রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী আরও দুই নেতা যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর

একজন কওমি শিক্ষকের চাপা কষ্ট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুমিনুল ইসলাম।।

আমরা জানি একজন সাধারণ কওমি মাদরাসার শিক্ষকের জীবন কীভাবে চলে। একজন সাধারণ বা মধ্যম পর্যায়ের শিক্ষকের বেতন মোটামুটি সাত থেকে ১২ হাজার টাকার ভেতরে। এর মধ্যেও দেশের কিছুসংখ্যক মাদরাসা আছে, যারা প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন সম্পূর্ণ দিতে পারে না। আবার কিছু কিছু মাদরাসায় শিক্ষকদের বেতন ২-৩ মাস বাকিও থেকে যায়। এরমধ্যে সিংহভাগ শিক্ষক আছেন, যাদের মাদরাসার সীমিত বেতন ছাড়া অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই বললেই চলে। তবুও এই সীমিত বেতনে, সীমাহীন বরকত দিয়েছেন মহান সৃষ্টকর্তা।

গত ১৯ মার্চ করোনা মহামারির কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হঠাৎ করেই দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে দেশের অধিকাংশ মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন ছাড়া খালি হাতেই বাড়ি যেতে হয়। মুষ্টিমেয় কিছু মাদরাসায় শিক্ষকদের আংশিক বেতন অথবা শুধু বাড়িতে যাওয়ার ভাড়া দিয়ে বিদায় দিয়েছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

আমার জানা মতে, বর্তমানের বহু প্রাইভেট বা কমিটিভিত্তিক মাদরাসা আছে, যারা গত মার্চ মাসের বেতন এখন পর্যন্ত পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেননি। একটি বার কি সেই সব মাদরাসা শিক্ষকদের কথা ভেবে দেখেছেন? যারা এখনো বেতন পাননি তারা কীভাবে এই লকডাউনের সময়গুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিবাহিত করবেন? হয়তো সামাজিক ভাবমূর্তির কারণে এসব শিক্ষক কারও কাছে কিছু চাইতে পারছেন না, আবার ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতেও পারছেন না!

এইতো কিছুদিন আগের কথা, গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি সাহেব তার ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন, ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ধামদি গ্রামের এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে জানায় তার ঘরে ছয়জন মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, তিনি টঙ্গীর একটি কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন (মাদরাসার নামটি সঙ্গত কারণে বলা যাচ্ছে না)। এবং ওই রাতেই থানা থেকে তার বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি।

এরকম আর বহু মাদরাসা শিক্ষক আছেন যারা বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আবার কোনো মাদরাসার শিক্ষক বেতনের জন্য মুহতামিম সাহেবকে ফোন দিলে মুহতামিম সাহেব ঠিকমত ফোন ধরছেন না বলে জানা যাচ্ছে। ফোন ধরলেও নাকি বলছেন, বেতন দিতে পারবেন না! ফান্ডে টাকা নেই! মাদরাসা খুললে বেতন দেবেন! ছাত্ররা নাকি বেতন দেয়নি, তাই দিতে পারছেন না। এরকম নানা অজুহাত দিচ্ছেন তারা।

মাঝে মাঝে এসব কথা উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। যদিও এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা অনুসন্ধান করে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। ইচ্ছে করলে করোনার এই দিনগুলোতে মাদরাসা শিক্ষকদের অন্তত আংশিক বেতন চালিয়ে যাওয়ার মতো একটি ফান্ড তৈরি করা যায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কমিটি বা এলাকার আর্থিক সচ্ছল লোকদের নিয়ে এ ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ মাদরাসা কমিটিভিত্তিক পরিচালিত।

আসল কথা হচ্ছে, কিছু কিছু মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদিচ্ছা এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঠিক পদক্ষেপ না থাকার কারণে আজ এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের এবং বারবার উঠে আসছে এসব ঘটনা।

কেন একজন শিক্ষককে বাধ্য হয়ে সরকারি হেল্পলাইনে ফোন দিতে হচ্ছে আজ? কেন একজন শিক্ষককে মাদরাসার কর্তৃপক্ষের কাছে ভিক্ষুকের মতো বারবার বেতন চাইতে হচ্ছে? কোথায় গেল আজ আমাদের মানবিকতা? মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম, আমাদের মুরুব্বিগণ এবং মাদরাসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ যারা আছেন, তাদের সমীপে শ্রদ্ধার সাথে আরজ করছি! আপনারা কি এই দুই লাখ শিক্ষকদের দায়িত্ব নেবেন? এই শিক্ষকদের নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী? আপনারা কি একটিবার আপনাদের অধীনস্তদের কথাগুলো ভেবে দেখেছেন? আপনারা তাদের খোঁজ নিচ্ছেন সঠিকভাবে? কীভাবে তারা করোনার এই দিনগুলো অতিবাহিত করছেন বা আগামী দিনগুলো কীভাবে অতিক্রম করবেন। নিশ্চয়ই কোনো দায়িত্বশীল অভিভাবক দুর্দিনে অধীনস্থদের ভুলে যান না!

লেখক: জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমাদ মাদরাসা মানিকনগরের শিক্ষক

-এএ


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ