ উপচে পড়ছে লাশে। আত্মীয়স্বজনরা ভিড় করছেন প্রিয়জনের লাশের জন্য। আহতরা আর্তনাদ করছেন। তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই।
গত ছয় দিনে ৩৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার গাজায় ছয় হাজারের মতো বোমা নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। এগুলোর ওজন চার হাজার টন। শক্তিশালী এসব বোমার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে গাজার অনেক আবাসিক এলাকা। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে ৪৪৭ শিশু এবং ২৪৮ জন নারী। এদিকে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কোনো ধরনের খাদ্য, ওষুধ বা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইল।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় বসবাস করা ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ইসরাইলের বোমা বর্ষণের কারণে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজার ২ হাজার ৫৪০টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস এবং ২২ হাজার ৮৫০টি ভবন আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ওসিএইচএ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে গণহারে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গাজায় মানবিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা জাতিসংঘ বারবার তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজার ৫০ হাজার গর্ভবতী মহিলার অপরিহার্য স্বাস্থ্য পরিষেবা, এমনকি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সংস্থাটি নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তা, সুস্থতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন।
গাজা থেকে ইউএনএফপিএর একজন কর্মী বলেছেন, তাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য শ্বাস নেওয়া, বেঁচে থাকা।
কবরস্থানের মতো হাসপাতালের মর্গগুলোতেও স্থান সংকট দেখা দিয়েছে। বোমা হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে মর্গে আসছে সারি সারি লাশ। বৃহস্পতিবার খান ইউনিসের একটি মর্গে দেখা যায় নিহতদের স্বজনদের ভিড়। এক পরিবারের নিহত আটজনের মরদেহ নিতে এসেছিলেন পরিচিতজনেরা। আগের দিন পরিবারটির বাড়িতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০টি মরদেহ রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও কামান হামলায় পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারখ্যাত গাজা উপত্যকার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সেখানকার মানুষের এখন দিন কাটছে অন্ধকারে। এর মধ্যে সেখানে দেখা দিয়েছে পানির জন্য হাহাকার। পরিস্থিতি না বদলালে সেখানকার মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজার এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়ানক’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় খাবার ও পানি খুব শিগগির শেষ হয়ে যাবে। ইসরায়েলের অবরোধের পর এই অঞ্চলে জরুরি সরবরাহ ভয়াবহ আকারে কমে এসেছে। গাজার একমাত্র পাওয়ার স্টেশনের জ্বালানি শেষ হওয়ার পর সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে। ইসরায়েল বলেছে, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের অবরোধ শেষ হবে না। আশ্রয় প্রার্থীদের সুরক্ষা দিতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি।
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          