রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটিও নিয়ে কোনো চুক্তি নয়: প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বক্তা আমির হামজার ক্ষমা প্রার্থনা, সতর্ক করল জামায়াত আফগানের পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের আলেম প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ ধর্মীয় অনুশাসনের শিথিলতা পরিবারব্যবস্থা সংকটাপন্ন করে তুলছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত না দিলে খারাপ কিছু ঘটবে, হুমকি ট্রাম্পের আ.লীগকে দল হিসেবে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত : নাহিদ ইসলাম সিলেটে ১ মাস ধরে নিখোঁজ আবিদুল মিয়া সিলেট মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুব জমিয়তের আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন- আহমদ আবদুল কাইয়ূম জেদ্দায় হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী নভেম্বরে

তুরস্কের করোনা প্রতিরোধ ও জনকল্যাণ মূলক ব্যবস্থা: একটি পর্যালোচনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা.রিফাত আল মাজিদ।।

করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ তুরস্ক। ইউরেশিয়ান এ দেশটি দীর্ঘ দু'মাস ধরে করোনার সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ তুরস্ক। যে দেশটির সরকার শুধু নিজ দেশের জনগণের পাশেই দাঁড়ায়নি, সহযোগিতায় সদা উদার হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা থেকে সোমালিয়া, রোম থেকে ঢাকা।

ষাটের অধিক দেশে চিকিৎসা সামগ্রী উপহার দিয়েও নিজ দেশের আট কোটি জনগণকে চিকিৎসা সেবায় কিঞ্চিত ত্রুটি করেনি। যে দেশেই তুর্কি নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয় সে দেশেই উড়ে যায় তার্কিশ এয়ার এমবুলেন্স। সেদিন সুইডেনের এক অঞ্চলে নিভৃত একটি ঘরে চিকিৎসা বঞ্চিত করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে অসহায় হয়ে কষ্টের জল ফেলতেছিল তুর্কি তরুণী লায়লা।

কে পারবে চোখের সামনে জন্মদাতা পিতার নির্মম শ্বাস কষ্টের যন্ত্রণা সহ্য করতে! নিরুপায় হয়ে সাহায্যের প্রার্থনা চেয়ে সোসাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করে অসহায় মেয়ে। ভিডিও টি চোখে পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাক্তার ফাহরেদ্দিন কোজার। কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই সকালে সুইডেন থেকে এয়ার এমবুলেন্সে নিয়ে আসে বাবা-মেয়ে কে। শুধু লায়লার বাবাকেই নয়, সুদান, রাশিয়া ও জার্মানিসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে তুর্কি নাগরিকদের নিজ দেশে এনে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে বসফরাসের এই দেশটি।

প্রথম করোনা সনাক্ত হয় ১১ মার্চ। দু' তিন জন সনাক্ত ও একজনের মৃত্যু হতেই নড়েচড়ে বসে তুরস্কের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। গঠন করা হয় চিকিৎসা বোর্ড। বন্ধ করে দেয় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি এবং মসজিদগুলো। একে একে যখন করোনার ছোবল বাড়তেই থাকে তখন নির্দিষ্ট কিছু দোকান ছাড়া সকল মার্কেট ও যানবাহন বন্ধ করে দেয়। ছুটির দিনগুলোতে জারি করা হয় কার্ফিউ। ২০ বছর এর কম এবং ৬৫ বছরের অধিক বয়সী জনগণকে ঘর বন্ধী থাকার আইনে নিয়ে আসা হয়, অন্যথায় জরিমানার আইন কার্যকর করা হয়। সকল ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয় অনলাইনে।

মাস্ক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ করে নাগরিকদের জন্য তা ফ্রিতে বিতরণ করা হয়। অসহায়, গরিবদের জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ ১০০০ লিরা তাদের একাউন্টে পে করা হয়। প্রয়োজনে খাবারের জন্য যে কেউ ই-গভর্নমেন্ট থেকে আবেদন করতে পারে। আমার বাসায় এ পর্যন্ত পাঁচ বার দশ-পনেরো কেজি করে খাবার রেখে গেছে।

আমি এখন নিষেধ করে দিছি, আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিতে বলেছি। স্বাস্থ্য কর্মী ও ডাক্তারদের উৎসাহ দিতে আয়োজন করা হয় একযোগে কড়তালির। সকল নাগরিক নিজ ঘরের বেলকুনিতে দাড়িয়ে ডাক্তার ও নার্সদের সম্মানে প্রতি রাত ৯ টায় কড়তালি দিবে। সফল রাষ্ট্রনায়ক এরদোয়ান "আমরাই আমাদের জন্য যথেষ্ট স্লোগানে গঠন করেন একটি ত্রান তহবিল।

যেখানে কেউ দান করেন পাঁচ-ছয় মাসের বেতনের সম্পূর্ণ অর্থ কেউবা আবার পাঁচ-দশ লিরা। যেটি এখন তুর্কি নাগরিকদের দানে বিলিয়ন লিরার একটি তহবিলে পরিণত হয়েছে।

এ পর্যন্ত পনেরো লাখ টেস্ট করা হয়েছে যার মধ্যে দেড় লাখের মতো আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা চার হাজার। সুস্থ হয়েছে লক্ষাধিক। কিছু দিন আগেও যেখানে দৈনিক পাঁচ হাজার আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ছিল শতাধিক, সেটা এখন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। সুস্থতার হার আক্রান্তের হারের দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে বলা যায় , তুরস্ক তুলনামূলকভাবে কভিড-১৯ কে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে ।

এভাবেই দল মত নির্বিশেষে সকল জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সরকারের নিত্যনতুন পরিকল্পনায় তুরস্ক করোনা মোকাবিলায় সফলতার দ্বার প্রান্তে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ