দেশে চলমান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ এবং সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে চলমান শিক্ষক আন্দোলনের দাবিসমূহ দ্রুত মেনে নিয়ে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা এবিএম জাকারিয়া বলেন, শিক্ষা বর্ষের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সব স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা তালাবদ্ধ।
তিনি বলেন, সামনে নির্বাচনী পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, তদুপরি এ বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। নতুবা আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং শিক্ষার ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হবে না। অতএব, এই অচলাবস্থা নিরসনে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি ও তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সাত দফা দাবি
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি মাসে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান করতে হবে।
২. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ হারে প্রদান করতে হবে।
৪. ১০৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার এমপিও ফাইলে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর করে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করতে হবে এবং অনুদানবিহীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করতে হবে এবং অবসরকালীন প্রাপ্ত অর্থ ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৬. শিক্ষকদের প্রতি হয়রানি ও হামলার বিচার, শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো তৈরি এবং সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৭. শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ও সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে।
তিন দফা কর্মসূচি
১. চলমান শিক্ষক আন্দোলনের সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পূর্ণ সংহতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করা হবে।
২. দাবিসমূহ পূরণ না হলে আগামী ২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
৩. ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেক্রেটারি জেনারেল প্রভাষক ডা. আব্দুস সবুর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো. নেছার উদ্দিন, অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আল আমীন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম জাহিদ তিতুমীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এলএইস/