বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২১ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি ২ তরুণ নিহত মারকাযুল উলূম খুলনা'র ২০ তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল শুক্রবার  অনশনরত তারেকের পক্ষে সংহতি বিএনপি’র গুলি খেতে না চাইলে এনসিপিতে আসুন: হাসনাত আবদুল্লাহ ‘উত্তেজনা কমাতে’ ইস্তাম্বুলে ফের আলোচনায় বসছে পাক-আফগান জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠি দেওয়ায় কোনো কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন ৭২র সংবিধান বাতিল জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রেরণা: ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট প্রকাশিত হয়েছে আবুল ফাতাহ কাসেমী’র নতুন বই ‘ইসলাম ও কাদিয়ানি ধর্ম’  অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণার উপর গণভোট দিতে হবে: খেলাফত মজলিস আবারও আফগানিস্তানকে যুদ্ধের হুমকি পাকিস্তানের

মিসরে যেভাবে ইসলামি আন্দোলনের হাল ধরছেন নারী কর্মীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু

মিসরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর দেশের ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের উপর নতুন করে যে অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু হয়েছে তা কারো অজানা নয়।

২০১৩ সালের সামরিক উত্থানের মধ্য দিয়ে মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করা হয়। এরপর থেকে মুসলিম ব্রাদারহুটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ৫০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে কারাবন্দী করা হয়েছে।

দলের এমন সংকটময় মুহূর্তে ইসলামি আন্দোলনের হাল ধরেছে সে দলটির নারী কর্মীরা।

নেতৃত্বশূন্য দলকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তারা। যদিও কয়েক দশক ধরেই মুসলিম ব্রাদারহুটে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

মূলত হুসনি মোবারকের শাসনকালে মুসলিম ব্রাদারহুটের নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ শুরু হয়। যখন দলের পুরুষ কর্মীদের রাষ্ট্র টার্গেটে পরিণত করে। তারা দলের বন্দী কর্মীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন।

২০১১ সালের পর থেকে ব্রাদারহুটের নেতৃবৃন্দ সামগ্রিক আন্দোলনে নারী কর্মীদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তখন থেকে দলে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে থাকেন।

দলের পুরুষ নেতৃত্ব সামরিক শাসকদের দমন-পীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর নারীদের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। এখন নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে মুসলিম ব্রাদারহুটের নারী কর্মীরা তাদের কার্যক্রম সামাজিক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ রাখেন। যেমন দরিদ্র্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা, ফ্রি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দান ইত্যাদি। তারা এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো মসজিদ ভিত্তি সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সেবা সংস্থার মাধ্যমে।

২০০৫ ও ২০১০ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় ব্রাদারহুটের নারী কর্মীরা নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা ব্রাদারহুটের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপাক প্রচারণা চালায়। এতে নারী কর্মীরাও ক্ষমতাযন্ত্রের লক্ষ্যে পরিণত হয়।

তবে স্বৈরশাসক হুসনি মোবারক নারীদের সরাসরি বন্দী না করে ভিন্ন উপায়ে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করতো। যেমন, ২০০০ সালের সংসদ নির্বাচনে আলেকজেন্দ্রিয়াতে মুসলিম ব্রাদারহুটের প্রার্থী ছিলেন জিহান আল হালাফাভি।

মোবারক সরকার তার স্বামীকে বন্দী করে তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে যেতে চাপ সৃষ্টি করে। তার স্বামী তার নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির ম্যানেজার ছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে প্রস্তাব করে স্বামীর মুক্তির মাধ্যমে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।

মুসলিম ব্রাদারহুট ক্ষমতায় যাওয়ার পর নারীদের বিভিন্নভাবে ক্ষমতায়নের চেষ্টা করে। এটা মূলত তাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগের পুরস্কার ছিলো এবং ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরির প্রচেষ্টা।

যেমন, উমাইয়া কামেলকে সংবিধান সংশোধনী কমিটির সদস্য করা হয়। দিনা জাকারিয়াকে ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির (ব্রাদারহুটের রাজনৈতিক শাখা) মুখপাত্র নির্বাচন করা হয়।

প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ সিসি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণের পর ব্রাদারহুটের নারী কর্মীরা ব্যাপকভাবে দলের রাজনৈতিক ও সমাজামিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করে। তারা খানিকটা স্বাধীনভাবে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ সময় তারা প্রাথমিকভাবে অভ্যুত্থানকালে মিসরজুড়ে সামরিক বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে আদালত এ সংস্থা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

মিসরের ব্রাদারহুটের নারীকর্মীরা তারা ধীরে ধীরে মিডিয়াতেও দৃশ্যমান হচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘রাবা সিট-ইনস’ এর সময় নারী কর্মীরা ‘ওমেন অ্যাগিনিস্ট কোপ’ গঠন করে। ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময়ও নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

মুসলিম ব্রাদারহুটের নারী কর্মীরা বর্তমানে মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতাও করছে।

তাদের অন্যতম আসমা শাকুর। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মিসরের ভঙ্গুর রাজনীতি ও মানবাধিকারের কথা তুলে ধরছেন।

মিসরের নারী কর্মীরা এখন ৩টি কৌশলে কাজ করছেন।

১. মানবাধিকার সংস্থার ব্যানারে সরকারের অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদ করা।

২. সামাজিক সংস্থার মাধ্যমে জনসেবামূলক কাজ করা। যা তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে।

৩. ঘরোয়া পরিবেশে আদর্শিক প্রচার-প্রচারণার কাজ করা।

আর এসব কিছু তারা করছে যথাসম্ভব নিজেদের পরিচয় আড়াল করে এবং ইসলামি বিধি-বিধান মান্য করে।

এটা ভুললেও চলবে না, নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও ব্রাদারহুটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এখনও নারী নেতৃত্ব অনুমোদিত নয়।

বরং ব্রাদারহুট নারীদের অংশগ্রহণ অনুমোদন করছেন দেশের স্বৈরশাসকদের নিপীড়ন নীতির মুখে দেশের ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে।

সূত্র : মিডলইস্ট আই-এ প্রকাশিত আনওয়ার মাজনি-এর ইংরেজি প্রবন্ধের ছায়াবলম্বনে রচিত


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ