মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার আট বছর পূর্ণ হলো আজ। সোমবার (২৫ আগস্ট) দিনটি ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ হিসেবে পালন করেছেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি স্থানে লাখো রোহিঙ্গার অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি হয় উখিয়ার রাজাপালংয়ের মধুরছড়া ৪নং ক্যাম্পের মাঠে। সকাল ১০টায় কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে শিশু, নারী ও যুবকরা প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত ছিলেন। সেসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—“উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “আরাকান ইজ আওয়ার হোম”, “উই উইল গো হোম, ওয়ার্ল্ড লিসেন টু আস” ইত্যাদি স্লোগান।
সমাবেশে এফডিএন রোহিঙ্গা রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র মাস্টার কামাল বলেন, “আমরা যে কোনো মুহূর্তে ঘরে ফিরতে প্রস্তুত। বিশ্ব আমাদের আকুতি শুনুক এবং আমাদের পাশে দাঁড়াক। আমরাও মানুষ, মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আমাদের রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
“২৫ আগস্ট, আমরা যা দেখেছি” শীর্ষক আলোচনায় তরুণ রোহিঙ্গারা—মোহাম্মদ সলিম, রফিক ও মাইয়ু ইসলাম—২০১৭ সালের ভয়াবহ গণহত্যার বিবরণ দেন। তারা বলেন, “এক কাপড়ে বহুদূর হেঁটে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছি। আমাদের ওপর চালানো নৃশংসতা কোনোদিন ভোলার নয়।”
“আমাদের যা প্রয়োজন” শিরোনামের বক্তব্যে আব্দুল মোতালেব ও মোহাম্মদ সাদেক নিরাপত্তা, মর্যাদা ও প্রত্যাবাসনের দাবি তোলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ইংরেজিতে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা তরুণী জাহান নুর। তিনি অভিযোগ করেন, “রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চলছে। আরাকান আর্মির হাতে প্রতিনিয়ত আমাদের ভাই-বোনেরা প্রাণ হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে এসে এই নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।”
সমাবেশে রোহিঙ্গা তারানা পরিবেশন ছাড়াও তরুণদের কণ্ঠে ইংরেজি, বার্মিজ ও রোহিঙ্গা ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করা হয়। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মোনাজাত পরিচালনা করেন মৌলভি আবদুল গনি। তখন অশ্রুসিক্ত প্রার্থনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে সহায়তা কামনা করেন রোহিঙ্গারা।
৪নং ক্যাম্প ছাড়াও উখিয়ার ১-ওয়েস্ট ক্যাম্প ও ৯নং ক্যাম্পেও অনুরূপ সমাবেশ হয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের দিনে ইনানী সমুদ্র সৈকতের পাশের বে-ওয়াচ হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান এবং সাত দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেন।
সম্মেলনটি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক আয়োজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামীকাল (২৬ আগস্ট) অংশগ্রহণকারীদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলনের সমাপ্তি হবে।
এমএইচ/