রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
সিলেটে ১ মাস ধরে নিখোঁজ আবিদুল মিয়া সিলেট মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুব জমিয়তের আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন- আহমদ আবদুল কাইয়ূম জেদ্দায় হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী নভেম্বরে আজ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিস বানিয়াচং উপজেলা শাখার ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন ‘নীলনদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতেও ইসলাম নেই’ কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল, সম্পাদক মাজহারুল ‘ইসলামি শক্তির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন’ গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনা, নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা

এবার রাজ্যসভায় নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে নরেন্দ্র মোদি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মোদি-আদানি ভাই ভাই, আদানি কি গুলামি বান্ধ কারো, এলআইসি-পে কুছ তো বোলো, এসবিআই-পে কুছ তো বোলো।

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় গতকাল এভাবেই স্লোগান দেন বিরোধীরা। রাজ্যসভায় এদিন সোয়া এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদি। আর সেই পুরো সময়টায় বিরোধী সদস্যরা দল বেঁধে স্লোগান দিতে থাকেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সম্পর্ক, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপি নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যসভায় মোদিকে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। তবে লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও তার সরকারের আমলে আদানিদের ফুলেফেঁপে ওঠা, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।

নজিরবিহীন বিক্ষোভের মধ্যে গলা চড়িয়ে বক্তব্য চালিয়ে যেতে তাকে বার বার পানি খেতে হয়েছে। বিরোধীদের থামিয়ে দিতে বক্তব্যের শুরুতে বলেছিলেন, যত পাক ছুড়বেন, তত পদ্ম ফুটবে, তাতেও লাভ হয়নি। বিরোধী শিবির থেকে উড়ে আসা কটাক্ষে বার বার বক্তব্যের ছন্দপতন হয়েছে। তা সত্বেও বক্তব্যের শেষদিকে বলেছেন, গোটা দেশ দেখছে, এক জন একাই কত জনকে টেক্কা দিচ্ছে। বিরোধীরা পালা করে স্লোগান দিয়ে চললেও, আমি একাই এক ঘণ্টার বেশি সব আক্রমণের জবাব দিয়ে চলেছি।

মনে করা হচ্ছে এ সব বলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে আদানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে কোণঠাসা মোদি বার্তা দিতে চাইছেন, বিরোধীরা এককাট্টা হলেও তিনি একাই সবাইকে টেক্কা দেবেন। অনেকে এর মধ্যে তার অহঙ্কারও দেখছেন। একের পর এক ভোটে বিজেপির জয় মোদিকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

আগেভাগেই কৌশল করে বিরোধীরা এ দিন মোদি বক্তব্য শুরু করতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিরোধীদের এককাট্টা দেখে মোদি কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় অন্য দলের সঙ্গে কী রকম আচরণ করেছিল, ইন্দিরা গান্ধী কী ভাবে ৫০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বিরোধী শাসিত রাজ্যে সরকার ফেলে দিয়েছিলেন, তার স্মৃতি উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি।

একই সঙ্গে গান্ধী পরিবারকে লক্ষ্য করে মোদি বলেন, দেশের ৬০০ প্রকল্পে গান্ধী-নেহরু পরিবারের নাম রয়েছে। নেহরুর নামের উল্লেখ না হলে অনেকের চুল খাড়া হয়ে যায়, রক্ত গরম হয়ে যায়। আমাদের না হয় ভুল হয়ে যায়। কিন্তু নেহরুর পরিবারের উত্তরপুরুষরা কেন নেহরুর পদবি ব্যবহার করেন না? এত কীসের লজ্জা?

রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় কাশ্মিরে গিয়ে দাবি করেছিলেন, তার পূর্বপুরুষরা কাশ্মিরি পণ্ডিত ছিলেন। সে কারণেই মোদির এই প্রশ্ন বলে অনেকে মনে করছেন। তবে মোদির এই প্রশ্নকে কোণঠাসা ব্যক্তির মরিয়া আক্রমণ বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাদের বক্তব্য, সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কার নেহরু পদবি ব্যবহারের প্রশ্নই নেই। কারণ তারা নেহরু-কন্যা ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধীর পদবি ব্যবহার করেন।

মোদি গতকাল আবার দাবি করেন, ২০১৪ সালে তিনি ক্ষমতায় আসার আগে কোনো কাজ হয়নি। তিনি আসার পরেই মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছেছে। যে কোনো প্রকল্পের সুবিধা ১০০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা তার লক্ষ্য বলে দাবি করে মোদি যুক্তি দিয়েছেন, এটাই আসল ধর্মনিরপেক্ষতা। কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের ‘তুষ্টিকরণ’ বা দুর্নীতির সুযোগ থাকে না।

ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল প্রশ্ন তুলেছেন, বুধবার বিকেলে মোদিজি লোকসভায় বললেন, নলবাহিত জলের সুবিধা ৮ কোটি মানুষ পেয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বললেন, ১১ কোটি মানুষের ঘরে জল পৌঁছেছে। ২১ ঘণ্টার মধ্যে ৩ কোটি মানুষ জল পেয়ে গেলেন? এই গতিতেই প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু আদানির সম্পত্তি বেড়েছে।

গতকাল রাজ্যসভায় কক্ষ সমন্বয়ের প্রশ্নে বিরোধীদের যে ঐক্য দেখা গেছে তা ভবিষ্যতেও সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বজায় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক গ'ব্রায়েন।

তিনি বলেন, প্রায় সব বিরোধী দলই সরব ছিল। কিন্তু দুই কক্ষ মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার বক্তব্যে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী আদানি-প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন তা তার ঔদ্ধত্যের পরিচয়।

শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র ও সেলসম্যান হিসাবে বছরের সেরা পুরস্কারটি প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া উচিত।

বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে মোদির বক্তব্যের সময় স্লোগান তোলায় তা নিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বিরোধী সাংসদদের কড়া নিন্দা করেছেন। আদর্শ আচরণের কথা মনে করিয়েছেন তিনি। কিন্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে বাজেট নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেসের সাংসদদের বক্তব্যের সময় বিজেপি সাংসদরাও ‘মোদি, মোদি’ স্লোগান তোলেন। ফলে অধিবেশন মুলতবি করে দিতে হয়।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ