রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
সিলেটে ১ মাস ধরে নিখোঁজ আবিদুল মিয়া সিলেট মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুব জমিয়তের আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন- আহমদ আবদুল কাইয়ূম জেদ্দায় হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী নভেম্বরে আজ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিস বানিয়াচং উপজেলা শাখার ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন ‘নীলনদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতেও ইসলাম নেই’ কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল, সম্পাদক মাজহারুল ‘ইসলামি শক্তির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন’ গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনা, নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা

অসহিষ্ণু পুলিশ আজ বিনোদনের পাত্র; দায়ভার কার?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এ এস এম মাহমুদ হাসান
গণমাধ্যমকর্মী

শেষ নব্বইয়ের দশকেও আমরা পুলিশের কাঁধে ঝুলানো রাইফেল দেখে টিপ্পনি কাটতাম। সন্দেহ হতো, এই রাইফেল আদৌ কার্যকর কিনা, রাইফেল দিয়ে গুলি বের হয়েছে কিনা। সেই জমানায় পুলিশের দায়িত্বশীল পদক্ষেপের কারণে মানুষের মাঝে সচেতনতা ছিল। অপরাধ সংক্রমণ, অপরাধ প্রবনতা লঘু ছিল।

কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় অসাধু নীতি ও অগণতান্ত্রিক পথে রাজনীতির যাত্রা ক্রমশই হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। ফলে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর মাঝে জনসচেতনার বদলে জনবিরোধী আক্রমণাত্বক হিংস্র আচরণ আমাদের প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে।

বিপরীতে মানুষ পুলিশ বাহিনীকে রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি মনে করে রাজপথেই তাদের মনের ক্ষোভ উগরে দিতে চাচ্ছে। ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছে ওদের অসাদাচার।

অবৈধ অর্থ উপার্জনে আশায় মানুষকে ভয় দেখানো, ক্রসফায়ারের হুমকি ও মিথ্যা মামলাসহ নানা নজির আছে এ বাহিনীর। কারণে-অকারণে গুম, খুন করে জন সাধারণের মনে ভীতি সঞ্চারের কাজও তারা করেছে।

মানুষ রাষ্ট্রের কাছে প্রথমেই তার নিরাপত্তার প্রশ্নে সন্দিহান হলে পুরো দেশ জুড়ে দৃশ্যমান অট্টালিকা তৈরি ও কয়েকটি পদ্মাসেতুর জন্ম দিলেও মানুষের মনে সরকারের জায়গা করে নেওয়া দূরহ ব্যাপার। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশের জনগণ প্রথমেই নিজের অবাধ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা চায়। তারপর যথাক্রমে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সুরক্ষা। এর পরের স্টেপে থাকে রাষ্ট্রের অবকাঠামোর উন্নয়ন।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে, আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবে। জনসাধারণের বহুমাতৃক সেবায় নিরুপণ হবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা না আসার হিসেব। এটাই স্বাভাবিক।

অপরদিকে রাষ্ট্র পরিচালনা ও সুশৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশ বাহিনীর নিঃস্কলঙ্ক পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত হবে। কিন্তু রাষ্ট্রেীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে নির্মম কায়দায় জনগণ দমানোর কাজে লেলিয়ে দেওয়ার পরিণতি গত চারদিন ধরে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের লাখো মানুষের সমাবেশে রাতের আঁধারে গোলা বারুদ খরচ করে এক পৈশাচিক দানবীয় কায়দায় লাখো পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনা মানুষ সোজা ভাবে মেনে নেয়নি। যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর কামান, সাজোয়া যানের অপব্যবহার, গণহারে গ্রেফতার ও পুলিশি রিমান্ড, আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যায়িত করে ‘একেবারে খাইয়া ফালামু’ হুমকির মত কু-দৃষ্টান্তও মানুষ দেখেছে।

গোটা দেশের মধ্যে পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের এমন হাজারো দৃষ্টান্ত আজ মানুষের কাছে রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, গুম-খুনের সাথে জড়িয়ে পড়া, দুষ্কৃতি, আইনের অপব্যবহার এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, মানুষ নিজের জান মালের নিরাপত্তার জন্য খোদ এই পুলিশ বাহিনীকেই এখন হুমকি মনে করছে।

গত শনিবার কুর্মিটোলায় দুটি বাসের ‘রেষারেষিতে’ দুজন শিক্ষার্থী মারা যায়। সেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিভিন্ন স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে বিচার চাইতে গেলে পুলিশ বাহিনীও পৌশাচিকতার পরিচয় দেয়।

সড়কে নিজের নিরাপত্বা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাওয়া ১৪-১৬ বছরের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর হামলে পড়ে, জখম করে, গ্রেফতার করে পুলিশ তাদের দাম্ভিকতার পূনরাবৃত্তি ঘটায়।

রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্র সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে অনৈতিকভাবে নিজ স্বার্থে কলুষিত করলে রাষ্ট্রের স্পষ্ট অপমান। ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে ও প্ররোচনায় আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনীকে হিংস্র করে তোলার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত পাঁচ দিন ধরে রাজপথে চলা ছাত্র আন্দোলনে।

শুনতে কুরুচিপূর্ণ নানান শ্লোগানে পুলিশকে প্রতিহত করার তথ্য ও ভিডিও একেরপর এক প্রকাশ পাচ্ছে। পুলিশের গাড়ি আটকিয়ে গাড়ির ও ড্রাইভারের লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছে ছাত্ররা। হেলমেট ছাড়া পুলিশ বাইক চালানোয় ছাত্ররা ঘিরে ধরে পুলিশের টাকলা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কেউবা চিপ্স খাইয়ে পুলিশ থেকে বাড়তি বিনোদন খুঁজছে।

শুধু পুলিশ নয়, সরকারের অপশাসনে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হাতে (এ লেখা তৈরি পর্যন্ত পর্যন্ত) সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অন্তত দু’জন মন্ত্রীও এ গ্যারাকলে পড়েছেন। মন্ত্রীদ্বয়ের গাড়ির ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকায় পুলিশি প্রটোকল থাকা সত্বেও তারা ছাত্রদের বাধায় গন্তব্যে যেতে পারেননি। এগুলো স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় থাকা পুলিশের জন্য অপমানজনক।

রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্বা ও সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর এমন অপমানিত হওয়া তাদের প্রাপ্য ঠিকই। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থা, ক্ষোভের মাত্রা এর থেকেই যথেষ্ট অনুমান করা যায়।

যারা জনগণের সেবক, নিরাপত্তা বিধায়ক, তারা যদি এভাবে জনগণের হাতে অপমানিত হন। তাহলে জনগণের ন্যায় বিচার পাওয়ার আস্থার জায়গা আর কোথায় থাকল? পুলিশ তার আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সামাজিক ভাবে জনগণের পক্ষ থেকে প্রাপ্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সন্মান বলি দিয়ে জনগণ, পুলিশ ও রাষ্ট্র ত্রিধারাই অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখিন হলো।

সুতরাং যারা নিজ ও দলীও স্বার্থে জনগণের মাঝে পুলিশ বাহিনীকে কখনো হিংস্র আবার কখনো হাসির পাত্র বানিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীকে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটিয়ে জনগণের ভয় ও বিনোদনের বস্তুদ্বয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন।

মনে রাখতে হবে, তারা রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল শক্তি নষ্ট ও সমূলে ধ্বংস করে ফেলেছেন।

তারা হয়ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়মানুযায়ী ক্ষমতায় পালা বদলাতে থাকবেন। কিন্তু মানুষের যত্নে ও অর্থে গড়া পুলিশ বাহিনীর বিকিয়ে যাওয়া সন্মান ও আদর্শ তারা কি আদৌ ফিরিয়ে দিতে পারবেন?

পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভরসা জন্মাতে পারবেন? নাকি তাদের ‘হিংস্র পুলিশ- জোক্স পুলিশ’ এই দু’বৃত্তে আটকিয়ে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাবেন?

নিরাপদ সড়ক কিভাবে সম্ভব?

-আরআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ