বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
শরীরের মরা চামড়া উঠে গেলে অজু ভাঙবে? ভূমিকম্প হওয়ার আগে সতর্কবার্তা দেবে গুগল দেশবিরোধী অপশক্তির উস্কানি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান খেলাফত মজলিসের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে তুমুল উদ্দীপনা, নিবন্ধন করলেন ৫৪ হাজারের বেশি প্রবাসী বাউলের আল্লাহদ্রোহী বক্তব্য আড়াল করে তৌহিদী জনতাকে দোষারোপ, ঈমানি চেতনায় সরাসরি আঘাত জুমার দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব দ্বীনিয়াত কেন্দ্রীয় মুআল্লিম ও মুআল্লিমা প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হচ্ছে ১৪ ডিসেম্বর ৫৪ বছর পর ইসলামকে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই ফের সিসিইউতে বেগম খালেদা জিয়া

প্রতিটি দুর্যোগ সতর্কবার্তা, গণতওবা জরুরি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||শায়খ আহমাদুল্লাহ||

ঘনঘন ভূমিকম্প নিছক ভূতাত্ত্বিক নড়াচড়া নয়, এটি আমাদের জন্য এক গভীর সতর্কবার্তা। হয়ত বড় কোনো বিপদ আসন্ন, সে সম্পর্কে আমরা জানি না। এরকম সময় তাওবার পাশাপাশি বাস্তব প্রস্তুতি গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

আমরা বসবাস করি এমন এক ভৌগোলিক এলাকায়, যেখানে জনঘনত্ব ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখানে প্রতিটি অট্টালিকা যেন একেকটি সম্ভাব্য সমাধিসৌধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে এক লক্ষের বেশি ভবন ধসে যেতে পারে। চিন্তা করুন, এটি কত ভীতিজাগানিয়া পূর্বাভাস!

দুঃখজনক হলো, এমন ভয়াবহ ঝুঁকির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি একেবারেই অপ্রতুল। আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্ধারকর্মীর সংখ্যা নগণ্য, বড় ধরনের উদ্ধারযুদ্ধ চালানোর মতো ভারী যন্ত্রপাতিও অপর্যাপ্ত। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সীমিত সক্ষমতা দিয়ে হাজার হাজার ভগ্ন স্থাপনা সামলানো কেবলই কল্পনা। অথচ বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন, ভাস্কর্য নির্মাণ বা অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পেই নয়, নেতা-নেত্রীদের জন্য তোরণ নির্মাণ, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ও ক্ষমতার প্রদর্শনীতেও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের যে অপচয় ঘটে, তা এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কাঠামোকে আরো প্রসারিত করে তোলে। সেই অর্থের সামান্য অংশও যদি দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি, ভূমিকম্প-প্রতিরোধী প্রযুক্তি, উদ্ধার সরঞ্জাম ও দক্ষ উদ্ধারকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণে ব্যয় করা হতো—তাহলে সেটিই হতো সবচেয়ে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এটি বিবেচিত হতো বর্তমানের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে।

কিন্তু কেবল রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাকেই দায়ী করে ক্ষান্ত হওয়া যথেষ্ট নয়। আমরা যারা বাড়ি নির্মাণ করি, সামান্য আর্থিক লাভ বা অদূরদর্শিতার বশবর্তী হয়ে নির্মাণ বিধিমালা উপেক্ষা করি। প্রকৌশলীদের পরামর্শকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমরা নিজ হাতে তৈরি করি আমাদের প্রিয়জনদের জন্য মৃত্যুফাঁদ। এটি কি একপ্রকার সামাজিক আত্মহত্যা নয়? বিপর্যয় পরবর্তী বিলাপের চেয়ে, বিপর্যয়রোধী প্রস্তুতিই তো বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল মানুষের কাজ।

রাষ্ট্রের উচিত এখনই একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। উদ্ধারকাজ, চিকিৎসা, জরুরি আশ্রয়, খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগব্যবস্থা—সবকিছু নিয়ে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি। খোলা জায়গা সংরক্ষণ, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার, নির্মাণসামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করা জরুরি।

তবে প্রস্তুতি যেন কেবল ভৌত অবকাঠামোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ না থাকে। জাগতিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আমাদের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও প্রযুক্তি নিরাপত্তা দিতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি দুর্যোগ আমাদের প্রতি সতর্কবার্তা। আমাদের সমাজের বিস্তৃত দুর্নীতি, জুলুম, অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয় থেকে আমাদের গণতাওবা করা জরুরি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখুন।

লেখক: বিশিষ্ট দাঈ, চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ