শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৪ দালাল ধরে গিয়েছিলেন ইরাকে, ময়লার ভাগাড়ে তিন টুকরায় মিলল লাশ দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প নোয়াখালীতে অটোরিকশা উল্টে প্রাণ গেল নারীর ,আহত-৪ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগর, জেলা ও শাবিপ্রবি’র সহযোগী সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন এডভোকেট এর ইন্তেকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুলঞ্জ ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন সম্পন্ন ইসলামী ব্যাংকের ডিমিনিশিং মুশারাকার মাধ্যমে বাড়ি ক্রয় করা বৈধ হবে কি? শেষ হলো ইফার পক্ষকালব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানমালা সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলায় প্রাণ গেল ৭৫ জনের

ইতিহাসের মুসলিমরা যেমন আছেন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবায়ের বিন আখতারুজ্জামান।।

ইতিহাস৷ অতীতে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনাই একেকটা ইতিহাস৷ যারা জয়ী হয় ইতিহাসে তাদের কথাই লেখা থাকে৷ যারা পরাজিত তাদের পক্ষে সাধারণত ইতিহাস লেখা হয় না৷ আর পরাজিতদের পক্ষ থেকে লেখা ইতিহাসে থাকে প্রচুর বানোয়াট তথ্য৷ বিরোধী দলকে তারা দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে উল্লেখ করে৷ কিন্তু এই ধরনের বানোয়াট ইতিহাসের মধ্যেও কিছু সত্য থাকে৷ বিজ্ঞান ও অগ্রগতির কথা তারা কখনো অস্বীকার করতে পারবে না৷ প্রতিপক্ষের যুদ্ধ কৌশল কেমন ছিল সেটাও বর্ণনা করতে বাধ্য৷

মুসলিমদের যুদ্ধের ইতিহাস:

মধ্যযুগের মুসলিমদের ইউরোপীয় ইতিহাসবিদগণ বর্বর বলে প্রজন্মের সাথে পরিচয় করান৷ কিন্তু মুসলিম ইতিহাসবিদগণ মধ্যযুগে মুসলিমদের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচয় করান৷ কেন এমনটা হয়? পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হয় কেমন? একই সময়তো কোনো জাতির স্বর্ণযুগ ও বর্বরতা হতে পারে না৷ এরূপ প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে কিনা? হ্যাঁ, এরূপ প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে৷ ইতিহাসের ছাত্র নয় বরং ইতিহাস প্রেমিদের কাছে এটা অনেক চিন্তার বিষয়৷ বিশেষ করে মুসলিম ইতিহাস প্রেমীদের তো বটেই৷ আচ্ছা, এখন চিন্তা করে বলুন তো মুসলিমদের বর্বর বলা হয় কোন কোন ক্ষেত্রে? মুসলিমদের বর্বর সব ক্ষেত্রেই বলা হয় না৷ যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন তারা দেখবেন মুসলিমদের বর্বর বলা হয় শুধু মাত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে৷ সামাজিক, পারিবারিক ও বৈজ্ঞানিক জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই মুসলিমদের বর্বর বলা হয় না৷

যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমদের বর্বর বলার যথেষ্ট কারণও তাদের কাছে আছে৷ আর থাকাটাই স্বাভাবিক৷ কোনো জাতিকে তো যুক্তি ও প্রমাণ ছাড়াই দোষারোপ করা যায় না৷ চলুন বদরের যুদ্ধ থেকে শুরু করে কয়েকটা যুদ্ধের উদাহরণ দেই৷

১. বদরের যুদ্ধ: ইসলাম সবে মাত্র জন্ম গ্রহণ করছে৷ কিন্তু তার উপরই চেপে বসেছে কাফের সৈন্যরা৷ যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই নইলে চিরজীবনের জন্য ইসলাম ধর্ম বিলীন হয়ে যাবে৷ এমতাবস্থায় মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা নিয়ে ১০০০ কাফের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী লাভ করলেন৷ এটাকে অমুসলিম ইতিহাসবিদগণ বর্বরতা ছাড়া কি-ইবা বলতে পারে?! তারা তো আর আল্লাহর রহমতে বিশ্বাসী নয়৷

২. খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর যুদ্ধ সমূহ: খালিদ বিন ওয়ালিদের যুদ্ধগুলোকে আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন মনে করছি না৷ উনার বীরত্বের দরুন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপাধি দিয়েছিলেন আল্লাহর তরবারি৷ আমাদের চোখে আল্লাহর তরবারি কি কোনো যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে পারে? যদিও তার যুদ্ধের কলা কৌশলগুলো অত্যান্ত নিখুঁত ও সুন্দর ছিল৷ তার সমর কৌশলগুলো বর্তমান সমরবিদদেরকেও তাক লাগিয়ে দেয়৷ তার নেতৃত্বেই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যগুলো পরাজয় বরণ করে৷ মুসলিমরা তরবারির মাথা দেখে জান্নাত আর কাফেররা দেখে মৃত্যু৷ যার কোনো মৃত্যু ভয় নেই তার সাথে পেরে উঠবে কে? পরাজিত ঐতিহাসিকদের নিকট এটা বর্বরতা৷

৩. আইনে যালূতের যুদ্ধ: এখানে দাউদ আ. এর সাথে যালূতের যুদ্ধের কথা বলছি না৷ বরং মোঙ্গলদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধের কথা বলছি৷ যেই মোঙ্গল জাতিরা অতি অল্প সময়ে সারা বিশ্বের শান্তি নষ্ট করে সব দখল করে নেয় ৷ যারা নাকি মানুষের রক্ত পান করত৷ ঐতিহাসিকদের ভাষ্যমতে মোঙ্গলরা বাগদাদে ২০ লক্ষ মুসলিম হত্যা করেছে৷ তারাই আইনে যালূতে এসে মুসলিমদের বর্বরতার স্বীকার হলো৷ এ কেমন কথা? প্রায় সব ঐতিহাসিকদের মতেই মোঙ্গলদের দ্বারা মানবজাতির জন্য কোনো একটি ভাল কাজই হয়নি৷ সেই মোঙ্গলরাই আইনে যালূতে এসে সাইফুদ্দিন কুতুযের নিকট পরাজয় বরণ করে নিল৷ এরপর থেকেই মোঙ্গলদের পরাজয়ের ধ্বনি বাজতে শুরু করল। প্রতিপক্ষের ঐতিহাসিকরা ভালভাবেই বলতে পারে মুসলিমরা মোঙ্গলদের থেকে বেশি বর্বর ছিল বিধায় মোঙ্গলরাও তাদের কাছে পরাজয় বরণ করেছে৷

৪. ভারত আক্রমণ: প্রতিশোধের জের ধরে মুসলিমরা সর্বপ্রথম ভারত আক্রমণ করে৷ রাজা দাহিরের অত্যাচারের জবাব দিতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ১৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন কাশিম কে সেনাপ্রধান করে ভারতে পাঠান৷ ভারতের একজন ক্ষমতাধর রাজা দাহির যুদ্ধে বিন কাশিমের সাথে পরাজয় বরণ করে৷ এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ বর্বর বলেই উল্লেখ করেন৷

মুসলিমদের বিজ্ঞান ও অগ্রগতির ইতিহাস: মধ্যযুগ হচ্ছে মুসলিমদের অগ্রগতির স্বর্ণযুগ৷ মধ্যযুগে মুসলিমরা সব চেয়ে বেশি অগ্রসর ছিল এক্ষেত্রে কোনো ঐতিহাসিকগণ দ্বিমত পোষণ করে নি৷ চিকিৎসাবিদ্যা, সমরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ও গণিত ইত্যাদি কোনো বিষয়ে মুসলিমদের সাথে টক্কর দেওয়ার মত কেউ ছিল না৷ এর আবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ তৎকালীন খ্রিস্টান সম্রাটেরা বৈজ্ঞানিকদের উপর প্রচুর অত্যাচার করত আর বিজ্ঞান চর্চায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করত না৷ এর মূল কারণ বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা লব্ধ সূত্রাবলী ও ফর্মূলা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলের সাংঘর্ষিক হত৷ পক্ষান্তরে মুসলিমদের সূত্রাবলী ও ফর্মূলা কুরআনের সাথে মিলে যেত৷ সেই কারণেই মুসলিম সম্রাটেরা বিজ্ঞান চর্চায় বৈজ্ঞানিকদের সহায়তা করত৷ আর খ্রিস্টান সম্রাটেরা বিজ্ঞান চর্চায় বিরোধিতা করত৷

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিমদের যে সকল ক্ষেত্রে বর্বর বলা সেটা মূলত রাগ ও ক্ষোভের কারণে বলা হয়৷ যদি কোনো জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর হয় সে জাতি কখনও বর্বর হতে পারে না৷

আরো পড়ুন: ইসলামের ইতিহাস পাঠে সাবধানতা জরুরি

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ