সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৭ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
কাদিয়ানিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করুন: সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মরক্কোতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ দাওয়াত ও তাবলিগের নীরব বিপ্লব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য-কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে বাস পাল্টায়, গন্ধে ১৪ কেজি গাঁজাসহ ধরা খেল তরুণী দুপুরের মধ্যে সাত অঞ্চলে ঝড়ের আভাস সত্তর হাজার কালেমা পড়লে কি মাগফিরাত পাওয়া যায়? ঢাবির হল রিডিংরুমে বসছে এসি, সংস্কার হবে ক্যান্টিনও: ডাকসু জিএস ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা মাদরাসা ছাত্রী, অভিযুক্ত জামায়াতকর্মী গ্রেপ্তার. ইসলামকে একটি বার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ শায়খে চরমোনাইয়ের

প্রযুক্তির প্রভাবে জাপানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জনের আত্মহত্যা, লাশগুলো পঁচে গলে থাকে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম।।

জাপানে প্রতি দশ জনে এক জন একাকি মৃত্যু বরণ করে। একটি রুমে মরে পচে গলে গন্ধ বের হলে লোকে জানতে পারে এই ঘরে একাকী বাস করা লোকটি মারা গেছে! তার লাশ সৎকারেরও কেউ থাকে না।

বিবিসির এক প্রতিবেদন জানায়, ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাপানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। সেই হার এখন আরো বেশি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে দক্ষিণ কোরিয়া বাদে অন্য কোনো দেশে আত্মহত্যার হার এত ব্যাপক নয়।

ঢাকার খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, ডা. মশিউর রহমানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাপানে যারা আত্মহত্যা করে, তাদের লাশ পঁচে গলে গন্ধ বের হলে পোকা মাকড় মশা মাছিতে ভরপুর এসব মৃত দেহ পরিষ্কারের জন্য সাফাই নামক অসংখ্য কোম্পানি সেগুলো পরিস্কার করে।

মৃত্যুর আগে অনেক মানুষ এসব কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে রাখেন যাতে তারা মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করে।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, জাপানিদের আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো প্রযুক্তি নির্ভর জীবন। মানুষকে রোবটের মত করে তুলে যে জীবন। যতটা প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তাদের সমাজ, তটাই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

জাপানের বিশেষজ্ঞ মি. নিশিদা বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর জাপানের সমাজে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করার খুব একটা সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা ও অনিরাপত্তার পাশাপাশি অভিযোগ না করার মানসিকতার সংস্কৃতিও বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন তিনি।

প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং প্রসার তরুণদের আরো বেশী সমাজবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

তিনি আরো বলেন, দিনদিন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং প্রসারের কারণে এই অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে জাপানে। আধুনিক প্রযুক্তি তরুণদের সমাজ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন করছে। আর তারা যতটা সমাজ থেকে দূরে যাচ্ছে ততই মৃত্যুর ‍দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার এই প্রবণতার একটি বিশেষ নামও রয়েছে জাপানে; এটিকে বলা হয় ‘হিক্কিমোরি’। জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, হিক্কিমোরি হলো সেসব ব্যক্তি যারা ৬ মাসের বেশি সময় ধরে নিজেদের বাড়ির বাইরে বের হয় নি এবং নিজেদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। জাপানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে জাপানে হিক্কোমোরি হিসেবে বসবাসরত ব্যক্তির সংখ্যা ৭ লক্ষ।

জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু আত্মহত্যা করেছে গত বছরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রাথমিক থেকে হাইস্কুলের ২৫০ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

১৯৮৬ সালের পর থেকে জাপানে এত বিপুল সংখ্যক শিশু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। আত্মহত্যার আগে ঐসব শিশুরা যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে পারিবারিক সমস্যা, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং বন্ধুদের কাছ থেকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য পূর্ণ ব্যবহার।

তবে স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এসব ঘটনার ১৪০টিরই সঠিক কারণ তারা জানে না কারণ সেসব ক্ষেত্রে শিশুরা আত্মহত্যার আগে কোনো নোট রেখে যায়নি। আত্মহত্যা করা অধিকাংশ শিশুই হাই স্কুলের শিক্ষার্থী। ১৮ বছরের কম বয়সী জাপানি শিক্ষার্থীরা সাধারণত এসব স্কুলে পড়ে।

২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা প্রবণ দেশগুলোর একটি ছিল জাপান; তবে এই প্রবণতা বন্ধ করতে জাপান সরকার বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয় বলে উঠে আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে। ২০০৩ সালে জাপানে মোট আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ৩৪ হাজার ৫০০টি, যা কমে ২১ হাজারে নেমে আসে ২০১৭ সালে।

ডা. মশিউর রহমান এ বিষয়ে আরো বলেন, আধুনিক সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা একাকীত্ব! বিয়ে করেও একা না করেও একা! টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি সব আছে শুধু একাকীত্ব গোছানোর মানুষ নেই। ছোট বেলায় আমাদের শোভাকলোণীতে দেখতাম মানুষ মানুষে কত একটা মেলামেশা ছিলো! এখন কিছু নেই! ঈদ কোরবানেও এখন আর সেই আমেজ নেই!

শহরের কথা কি আর বলবো! কাছে থেকেও যেনো অচেনা! এক রিক্সা চালককে জনৈক লোক বলছে ভাই এখানে থেকে ওখানে কত কাছে চোখে দেখা যায় রাস্তা তুমি এতো ভাড়া বলছো কেনো! রিক্সা চালক বললো, দেখা গেলে কি সবকিছুকে কাছে বলা যায়! চাঁদও তো দেখা যায় কিন্তু কত দূরে!

সত্যি ভাই মনে হচ্ছে খুব কাছাকাছি আছি কিন্তু সবাই কাছে থেকেও অনেক দূরে সরে গেছি আমরা! শুধু এ প্রযুক্তির কারণে। ফেসবুকের চ্যাট খুললেই সব আপন বন্ধুরা নীল হয়ে জ্বলজ্বল করছে কিন্তু খবর নেওয়া হয় না কারণ এমন খবর নিয়ে কি হবে যে খবরে গায়ের গন্ধ পাওয়া যায় না!

পৃথিবী হাতে মুঠোয় চলে আসছে কিন্তু হাতের দৈর্ঘ্য এতো বেশী যে প্লেন দিয়েও এপাশ থেকে ওপাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! আমি এখন সমাজে একাকী মরে যাওয়া বাবাগুলোকে দেখি যারা মরে যাওয়ার খবরে তার সন্তানরা দেশে আসতে পারে না, ইউরোপ ল্যাটিন আমেরিকার কোন দেশ থেকে ভিডিও কলে বাবা শেষকৃত্য দেখে জন্মদাতার বিদায় অবলোকন করে!

জীবন এখন দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না! কিছুদিন আগে অভিনেত্রী তাজিনের একাকী মৃত্যু ভাইরাল হয়েছিলো, এক দিন মরে গিয়ে কঙ্কাল হয়ে থাকবো আমরাও কারণ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ক্লাশে শ্রদ্ধেয় মঈনুল ইসলাম স্যারের কথা মনে পড়ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রী হলো পরিবার! যা ভেঙ্গে গেলে দেশও একদিন ভেঙ্গে যাবে!

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এখন একটি সন্তান মানে একটি দেশ বাঁচার আশা। ওদের দেশে চলছে ‘সন্তান জন্ম দেন দেশ বাঁচান’। তাই দেশ বাঁচাতে হলে পরিবার বাঁচান, সমাজ বাঁচবে মানুষ বাঁচবে। সূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ