বিশেষ প্রতিনিধি
এক যুগ আগে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিল। সেই আন্দোলনের জেরেই ঘটেছিল ৫ মে’র শাপলা চত্বর ট্রাজেডি। পরের ঘটনা সবার জানা। অনেক উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরায়ের মধ্য দিয়ে হেফাজত পার করেছে ১২টি বছর।
অনেকের মনে কৌতূহল, হেফাজতের সেই ১৩ দফায় কী ছিল? আসুন জেনে নিই আলোচিত সেই ১৩টি দফা-
দফা-১: সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
দফা-২: মহান আল্লাহ, রাসুল সা. ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
দফা-৩: তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদসহ ইসলামবিদ্বেষীদের সকল অপতৎপরতা ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং যে সকল নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি-সংগঠন যেকোনো মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল সা:, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তাদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দফা-৪: দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুদ্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সকল প্রকার বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
দফা-৫: নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারা ও বিষয়সমূহ বিলুপ্ত করতে হবে এবং শিার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
দফা-৬: ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের নামে শিরিকি সংস্কৃতিসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
দফা-৭: রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
দফা-৮: জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
দফা-৯: দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ঈমান ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও ও খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
দফা-১০: কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
দফা-১১: রাসুলপ্রেমী প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
দফা-১২: অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
দফা-১৩: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
এসএকে/