শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
তুরস্কের যাচ্ছেন হাফেজ্জি হুজুর রহ সেবার নেতৃত্ববৃন্দ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতা করতে চায় ইরান  ভারত হামলা করলে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুমকি পাকিস্তানের আখাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আহত সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত ​​বইবে : বিলাওয়াল ভুট্টো হজের সময় ভুয়া ক্যাম্পেইনে জড়িতদের ধরছে সৌদি জামায়াত-শিবিরের প্রশংসা, সন্তোষ শর্মা ইস্যুতে যে ‘নসিহত’ রফিকুল মাদানীর গাজার শিশুরা এখন গল্প শোনে না, শোনে যুদ্ধ আর ক্ষুধার আর্তনাদ পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ । বেশি ক্ষতি হবে এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বড় সংস্থার  ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে আবারও গুলি বিনিময়

৩০ মে; দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার আজ ১৫৮ বছর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার আজ ১৫৮ বছর চলছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইতিহাস মতে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর ভারতবর্ষের মানুষের মাঝে ইসলাম ও দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তারের লক্ষ্যে মাওলানা কাসিম নানুতাবির (১৮৩২-৮০ খ্রি.) নেতৃত্বে দেওবন্দের সাত্তা মসজিদে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সূচনা হয়।

ভারতের প্রখ্যাত স্কলার ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ওয়াসি বলেন, দেড়শ বছর আগে ভারতে মুসলিম শাসনের অবসানের পরই কিন্তু দেওবন্দ স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়েছিল। ভারতীয় মুসলিমরা তখন ভাবলেন ক্ষমতা হাতছাড়া হলেও নিজেদের ধর্মীয় পরম্পরা তো রক্ষা করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই ১৮৬৬ সালের ৩০ মে দেওবন্দের ছত্তেওয়ালি মসজিদে মাত্র একজন ওস্তাদ ও একজন সাগরেদকে নিয়ে এই মাদ্রাসার জন্ম। ঘটনাচক্রে যাদের দুজনের নামই ছিল মাহমুদ!

শিক্ষক ছিলেন মোল্লা মাহমুদ দেওবন্দী। আর ছাত্র ছিলেন মাহমুদ আল হাসান- যিনি পরবর্তীকালে শায়খ আল-হিন্দ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ব্রিটিশবিরোধী রেশমি রুমাল আন্দোলনের নায়ক ছিলেন তিনি।

সেদিনের সেই ছোট্ট মাদ্রাসাই আজ মহীরুহের মতো এক বিশাল প্রতিষ্ঠান, যার স্বীকৃতি ও সম্মান গোটা ইসলামি বিশ্বজুড়ে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসলামি বিশ্বে কায়রো বা মদিনার মতো বড় বড় শিক্ষাকেন্দ্র অনেক আছে। দেওবন্দের পরিসর হয়তো বিশাল নাও হতে পারে, কিন্তু এটা হলো পাউরুটির ওপর মাখনের মতো। মানে এখানে যে ইসলামি জ্ঞান, শিক্ষার গভীরতা বা আধ্যাত্মিকতার পাঠ আপনি পাবেন তার তুলনা কোথাও মিলবে না!’

বিশ্বের নানা দেশ থেকে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা আহরণ করতে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নিচ্ছে। কত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের এখানেই হাতেখড়ি হয়েছে তার হিসেব নেই। উপমহাদেশের অধিকাংশ আলেম এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফী, প্রয়াত মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, প্রয়াত আমীর আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী এবং প্রখ্যাত ইসলামিক পন্ডিত শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ)-এর মতো পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা ভাসানী এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র ছিলেন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, দ. আফ্রিকা ও সৌদি আরবের অনেক বিখ্যাত মনীষী এই প্রতিষ্ঠানেরই প্রাক্তন ছাত্র।

দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসারী অনেক মাদ্রাসা রয়েছে ভারতে, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার নানা দেশে। যেগুলোকে কওমি মাদ্রাসা হিসাবে সবাই চিনে থাকেন। শুধু বাংলাদেশেই রয়েছে ২০ হাজারের অধিক। ২০২২ সালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা (বোর্ডোর অধীন) ১৯ হাজার ১৯৯টি।

বর্তমান বিশ্বের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন ও জাস্টিস আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানী দারুল উলুম দেওবন্দ সম্পর্কে বলেন, ‘দারুল উলুম দেওবন্দ প্রান্তিক কোনো দলের নাম নয়, না এটি কোনো রাজনৈতিক পার্টি, না এটি এমন কোনো গোষ্ঠীর নাম যা সত্য ও অসত্য সবক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে আপোষ করার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর না এটি তর্কবিতর্ক করার এমন কোনো টিম যা বিশেষ কোনো দল ও মতের খণ্ডনের জন্যে অস্তিত্বে এসেছে- বরং প্রকৃত অর্থে দারুল উলুম দেওবন্দ হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহর ওই বাস্তব ব্যাখ্যার নাম; যা সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়িন ও পূর্বসূরি মনীষীদের মধ্যস্থতায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটা ওই কীর্তি ও অঙ্গীকারের নাম; যার সূত্রধারা বদর ও উহুদের ময়দান পর্যন্ত নিয়ে পৌঁছায়। এটা ওই ইখলাস ও লিল্লাহিয়াত, তাকওয়া ও তাহারাত, বিনয় ও সরলতা, সত্যকথন ও নির্ভয়তার নাম; যা ইসলামি ইতিহাসের সকল ধাপে উলামায়ে হকের বৈশিষ্ট্য ছিল।’ (জাহানে দিদাহ; তাকি উসমানি, পৃ. ৫১১, মাকতাবায়ে মাআরেফুল কোরআন, করাচি, নতুন সংস্করণ ১৪৩১ হি./২০১০ ঈ.)

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ