রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী আরও দুই নেতা যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর

তারাবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় দিশেহারা লক্ষাধিক হাফেজে কুরআন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ রিজওয়ান ।।

আগেই বলে রাখি! আমি নিজেই এক মসজিদের খেদমতে আছি। মাহে রমযানে দায়িত্বরত মসজিদে তারাবির নামাজও পড়িয়ে থাকি। এখন লকডাউন সমাচারে মসজিদের ভিতরে আবদ্ধ হয়ে আছি। কোথাও যেতে পারি না, কেউ মসজিদে আসতে পারে না। ইতিপূর্বে ওয়াক্তিয়া নামাজে দু চার শত, আর জুমার নামাজে পাঁচ ছয় হাজার মুসল্লীদের নিয়ে নামাজ পড়িয়ে আসছি।

বর্তমান করোনা ভাইরাসের কারণে উলামায়ে কেরাম ও সরকারী দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চারজন মসজিদ স্টাফকে নিয়ে নামাজ পড়িয়ে যাচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে, অন্তরে সর্বদা রক্তক্ষরণ হচ্ছে, মুসল্লীরা কাঁদছে, মসজিদের প্রধান ফটক/গেইটের বাহিরে মুসল্লীরা দাঁড়িয়ে মসজিদের দিকে ফেলফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে।

গত জুমার দিন দেখেছি অনেক প্রিয় মুসল্লী ভায়েরা হাতে জায়নামাজ নিয়ে মসজিদের সামনে এসে গেইট বন্ধ দেখে হাউমাউ করে চিৎকার আর আহাজারি করছে। শেষ পর্যন্ত ভারাক্রান্ত অন্তরে অশ্রুসিক্ত হয়ে ফিরে গিয়েছে। কেউ মোবাইলে খোজ খবর নিচ্ছে আবার কেউ বাহিরে দাঁড়িয়ে দেখা করে যাচ্ছে। জানিনা আর কতদিন এভাবে চলবে.?

হ্যাঁ. কিছু করারও নেই, দেশের পরিস্থিতি খুবি ভয়াবহরূপ ধারণ করে চলছে, দৈনন্দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলছে, আজ প্রায় ২১৯ জনের মাঝে নতুন ভাবে করোনা সনাক্ত হয়েছে। সুস্থতার চেয়ে বেশি মৃত্যু বরণ করছে। আল্লাহ হেফাজত করুন আমীন।

এবার একটু ভিন্ন কথা! দেশ যখন এই সংকটময় পরিস্থিতির দারপ্রান্তে, ঠিক সে মুহূর্তেই বছর ঘুরে মাহে রমযান রহমত মাগফিরাত আর জাহান্নামের মুক্তির পরওয়ানা নিয়ে আমাদের দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত হয়েছে। মাহে রমযানে মসজিদে জামাতের সাথে তারবির নামাজ হবে কি না? এ নিয়ে বাংলাদেশের লক্ষাধিক হাফেজে কুরআন অনিশ্চিত পথের পথিকের মত দিশেহারা হয়ে আছে। অনেক মসজিদের নতুন হাফেজের প্রয়োজন আবার অনেক হাফেজের নতুন মসজিদ প্রয়োজন, মসজিদ কমিটি এবং হাফেজে কুরআন উভয় সিদ্ধান্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।

এ নিয়ে অনেক উলামায়ে কেরাম ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, লেখালেখিও করছেন, আমি নিজেও আমার ফেসবুক পাতায় জাতির কর্ণধার হযরত উলামায়ে কেরাম ও বিজ্ঞ মুফতিগণের প্রতি উক্ত বিষয়ে শরয়ী সমাধানের আবেদন জানিয়েছি। এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে আশার হালও ছাড়িনি।

এদিকে গতকাল পাকিস্তানের আল্লামা মুফতি ত্বকী উসমানী সম্মিলিত উলামায়ে কেরামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে পাকিস্তানের মসজিদগুলো লকডাউনমুক্ত করে নামাজ ও তারাবির জন্য উম্মুক্ত করে দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতঃ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। অন্যদিকে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববীসহ আরব আমিরাতের প্রায় মসজিদে খতমে তারাবিহ স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

আশা করি, আমাদের বাংলাদেশের দায়িত্বশীল উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে ইযাম উক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও ধর্মমন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে তারাবিহের ব্যাপারে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এনিয়ে আবেগতাড়িতা আর বাড়াবাড়ি একেবারেই কাম্য নয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের জন্য দায়িত্বশীলদের থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা তাই মেনে নিব। ইনশাআল্লাহ।

অবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি। খতমে তারাবিহ নিয়ে আমাদের দেশে হুফফাজদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন -

১। মাহে রমযান যেহেতু পবিত্র কুরআনের মাস, তাই অনেক হাফেজে কুরআন মাহে রমযানকে কুরআন তেলাওয়াতের মহা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে এবং সারাদিন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। কোন পারিশ্রমিক বা হাদিয়া গ্রহণ করা ছাড়াই মাসব্যাপী খতমে তারাবিহ পড়িয়ে নিজের গুরুদায়িত্ব আদায় করে আত্মতৃপ্তি গ্রহণ করে।

২। আবার অনেক এমনও আছে যারা শুধুমাত্র নামের হাফেজ। কুরআন ভুলে গিয়েছে। ইয়াদ বলতে কিছুই নেই। তারা মাহে রমযানকে কঠিন পরীক্ষা হিসেবে মনে করে। কারো চাপের মুখে একপ্রকার বাধ্য হয়ে খতমে তারাবিহ পড়িয়ে থাকে। তাদের পারিশ্রমিক ও হাদিয়ার প্রতিও তেমন খাহেশ থাকেনা। তাদের এমন মন মানসিকতা যে, তারাবিহ না পড়িয়ে কি ভাবে রক্ষা পাওয়া যায়।

৩। আবার কেউ কেউ মাহে রমযানকে আর্থিক সঞ্চালনের মহা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। কুরআন তেলাওয়াত তো দূরের কথা সারাদিন শুধু দুআ মিলাদ ও রুসমী খতম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কুরআন মুখস্থতায় তারা অনেক দুর্বল, অশুদ্ধতার ঘাটতি নাই। শুধু সাতাইশ তারিখের অপেক্ষায় থাকে। মনে কত জল্পনা আর কল্পনা। কবে সাতাইশা আসবে.? কত দিবে.? মোবাইল কোনটা ক্রয় করব.? ইত্যাদি। তারা মনে করে পুরা রমযান টা তাদের মৌসমী ব্যবসাহের মাস।

বর্তমানে এরাই (তৃতীয় পক্ষ) খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি উদার আর উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। আল্লাহ না করুন! এ বছর খতম তারাবিহ না পড়াতে পারলে যেন তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। ফলে তারা বিভিন্ন যুক্তি পেশ করে বিভ্রান্ত চড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আর কিছু বলব না! তিক্ত মনে হলেও অভিজ্ঞতার আলোকে সত্য কথা বলেছি। কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চাই, দুআ চাই। আল্লাহ তাআলা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে দিন এবং আমাদেরকে হক্ব ও হক্কানিয়্যাতের উপর সর্বদা অটল অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন আমীন।

লেখক খতীব- উত্তর আদাবর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া আহসানুল উলুম। মুহাম্মদপুর আদাবর ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ